২৬ এপ্রিল, ২০১৭ ১৪:৪০

টাঙ্গাইলে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‌'জামাইমেলা'

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‌'জামাইমেলা'

টাঙ্গাইলের রসুলপুরে তিন দিনব্যাপী শুরু হয়েছে জামাইমেলা। যুগ যুগ ধরে চলে আসা সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির প্রাণ। তারই ধারাবাহিকতায় শত বছর ধরে টাঙ্গাইলের রসুলপুরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ‘জামাইমেলা’। মঙ্গলবার শুরু হয়েছে এ মেলা। মেলা চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। 

প্রতি বছর ১১, ১২ ও ১৩  বৈশাখ (সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) সদর উপজেলার রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজন করা হয় এই মেলা। তিনদিনে রসলপুরসহ আশেপাশের অন্তত ৩০টি গ্রামের লাখো মানুষের সমাগম ঘটে এই মেলায়। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে জামাইমেলা নাম হলো কেন? এর উত্তরে রসুলপুরের অনেকেই বলেন, এই মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার সব মেয়ের বর শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসেন, তারাই মেলার মূল আকর্ষণ এ কারণেই মেলাটি জামাইমেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন দোকানিরা তাদের জিনিসপত্র নিয়ে বসে আসে, আর ক্রেতারা তা কিনছেন। বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলে-মেয়ারা এই মেলা বেশি উপভোগ করছেন। আবারা অনেকেই মেলার দোকান সাজানোর কাজ করেছন। 

রসুলপুরের বাসিন্দা কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাশেদ রহমান বলেন, এই মেলার উৎপত্তি কবে সেটা কেউ জানে না। যুগ যুগ ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই এলাকার মানুষের কাছে ঈদ আর পূজাপার্বনের থেকেও এই মেলা বেশি উৎসবের। মেলাটি বৈশাখী মেলা হিসেবে ব্রিটিশ আমলে শুরু হলেও এখন এটি জামাইমেলা হিসেবে পরিচিত। 

মেলাকে সামনে রেখে রসুলপুর ও এর আশেপাশের বিবাহিত মেয়েরা তাদের বরকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। আর মেয়ের জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেবার জন্য শাশুড়িরা বেশ আগে থেকেই নেন নানা প্রস্তুতি। মেলার দিন জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন শাশুড়িরা। আর সেই টাকার সঙ্গে আরও টাকা যোগ করে জামাইরা মেলা থেকে চিড়া, মুড়ি, আকড়ি, মিষ্টি, জিলাপিসহ বিভিন্ন জিনিস কিনেন। 

রসুলপুরের পাশের গ্রাম শালিনার বাসিন্দা সাখওয়াত পারভেজ বলেন, এক মাস ধরে এই মেলার প্রস্তুতি নেয়া হয়। লোকজন ছুটি নিয়ে মেলা দেখার জন্য আসেন। আগে বয়স্ক লোকজন এই মেলা উপভোগ করতেন। এখন মধ্যবয়স্ক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা এই মেলা বেশি উপভোগ করনে।  মেলায় মিষ্টি জাতীয় জিনিস বেশি বিক্রি হয়। 

রসুলপুরের জামাল হোসেন বলেন, আমি স্বাধীনতার আগে বিয়ে করেছি। প্রতি বছরই আসি মেলায়। শ্বশুর-শাশুড়ি বেঁচে থাকতে তারা আগে থেকেই দাওয়াত দিতেন। এখন তারা বেঁচে নেই। শ্যালক-শ্যালকের বউ এখন দাওয়াত দেয়।   

মেলাকে সামনে রেখে ছোট ছেলে-মেয়েদের জন্য আয়োজন করা হয় নানা বিনোদনের। মেলায় থাকে ছোট-বড় প্রচুর স্টল, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কসমেটিকস, খাবারের দোকান। ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় ব্যবসা করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। 

কথা হয় সিরাজগঞ্জ থেকে এক আসা রনজু নামে এক মিষ্টি দোকানদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি এই মেলায় আট বছর ধরে আসছি। এখানে বিক্রি করে আমি লাভবান হই। আমি বিভিন্ন  স্থানে মিষ্টি বিক্রি করে থাকি। 

আরেক ব্যবসায়ী কৃষ্ণ ঘোশ বলেন, মেলায় আমি ৬০ হাজার টাকা মালামাল নিয়ে এসেছি। আশা করছি এর অধিক বেশি বিক্রি করতে পারবো। মেলায় আসতে আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। 

মেলার আহ্বায়ক আতোয়ার রহমান বলেন, মেলায় প্রায় শতাধিক দোকান বসেছে। প্রায় ১৫০ জন স্বেচ্ছায় মেলায় দায়িত্ব পালন করছেন। এই মেলা আমাদের টাঙ্গাইল জেলার ঐতিহ্য বহন করেন। মেলায় শুরু হওয়ার আগেই গ্রামের জামাই এবং বউয়েরা আসেন। তারা বিভিন্নভাবে মেলা উপভোগ করে থাকেন। আমি ছোটবেলা থেকে এই মেলা দেখে আসছি। এই মেলার লাভের টাকা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে জন্য দেয়া হয়।

বিডি প্রতিদিন/২৬ এপ্রিল ২০১৭/আরাফাত 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর