২৫ এপ্রিল, ২০১৭ ১৩:১৯

কাঁদছে হাওর পাড়ের মানুষ!

অনলাইন ডেস্ক

কাঁদছে হাওর পাড়ের মানুষ!

হাওরাঞ্চলে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙেই চলেছে এবং এর সঙ্গে একের পর এক তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। এতে করে হাওরের বিপদ কাটছে না এবং থামছে না হাহাকার। অসহায় কৃষকদের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ।

সুনামগঞ্জে আগাম বন্যায় ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন হাওরে আবাদ করা বোরো ফসলের ৯০ ভাগ তলিয়ে গেছে। জেলার ১১টি উপজেলায় বছরের একমাত্র ফসল হারিয়ে প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে তিন লক্ষাধিক কৃষক পরিবার। টাকার অঙ্কে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকার উপরে। 

ধান তলিয়ে যাওয়ার পর হাওরের পানি দূষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন হাওরে বিপুল পরিমাণ মাছ মরে ভেসে উঠেছে। মত্স্য সম্পদের এমন ক্ষয়ক্ষতির কারণেও বিপন্ন কৃষকের মাছ ধরে সংসার চালানোর বিকল্প আয়ের পথটি সংকুচিত হয়ে গেছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তালিকায় দেখা গেছে, আমনপ্রধান ছাতক উপজেলায় সর্বনিম্ন ৩৬১০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি হলেও সর্বোচ্চ ২২ হাজার পরিবারকে সহায়তা প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। 

অন্যদিকে শাল্লা উপজেলায় শতভাগ ফসলহানির ঘটনা ঘটলেও ওই উপজেলার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে ৮ হাজার পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার জন্য। এমনিভাবে দোয়ারাবাজারে ৭৭৮৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষয়ক্ষতি হলেও ১৩ হাজার পরিবারকে সরকারি খাদ্য ও অর্থ সহায়তা প্রদানের সুপারিশ করেছে জেলা প্রশাসন।

এখানেই শেষ নয়, জেলার চারটি পৌরসভা যেখানে বিকল্প কর্মসংস্থান রয়েছে সেখানেও ১৪ হাজার পরিবারকে সহায়তার সুপারিশ করা হয়েছে। বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় রহিম মিয়া নামের ফসলহারা অসহায় এক কৃষক দুর্নীতির জন্য আল্লাহর কাছে বিচার চেয়ে বলেন, ‘আমরার ভাগ্য নিয়া পাউবোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ঠিকাদার আর কমিটির লোকজন ছিনিমিনি খেলছে। হেরা আমরার পেটে লাথি দিছে, আল্লায় যেন এরার বিচার করে। 

গজারিয়ার গ্রামের কৃষক পাবেল মিয়া বলেন, ‘বুক ভেঙে যাচ্ছে। হাওর রক্ষার জন্য রাত দিন এত পরিশ্রম করলাম। পারলাম না। এই দুঃখ সারা জীবন মনে থাকবে। ’ 

এদিকে সুনামগঞ্জের অন্যতম বড় হাওর জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনার হাওরের অর্ধেক ফসল জলাবদ্ধতায় ডুবে যাওয়ার পর ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে বাকিটুকুও তলিয়ে গেছে। গতকাল ভোরে উড়ার বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে। সাড়ে আট হাজার হেক্টর আয়তনের এই হাওরটির প্রায় অর্ধেক ফসল এর আগে জলাবদ্ধতায় তলিয়ে যায়।

জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রসূন কুমার চক্রবর্তী বলেন, পাকনা হাওরের বাঁধ রক্ষায় আমি কয়েকবার সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। এলাকার কৃষকদের স্বেচ্ছাশ্রম দেখে আমার বিশ্বাস ছিল বাঁধ ভাঙবে না। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছিল।

নেত্রকোনার পাঙ্গাসিয়া হাওর, রানিচাপুর হাওর, চৌতারার হাওর, তলার হাওর, ছায়ার হাওর, জালিয়ার হাওর, গণেশের হাওর, নামার হাওর, সুনই হাওর ও জগন্নাথপুর ঘোনা, পাগলা বিল, তেঁতুলিয়া প্লাবন ভূমি, জুক্কার বিল, চেঙ্গা বিল, গজারিয়া বিল, বৈঠাখালি বিল, বদরখানি টুনাই জলমহাল, ধলিমাটি বিল, রোয়াইল বিল, মৈদা বিলসহ ছোট বড় ৪২টি হাওর এবং বিল পানিতে তলিয়ে গেছে। মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, মদন ও বারহাট্টা উপজেলার সরকারি হিসাব মতে, আনুমানিক প্রায় ২৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

হবিগঞ্জে টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিপাত আর খোয়াই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে নতুন করে হবিগঞ্জে আরও ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।

ফলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বোরো ধানের ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জেলার ৫০ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। পাশাপাশি বৃষকরা যে পাকা ও আধা পাকা ধান কেটে এনেছিল তাতেও পচন ধরেছে টানা বৃষ্টির জন্য। রোদ্র না থাকায় সেগুলো শুকানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কৃষকদের মধ্যে এখন চলছে হাহাকার। 

বানিয়াচং উপজেলার আতুকোড়া গ্রামের কৃষক সাহাব উদ্দিন আখঞ্জি জানান, তিনি এ বছর ১২ বিঘা জমিতে সবজি আবাদ করেছিলেন। সেখানে টমেটো, ঢেড়স, জিংগা, করলা ও মরিচসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ করেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টিতে তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একই গ্রামের তজম্মুল খাঁ দুই বিঘা জমিতে সবজি আবাদ করেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টির জন্য তার সব সবজি নষ্ট হয়েছে। 

তিনি জানান, প্রতি বছর সবজি আবাদ করে তিনি পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করলেও এ বছর আসল পাওয়া যাবে কি না সেই চিন্তায় আছেন। তার ধানের জমিও তলিয়ে গেছে।

বিডি প্রতিদিন/২৫ এপ্রিল ২০১৭/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর