২৭ এপ্রিল, ২০১৭ ১৭:৪২

স্বামীর ঘরে নয়, ক্লাসে ফিরল মাহমুদা

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

স্বামীর ঘরে নয়, ক্লাসে ফিরল মাহমুদা

মাহমুদা আক্তার। বয়স ১৪ বছর। আর ১৪ বছর বয়সে পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেয় তাকে বিবাহ দিবেন। অবশেষে বান্ধবী লায়লা আক্তারের সহযোগিতায় তার বাল্যবিবাহ বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। এরপর পুনরায় শ্রেণিকক্ষে ফিরে শিক্ষার্থী মাহমুদা।

মাহমুদা ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের আরামবাগ চরকান্দা গ্রামের মৃত তারা মিয়ার মেয়ে। সে ভাঙ্গা পৌরসভার কাজী শামসুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। 

জানা যায়, মাহমুদার বিয়ের দিন ছিল বুধবার। আর এই বিয়েতে রাজি ছিল না মাহমুদা। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হওয়ায় পরিবারের কিছু করার ছিল না। পরে মাহমুদা বিষয়টি প্রতিবেশী ও তার সহপাঠি লায়লাকে জানায়। সাহসী লায়লা বিয়ের দিন সকালে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) প্রণব কুমার ঘোষকে মুঠফোনে বিষয়টি জানায়। 

লায়লার মাধ্যমে খবর পেয়ে সকাল ১০টার দিকে প্রণব কুমার ঘোষ মাহমুদার বাড়িতে যান। এসময় তিনি গিয়ে বিয়ের আয়োজন বন্ধ করেন। 

বিকেলে লায়লা প্রণব কুমার ঘোষকে জানায়, বর তার লোকজন নিয়ে মাহমুদাকে বিয়ে করতে এসেছে। খবর পেয়েই তিনি পুনরায় ছুটে যান। বিয়ে বন্ধ করেন। বর গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গোহালা গ্রামের জুবায়ের হোসেনকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। 

এসময় মাহমুদার মা মিরাজান আক্তার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রণব কুমার ঘোষকে জানায়, পড়াশোনা চালাতে না পেরে মাহমুদাকে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। ২০১৬ সালে মাহমুদার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। তার ৬ মেয়ের মধ্যে মাহমুদা তৃতীয়। বড় দুইজনের বিয়ে হয়েছে। পড়ার খরচ চালানোর সামর্থ্য নেই, তবে ইচ্ছা আছে। 

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রণব কুমার ঘোষ বলেন, মাহমুদার বান্ধবী লায়লার মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দুইবার পরিদর্শন করেছি। বাল্য বিবাহের হাত থেকে রক্ষা করেছি মাহমুদাকে। বৃহস্পতিবার সকালে মাহমুদা ও তার মাকে আমার কার্যালয়ে খবর দিয়ে এনেছি। 

মাহমুদা জানিয়েছে, টাকার অভাবে বই কিনতে পারিনি। আমি মাহমুদাকে বই কিনে দিয়েছি। বেতন মওকুফের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি। পরিবারটিকে সামজিক নিরাপত্তা বেস্টনির আওতায় আনা হবে। যাতে অভাব ঘুচে যায় এবং মাহমুদা লেখাপড়া করতে পারে। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুন চন্দ্র দত্ত বলেন, মাহমুদা বিদ্যালয়ে ফিরে এসেছে। অষ্টম শ্রেণিতে তার রোল ১৩। সে মেধাবী। আমরা বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করবো। 

বিডি প্রতিদিন/২৭ এপ্রিল ২০১৭/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর