২৮ এপ্রিল, ২০১৭ ১৩:৪১

কৃষকের কপাল পুড়েছে 'ব্লাস্ট রোগ'

দিনাজপুর প্রতিনিধি

কৃষকের কপাল পুড়েছে 'ব্লাস্ট রোগ'

দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট (ধানের গলা পচা রোগ) রোগ দেখা দেওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। কীটনাশক স্প্রে করেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ধান ক্ষেত সাদা ও চিটা হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে ফসল না পেলে সার, কীটনাশক ও তেলের টাকা কিভাবে পরিশোধ হবে দুঃশ্চিন্তায় কৃষক। তবে কৃষি বিভাগ ব্লাস্ট রোগের কথা স্বীকার করলেও কৃষকদের আতঙ্কিত না হবার পরামর্শ দিচ্ছেন। 

এ রোগ নিয়ে কৃষকরা শঙ্কাগ্রস্ত হলেও কৃষি বিভাগ বলছে- এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এতে উৎপাদনে তেমন কোন ক্ষতি হবে না। 

হঠাৎ করে দিনাজপুরে বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত জমিতে প্রতিষেধক হিসেবে কাসোবিন, নাটিভো স্প্রে করেও ফল পাচ্ছেন না। স্প্রে করার পরও ২/৩ দিনের মধ্যে পুরো জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে। বেশি আক্রান্ত উপজেলাগুলো হচ্ছে- বিরল, পার্বতীপুর, বোচাগঞ্জ, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর এবং কাহারোল। এসব উপজেলায় কৃষক ফসল বাচাতে তেল সারসহ প্রয়োজনীয় খরচ মিটানোর পরেও বেশি দামে কীটনাশক কিনে জমিতে প্রয়োগ করেও শেষ রক্ষা করতে পারছেন না।

পার্বতীপুর উপজেলার মোস্তফাপুর, চন্ডিপুর, রামপুর ও বেলাইচন্ডি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এমন কোন ব্রি ধান-২৮ ও মিনিকেট ধান ক্ষেত নেই, যেখানে এ রোগের সংক্রমণ ঘটেনি। 

চিরিরবন্দরের নশরতপুর, তেঁতুলিয়া, সাতনালা, আলোকডিহি, ইসবপুর, সাঁইতাড়া, আব্দুলপুর, পুনট্টি  ইউনিয়নে ইরি-বোরো ক্ষেতে ব্যাপক হারে নেক ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এরপর মরার উপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়ে খোলপঁচা রোগও। 

এ ব্যাপারে পার্বতীপুর কৃষি কর্মকর্তা আবু ফাত্তাহ রওশন কবির জানান, কৃষকদের আক্রান্ত ক্ষেতে ছত্রাকনাশক বিভিন্ন ধরনের ঔষধ স্প্রে করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ছত্রাক নাশক ব্লাস্টিন-০.৬০ গ্রাম, নাটিভো ৭৫ ডাব্লিউপি ০.৬০ গ্রাম, ট্রুপার ৭৫ ডাব্লিউপি বা জিল ৭৫ ডাব্লিউপি-০.৮১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে এবং এর সহিত কার্বান্ডাজিম গ্রুপের গোল্ডাজিম, গিলজিম, এমকোজিম নোইন, নিউজিম, ইউনিজুম, বাভিস্টিন ও ব্যান্ডাজিম অনুমোদিত মাত্রায় মিশিয়ে দুপুরের পর স্প্রে করতে বলা হচ্ছে। প্রভৃতি ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহার করায় রোগটি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। 

চিরিরবন্দরের আব্দুলপুর ইউনিয়নের ফকিরপাড়ার রোস্তম আলী, আইয়ুব আলী, আব্দুল লতিফ, মোস্তাকিম আল হাসনাত, তেলিপাড়ার রাশেদুল ইসলাম জানান, একদিকে ক্ষেতে নেক ব্লাস্ট রোগে ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে ক্ষেতে খোলপঁচা রোগের প্রকোপও দেখা দিয়েছে। ফলে উভয় সংকটে পড়েছি আমরা কৃষকরা। 

নশরতপুর গ্রামের মাছুয়াপাড়ার কৃষক বাবলুর রহমান বলেন, ১৮ শতক জমি বন্ধক নিয়ে ইরি-বোরো ধান চাষ করেছি। কিন্তু ওই ক্ষেতে ধানের শীষ বের হওয়ার পর তা সাদা হয়ে গেছে। বর্তমানে ওই জমি থেকে ১ মণ ধান অর্জন করাও সম্ভব হবে না। শুধুমাত্র ধানের গাছ বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে বি আর-২৮ জাতের ধানে এ রোগে আক্রান্ত বলে তিনি জানান। 

চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, আমরা কৃষকদের বাস্টিন, ফিলিয়া,  ট্রুপার, এমিস্টার টপ, সানফাইটার, নাটিভো প্রভৃৃতি পরিমিত মাত্রায় স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি। 

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর দিনাজপুরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে এক লাখ ৭৭ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৫.৬ হেক্টর জমিতে এ রোগ দিয়েছে। তবে এতে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। অন্য যে কোন জেলার চেয়ে ভালো রয়েছে এ জেলা। এ রোগ আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

বৈরি আবহাওয়ার কারণেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কাজ করছেন।

বিডি প্রতিদিন/২৮ এপ্রিল ২০১৭/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর