২৭ এপ্রিল, ২০১৭ ২২:৪৭

গৌরনদীতে গৃহবধূকে নির্যাতন, মামলা দায়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:

গৌরনদীতে গৃহবধূকে নির্যাতন, মামলা দায়ের

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের শরিফাবাদ গ্রামে দুই সন্তানের জননী গৃহবধূ তাসলিমা বেগমকে (৩০) শিকল দিয়ে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। দাবিকৃত ১ লাখ টাকা যৌতুক না পেয়ে গত মঙ্গলবার রাতভর শিকল বেঁধে গরম খুন্তি এবং চামচ দিয়ে ছ্যাকা দিয়ে তার শরীর ঝলসে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

আহতাবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয়েছে বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ওয়ার্ডে।

এ ঘটনায় নির্যাতিতার মা উজিরপুরের জুগিহাটি গ্রামের জাহানারা বেগম বাদি হয়ে তাসলিমার স্বামী বাদল মৃধা ও দেবর লালমিয়া মৃধার বিরুদ্ধে গৌরনদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

গত ১৬ বছর আগে শরিফাবাদ গ্রামের মৃত আব্দুর ওহাব মৃধার মেঝ ছেলে বাদল মৃধার সাথে উজিরপুর উপজেলার জুগিহাটি গ্রামের আ. আজিজ হাওলাদারের মেয়ে তাসলিমা বেগমের সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় জামাতা বাদল মৃধাকে যৌতুক হিসেবে ৩ ভরি স্বর্ণালংকার দেয়া হয়। এরপর বাদলকে গত ২ বছর পূর্বে নসিমন কেনার জন্য নগদ ২ লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গৃহবধূ তাসলিমা বেগম অভিযোগ করেন, গত ১ মাস ধরে তার স্বামী ও দেবর আরো এক লাখ টাকা যৌতুক এনে দেয়ার জন্য তাকে চাপ প্রয়োগ করে আসছিলো। টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় প্রায়ই তার স্বামী ও দেবর তাকে শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করতো। ঢাকায় চিকিৎসা শেষে গত ২৫ এপ্রিল তিনি স্বামীর বাড়িতে আসেন। ওই রাতে দাবিকৃত এক লাখ টাকা যৌতুক না পেয়ে মাদকাসক্ত স্বামী তাকে লোহার শিকল দিয়ে খাটের সাথে তালা দিয়ে বেঁধে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে ঘরের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে স্টিলের খুন্তি ও বড় চামচ গরম করে তাসলিমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাকা দেয়। বুক থেকে শুরু করে পিছনের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে রড ও লাঠির আঘাত এবং ছ্যাকা দেয়া হয়নি। এ সময় বাঁচার জন্য তসলিমা চিৎকার করলেও কেউ তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেননি। এ অবস্থায় তার ক্ষতস্থানে গুড়া মরিচ ও লবণ পানি দেয় তারা।

তাসলিমার বোন ময়না বেগম জানান, তাসলিমা স্বামীর বাড়ি যাওয়ার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ ছিলো। ওই রাতে ঢাকায় অবস্থানরত ছেলে তার বাবা বাদলের মুঠোফোনে রিং দিলে তিনি ডাক চিৎকার শুনতে পান। বিষয়টি তিনি তার নানাকে জানান। বুধবার ভোরে তাসলিমার বাবার বাড়ির লোকজন বাদলের বাড়ি গিয়ে তাসলিমাকে শিকলে বাঁধা গুরুতর আহত অবস্থায় দেখতে পান। পরে তারা শিকলের তালা ভেঙ্গে তাসলিমা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাসলিমার শরীরে আগুনের ছ্যাকার চেয়ে নির্যাতনের চিহ্ন বেশী। তিনি আশঙ্কামুক্ত, তবে তার সুস্থ হয়ে উঠতে কিছুদিন সময় লাগবে।

গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ফিরোজ কবির জানান, এ ঘটনায় নির্যাতিতার মা বাদি হয়ে ২জনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বিকেলে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর