২৫ এপ্রিল, ২০১৭ ২১:৪৩

বিয়ানীবাজারে ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোটের মহোৎসব

শাহ্ দিদার আলম নবেল, বিয়ানীবাজার থেকে ফিরে:

বিয়ানীবাজারে ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোটের মহোৎসব

পৌরসভার মর্যাদা পাওয়ার প্রায় ১৬ বছর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভায়। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনকে ঘিরে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ছিল উচ্ছ্বাস। কিন্তু ভোট গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাদের সেই উচ্ছ্বাস উরে যায়, তৈরী হয় ক্ষোভ। প্রথমবারের অনুষ্ঠিত বিয়ানীবাজার পৌর নির্বাচনে ব্যালট ছিনতাই আর জাল ভোটের মহোৎসবে লেগেছে কলঙ্কের তিলক। 

নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা একটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল ঘোষণা করলেও বাকি নয়টি কেন্দ্রে কাস্ট হওয়া ভোট গণনা করা হয়। এতে বিএনপিদলীয় প্রার্থী আবু নাসের পিন্টু এগিয়ে রয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুস শুকুর। বাতিল হওয়া কেন্দ্রের নির্বাচন ভোট গ্রহণের পর চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা রিটার্নিং অফিসার মনির হোসেন।

২০০১ সালে পৌরসভার মর্যাদা পায় বিয়ানীবাজার। এরপর আইনী জটিলতায় পেরিয়ে যায় ১৬ বছর। এই দীর্ঘ সময় প্রথম পৌর নির্বাচনের অপেক্ষায় ছিলেন বিয়ানীবাজারবাসী। অবশেষে আইনী জটিলতার অবসান শেষে মঙ্গলবার প্রবাসী অধ্যুষিত এ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদ, জামায়াত ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে আট জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

ভোট গ্রহণের শুরুতে শান্তিপূর্ণ ছিল সবকিছু। উৎসবের আমেজে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ভোটাররা। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে বদলে যায় দৃশ্যপট। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়ে ওঠে অশান্ত। পড়তে থাকে একের পর এক জাল ভোট। একই ব্যক্তিকে একাধিকবার ভোট দিতেও দেখা গেছে।

বিয়ানীবাজারের কসবা সরকারি আদর্শ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে বেলা আড়াইটার দিকে কাউন্সিলর প্রার্থী মসনন উদ্দিনের সাথে আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী ইসলাম উদ্দিনের এক সমর্থকের বাধানুবাদ হয়। এর জেরে উভয় প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ওই কেন্দ্রের ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বাধ্য হয়ে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মাসুম মিয়া ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন। প্রায় এক ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকার পর বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ফের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোট গ্রহণ শেষে ব্যালট বাক্স খুলে শুধু নৌকায় সিল মারা ব্যালট পাওয়া যায়। অনেক ব্যালটের সাথে মুড়িও (ব্যালটের যে অংশ নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে থাকার কথা) পাওয়া যায়। ছিনতাইকৃত ব্যালটেই সিল মেরে বাক্সে ঢুকানো হয়েছে, এমন ধারণা থেকে ওই কেন্দ্রের ভোট বাতিল ঘোষণা করেন প্রিজাইডিং অফিসার। 

এর আগে, একই কেন্দ্রে ‘ব্যাপক জাল ভোট’ পড়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপিদলীয় মেয়র প্রার্থী আবু নাসের পিন্টু, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কাশেম পল্লব ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তফজ্জুল হোসেন। এছাড়া অনেক ভোটারই ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে এসে দেখেন তাদের ভোট আগেই দেওয়া হয়ে গেছে! স্থানীয় নয়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা ফাহিমা আক্তার বলেন, ‘সকাল পৌনে ১১টার দিকে কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে দেখি আমার ভোট আগেই কাস্ট হয়ে গেছে! প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে অভিযোগ জানিয়ে ভোট না দিয়েই চলে আসতে হয়েছে।’

সরেজমিনে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, খাসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীধরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ কেন্দ্রে জাল ভোটের মহোৎসব চলছে। একই ব্যক্তিকে চার-পাঁচবারও জাল ভোট দিতে দেখা গেছে। বিশেষ করে মহিলা ভোটাররা কাপড় পাল্টে, নেকাব লাগিয়ে, বোরকা পরে একাধিবার জাল ভোট দিয়েছেন।
নির্বাচনে অনিয়ম, জাল ভোটের মহোৎসব, পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগে শেষ মুহুর্তে নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। বিএনপির পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সভাপতি নাজমুল হোসেন পুতুল।


বিডি প্রতিদিন/২৫ এপ্রিল ২০ ১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর