২৩ এপ্রিল, ২০১৭ ১১:৩৯
অনিয়মের অভিযোগে

ঠাকুরগাঁওয়ের নব নির্মিত ভবন বুঝে নিচ্ছেন না ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ

আব্দুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও:

ঠাকুরগাঁওয়ের নব নির্মিত ভবন বুঝে নিচ্ছেন না ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ

অনিয়মের অভিযোগে ঠাকুরগাঁওয়ের নব নির্মিত দুটি ফায়ার সার্ভিস ভবন বুঝে নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। তবে ভবন নির্মাণকারি তত্বাবধায়ক গণর্পূত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী উল্টো দোষারোপ করলেন ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে। ফলে দুই বিভাগের বাকবিতন্ডের কারণে বিপাকে পড়েছেন এলাকাবাসী।

  
গত ১৬ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মাসিক উন্নয়ণ সভায় জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর উপ-সহকারি পরিচালক আনিসুর রহমান অভিযোগ করেন, দরপত্র অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ সম্পন্ন না করায় ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর ও রাণীশংকৈল উপজেলায় প্রায় দেড় বছর আগে নবনির্মিত ভবন দুটি বুঝে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ সময় ঠাকুরগাঁও- আসনের এমপি রমেশ চন্দ্র সেন, জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়ালসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপস্থিত জেলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আল মামুন হক তেমন কোন উত্তর দিতে পারেন নি। তবে কালক্ষেপন না করে দ্রুত বিষয়টি সমাধানের তাগিদ দেন এমপি। এরপর দুটি বিভাগের কাছে এ বিষয়ে তথ্য নিতে গেলে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর দুটি ভবন নির্মাণে তাদের দেয়া তথ্য রয়েছে গরমিল। 

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার হরিপুর উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর ভবনটি গণপূর্ত বিভাগের তত্বাবধানে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালে কাজ শুরু করে রংপুরের মেসার্স কোর কনষ্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 

অন্যদিকে  রাণীশংকৈল উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর ভবনটি গণপূর্ত বিভাগের তত্বাবধানে ১ কোটি ৭৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যায়ে ২০১৪ সালে কাজ শুরু করে ঢাকাস্ত মেসার্স আশফাকুর রহমান নামে আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 

গণপূর্ত বিভাগের তথ্য মতে, ভবনটি নির্মাণে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। রংপুরের মেসার্স কোর কনষ্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। কাজ শেষ করার মেয়াদ ছিল একবছর। 

অন্যদিকে জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর ভবনটি নির্মাণে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। ঢাকাস্ত মেসার্স আশফাকুর রহমান নামে আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে ওই বছরের সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখ। কাজ শেষ করার মেয়াদ ছিল একবছর।

কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার দেড় বছর পেড়িয়ে গেলেও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে কয়েক দফায় করা হয় চিঠি চালাচালি। এরপরও কোন সুরাহা না হলে উপায় না পেয়ে ঠাকুরগাঁও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর পক্ষ থেকে ওই দুটি ভবন নির্মাণে ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর নবনির্মিত ভবনটির কাজে বিভিন্ন অনিয়ম দেখানো হয়। 

পরে ঢাকা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব ও প্রকল্প পরিচালক মোঃ আতাউল হক প্রাপ্তি অভিযোগ যাচাই বাছাই করে ১০টিরও অধিক অভিযোগ আমলে নিয়ে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা গণপূর্ত বিভাগের প্রধাণ প্রকৌশলী বরাবারে দরপত্র অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করে ভবন দুটি দ্রুত ঠাকুরগাঁও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করার অনুরোধ জানান। 
এর পরও কাজ সম্পন্ন না করেই গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে ভবন দুটি  ঠাকুরগাঁও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষকে বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চাইলে তারা বুঝে না নিয়ে জেলা প্রশাসনের উন্নয়ন কমিটির মিটিংয়ে অভিযোগগুলো সবার সামনে তুলে ধরেন। আর এ দুটি বিভাগের রসি টানাটানির কারণে অগ্নিকান্ডে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হচ্ছে দুই উপজেলার মানুষ। 

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর উপ-সহকারি পরিচালক মোঃ আনিসুর রহমান জানান, দরপত্র অনুযায়ি ভবন দুটি নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত থাকায় আমরা বুঝে নিতে পারছি না। ওই দুটি ফায়ার সার্ভিসের জন্য সরকার ইতোমধ্যে আমাদের গাড়ি দিয়ে দিয়েছেন। সেই গাড়িগুলো অন্য জায়গায় রাখতে হচ্ছে। সেই সাথে জনবল ট্রেনিংয়ে রয়েছে। গণপূর্ত বিভাগকে কয়েক দফায় লিখিতভাবে জানানো হলেও তারা আমাদের বিষয়টি কেন গুরুত্ব দিচ্ছেন না তা আমাদের জানা নেই। তবে আমাদের দাবি দরপত্র অনুযায়ী ভবন দুটির কাজ সম্পন্ন করে আমাদের বুঝে দিবেন। আর তাদের কারণে আজকে দুটি উপজেলার মানুষ ক্ষতির শিকার হচ্ছে। তার কারণ আশপাশের উপজেলা থেকে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিক হয়ে পরছে। 

আর ঠাকুরগাঁও গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আল মামুন হক ঠিকাদারদের পক্ষ নিয়ে জানান, কাগজে কলমে ঢাকা ও রংপুরের ঠিকাদারের নাম উল্লেখ্য করা হলেও ভবন দুটি নির্মাণ কাজ করেছেন স্থানীয় ঠিকাদাররা। আর স্থানীয় ঠিকাদাররা প্রভাবশালী, তাদেরকে সেইভাবে বলা সম্ভব না। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ একটু আন্তরিক হলেই ভবন দুটি বুঝে দেয়া সম্ভব হয়। তা না করে তারা বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ সম্পন্ন করেছে। 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, আমি দুটি বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি বিষয়টি সমাধানের জন্য। আশা করছি তা সমাধান হবে।   

 

বিডি প্রতিদিন/২৩ এপ্রিল ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর