২৪ এপ্রিল, ২০১৭ ১৫:২৪

'মুখ দিয়া কইয়া এই রাস্তার অবস্থা বুজাউন যাইত না'

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

'মুখ দিয়া কইয়া এই রাস্তার অবস্থা বুজাউন যাইত না'

ময়মনসিংহের ভালুকা-গফরগাঁও সড়কটি যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে অনেক আগেই। দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপর্যাপ্ত সংস্কারের কারণে প্রায় ১৫ বছর ধরে সড়কটির বেহাল অবস্থা। সবমিলিয়ে দুর্ভোগের শেষ নেই। বিশেষ করে ভালুকা থেকে শান্তিগঞ্জ পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খুবই বেহাল।  

এছাড়া বাওয়ার মোড় থেকে বিরুনীয়ামোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটার এবং ভালুকা থেকে নন্দীবাড়ি পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার মোট সাত কিলোমিটার সড়কের অবস্থাও করুণ।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন ভালুকা-গফরগাঁও রাস্তার ভালুকা থেকে শান্তিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত পাকা রাস্তাটির সবটুকুই সিলকুট, কার্পেটিং উঠে খানা-খন্দকসহ বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অসুস্থ মানুষের যাতায়ত করা তো দূরের কথা, এ রাস্তায় চলতে গিয়ে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রতিনিয়তই বিকল হয় গাড়ি, দুর্ঘটনাও ঘটছে নিয়মিতই। প্রায়ই সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগের খবর পাওয়া যায়।  

এরপরও নিরুপায় হয়ে প্রতি মুহুর্তেই দুর্ঘটনার আশংকা ও মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই ওই সড়কে যানবাহনে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণকে। অথচ, ঢাকার বা দেশের অন্যান্য জায়গায় চলাচল করতে এই সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আশপাশের এলাকার হাজারো মানুষ প্রতিনিয়ত বাস, সিএনজি, টেম্পোতে করে যাতায়াত করেন ওই সড়ক হয়ে। এছাড়াও সীমাহীন ঝুঁকির মধ্যে প্রতিদিন বালিসহ অন্যান্য মালামালবাহী অসংখ্য ট্রাক, পিকআপ যাতায়াত করে ওই সড়কে।  

স্থানীয় লোকজন জানায়, গফরগাঁওয়ের পাগলা থানা উদ্বোধনের জন্য কিছুদিন আগে পুলিশের মহাপরিদর্শক শহিদুল হক সড়কপথে পাগলায় যান। কিন্তু ভালুকা-গফরগাঁও সড়কটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাঁকে এ সড়কে না নিয়ে ভালুকা-মেদিলা-বিরুনীয়া হয়ে সড়ক দিয়ে পাগলায় নিয়ে যাওয়া হয়।

পানিহাদি গ্রামের পোল্ট্রি ব্যবসায়ী সাজ্জাদুল ইসলাম সজিব বলেন ‘গত ১৫ বছর ধরে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি আমরা। ব্যবসায়িক বা অন্য কোনো কাজে ভালুকা যাওয়ার কথা মনে হলেই ভয় লাগে। বর্তমানে এই রাস্তায় যাতায়াত করলে মেরুদণ্ডে ব্যথা হয়ে যায়।

ধীতপুর গ্রামের ভ্যান চালক মোস্তুফা মিয়া বলেন, ‘সড়কটির কি যে অবস্থা তা বলে বুঝানো যাবে না। সড়কটি দিয়ে একদিন ভ্যান চালালে  ব্যথায় পরের দিন আর বের হতে মন চায় না। শুধু ভ্যান চালকই নয় তাদের মতই অসংখ্য সরকারি, বেসরকারি চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী সীমাহীন কষ্টে ওই সড়কে প্রতিদিন যাতায়াত করে।  
 
ওই সড়কের বাসচালক কাদির মিয়া জানান, ভাঙাচোরা সড়কে বাসে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার আশংকায় প্রতি মুহুর্তে আল্লাহর নাম মুখে উচ্চারণ করতে করতে যাই। চার-পাঁচ বছর আগে ওই সড়কে লোক দেখানো সামান্য সংস্কার কাজ হয়েছিল। কিন্তু সংস্কার কাজের মান এতই খারাপ ছিল যে কিছু দিন যেতে না যেতেই সড়কটি আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছে। ফলে, এই সড়কের যাতায়াতরত মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। 
 
ধীতপুর গ্রামের আপন মিয়া বলেন, 'ভালুকা-গফরগাঁও রাস্তার কতা জিগাইয়া আর কী অইব? মুখ দিয়া কইয়া এই রাস্তার অবস্থা বুজাউন যাইত না। এই রাস্তা দিয়া যে একবার যাইব একমাত্র হেই কইবার পারব বর্তমানে রাস্তাডার কী হাল। ময়মনসিংহ জেলার মইধ্যে এই রহম খারাপ রাস্তা আর আছে কি না, তা আমার জানা নাই।'

ডিস ব্যবসায়ী হেলাল খান বলেন, ‘বাস চলার শুরু থেকেই ঝাঁকুনি শুরু হয় এবং থামার পূর্ব পর্যন্ত ছোট ও বড় ধরনের ঝাঁকুনি চলতেই থাকে। চলার পথে একেক ঝাঁকুনিতে মনে হয় এই বুঝি মেরুদণ্ড বা কোমরের হাড়টি ভেঙে গেল। ’

একাধিক বাস চালক জানান, ভালুকা থেকে শিবগঞ্জ, শান্তিগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তা মাত্র ৩০ মিনিটের পথ। অথচ, এই রাস্তাটুকু যেতে বর্তমানে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। গাড়ির গতি ঘণ্টায় ৫-৭ কিলোমিটারের বেশি বাড়ানো যায় না। ফলে, তেল খরচ বেশি লাগে। দুই বছর মেয়াদের টায়ার ৮-১০ মাসের বেশি টিকে না। ভাঙা রাস্তায় চলতে গিয়ে গাড়ির বিভিন্ন সমস্যা হয়। সময় বেশি লাগায় বাসে যাত্রী উঠতে চায় না। বাসের স্টিয়ারিং এর সামনে বসে সব সময় আতংকের মাঝে থাকতে হয়, মাঝে মধ্যে গর্তে পড়ে বিকল হয়ে যায় গাড়ি। খারাপ রাস্তায় ঝাঁকি খেয়ে প্রায় প্রতিদিনই অভারলোড না হলেও গাড়ি রাস্তার পাশে পড়ে যায়।

ভালুকা উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যন রফিকুল ইসলাম পিন্টু জানান, ভালুকা-গফরগাঁও সড়কটির অনেক আগে থেকেই চলাচল অযোগ্য হয়ে আছে। রাস্তাটি নিয়ে উপজেলার মাসিক সভায় অনেকবার আলোচনা করেছি। এলাকার মানুষের স্বার্থে রাস্তাটি দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. এম আমান উল্যাহ বলেন, সড়টি সংস্কারের বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে। এ নিয়ে যতবারই কথা বলেছি, তারা আমাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সড়কটি সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছে। গত সংসদ অধিবেশেনেও এ নিয়ে কথা বলেছি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান জানান, ভালুকা-গফরগাঁও সড়কে কাজের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তা সমান করার কাজ করা হবে। মূল কাজ শুরু হতে ১৫/২০ দিন সময় লাগবে।  

বিডি প্রতিদিন/২৪ এপ্রিল, ২০১৭/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর