২৪ এপ্রিল, ২০১৭ ১৩:১০

পাউবোকে কৃষকের অভিশাপ

সিলেট ব্যুরো

পাউবোকে কৃষকের অভিশাপ

‘আমরার ভাগ্য নিয়া পাইবোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আর ঠিকাদাররা ছিনিমিনি খেলছে। হেরা আমরার পেটে লাথি দিছে, আল্লায় যেন এরার বিচার করে।’ সৃষ্টিকর্তার কাছেই এভাবে বিচার দিলেন সুনামগঞ্জের পাকনার হাওরে ফসল হারানো দরিদ্র কৃষক রহিম মিয়া।

গজারিয়ার গ্রামের কৃষক পাবেল মিয়া বলেন, বুক ভেঙে যাচ্ছে। হাওরটি রক্ষার জন্য রাত দিন এত পরিশ্রম করলাম। পারলাম না। এই দুঃখ সারা জীবন মনে থাকবে। 

সুনামগঞ্জের অন্যতম বড় হাওর জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির আধপাকা বোরো ধন। সোমবার ভোরে হাওরের উড়ার বাঁধ ভেঙে হাওরের পানি ঢুকতে শুরু করে। এই বাঁধটি রক্ষার জন্য স্থানীয়রা কয়েকদিন ধরে স্বেচ্ছা শ্রম দিয়ে মাটি ফেলেছিল। কিন্তু তাতেও রক্ষা হয়নি তাদের আবাদের ফসল। পানির চাপে দুর্বল ভিত্তির বাঁধটি ভেঙে যায়।

জেলার অপরাপর হাওরের মতো এই হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ ছিল স্থানীয়দের। বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট এই হাওরটির প্রায় অর্ধেক ফসল ইতোমধ্যে তলিয়ে গিয়েছিল। বিকেলের দিকে পুরো হাওর পানিতে পূর্ণ হয়ে যাবে বলে জানান স্থানীয়রা। আধপাকা ধান যতটা পারা যায় কেটে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন সাধারণ মানুষ।

বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ার কারণে দিশেহারা হাওরপাড়ের কৃষকেরা। প্রতিটি মানুষের মাঝে চাপাকান্না। বছরের একটিমাত্র ফসল তলিয়ে যাওয়ায় চোখে অন্ধকার দেখছেন তারা। 

জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এবার উপজেলার ১৩টি হাওরে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়। ছোটখাট বিল ছাড়া কোন হাওরের ফসলই এখন আর অবশিষ্ট নাই। একে একে সবগুলোই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। 

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, পাউবো ঠিক মতো কাজ না করার কারণে জেলার অন্যতম বৃহৎ এই হাওরে ফসল সুরক্ষার জন্য হাওরের উরার বাঁধ, ডাইল্লা স্লুইসগেট ও কাউয়াবাদা বাঁধে গত ২০ দিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেন হাজারো মানুষ। তাতেও রক্ষা করা যায়নি কৃষকের স্বপ্ন। সোমবার ভোর সাড়ে ৫ টায় উরার বাঁধ পানির চাপে ভেঙে গিয়ে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে।  

ফেনারবাঁক ইউপি সচিব অজিত কুমার রায় জানান, বেশ কিছু দিন ধরে হাওরের উরার বাঁধে এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা আর করা যায়নি। ফসল তলিয়ে যাওয়ার কারণে এলাকার মানুষ এখন দিশেহারা। 

জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রসূন কুমার চক্রবর্তী বলেন, পাকনা হাওরের বাঁধ রক্ষায় আমি কয়েকবার সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। এলাকার কৃষকদের সেচ্ছায় শ্রম দেখে আমার বিশ্বাস ছিল বাঁধ ভাঙবে না। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হয়েছিল।


বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর