২৯ এপ্রিল, ২০১৭ ১৩:২৫

মাদারীপুরে দীর্ঘদিনেও হয়নি ৫ খুনের বিচার

নিরাপত্তাহীনতায় পরিবার

বেলাল রিজভী,মাদারীপুর

মাদারীপুরে দীর্ঘদিনেও হয়নি ৫ খুনের বিচার

মাদারীপুরে সদর উপজেলার ভদ্রখোলা গ্রামের আলোচিত পৃথক ৫ খুনের ঘটনায় একটিরও বিচার হয়নি। ফলে নিহতের পরিবার রয়েছে চরম নিরাপত্তাহীনতায়। নতুন করে আরো হত্যাকাণ্ডের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একে একে হত্যা করা হয় লিয়াকত খান, গোলাম ফারুক, আশরাফ বেপারী, নাসির খান, রুবেল সরদার নামে ৫ যুকবকে। হত্যার ঘটনায় বিচারের দাবিতে গোটা জেলা ফুঁসে উঠলেও দীর্ঘদিনেও বিচার শেষ হয়নি। 

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রমতে, ২০১২ সালের ২৫ আগষ্ট কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয় সদর উপজেলার গৈদি গ্রামের খলিল সরদারের ছেলে রুবেল সরদারকে। এরপর চিকিৎসাধীন অস্থায় মারা যায় রুবেল। ২০০৬ সালে খুন করা হয় সদর উপজেলার ভদ্রখোলা গ্রামের মৃত্যু মোহাম্মদ আলি খানের ছেলে নাসির খানকে। তারও পূর্বে একই বংশের লিয়াকত আলি খানকে হত্যা করা হয়। হত্যা করা হয় একই এলাকার আশরাফ বেপারীকে। এছাড়াও ১৯৯৭ সালে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলার ভদ্রখোলা গ্রামের আমজাদ হাওলাদারের ছেলে গোলাম ফারুক হাওলাদারকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে গোলাম ফারুক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। 

এঘটনায় ১৯৯৭ সালের ১জুন মাদারীপুর সদর থানায় একটি মামলা হয়। মোটা অংকের টাকায় গোলাম ফারুক হত্যা মামলার বাদী ও আসামিরা সমঝোতা করে হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গোলাম ফারুক নিহতের ঘটনায় তার স্বজনরা কেউ বাদী না হওয়া দেখা দিয়েছে রহস্য। অভিযোগ উঠেছে আসামিদের বাঁচাতেই গোলাম ফারুকের স্বজনদের  মামলার বাদী হতে দেয়া হয়নি।

এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার ভদ্রখোলা এলাকায় ১৯৯৭ সালের ৩১ মে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাম ফারুককে রাকসা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় গোলাম ফারুক। দীর্ঘ ২০ বছর অতিবাহিত হলেও এই হত্যার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়নি। উল্টো নিহতের পরিবারকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে মামলা তুলে নিতে।

মামলার বিবরণ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলার ভদ্রখোলা গ্রামের আমজাদ হাওলাদারের ছেলে গোলাম ফারুক হাওলাদারকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে গোলাম ফারুক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এঘটনায় ১৯৯৭ সালের ১জুন শাহজাহান হাওলাদার বাদী হয়ে মাদারীপুর সদর থানায় ইসমাইল মোল্লা ও ছাত্তার ঢালীকে প্রধান আসামী করে একটি মামলা হয়। এই মামলায় পুলিশ একাধিক আসামিকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ ইসমাইল মোল্লাসহ একাধিক আসামীকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট আদালতে দাখিল করে। 

এরপর মামলার স্বাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করে আদালত। সম্প্রতি নিহতের পরিবারকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। মামলার বাদীকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে সমঝোতা করে মামলা তুলে নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছে। এতে ক্ষোভ বিরাজ করছে নিহতের পরিবারে। এছাড়াও গোলাম ফারুক নিহত হলেও তার পরিবারের কাউকে বাদী হয়ে মামলা করতে দেয়নি একটি পক্ষ। এতে করে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কার করছে নিহতের পরিবার। দীর্ঘদিনেও মামলার রায় ঘোষণা না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ছে নিহতের পরিবার। উল্টো মামলার অন্যতম প্রধান আসামি ইসমাইল মোল্লা আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, গোলাম ফারুকের পরিবারের এতই নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে যে স্বজন হারানোর দীর্ঘদিন পরেও বিচার চাইতেও ভয় পাচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতায় এতই করুণ অবস্থা যে হত্যা মামলার বিচার চাওয়াটাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। নিহতের ছোট ভাই কিবরিয়া হাওলাদার বলেন, আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। দীর্ঘদিনেও বিচার হয়নি। এখন আসামিদের কাছ থেকে টাকা পেয়ে মামলা মিমাংশা করার পায়তারা করছে। আমি ওদের ভয়ে বাড়ি থাকতে পারিনা। আমার ভাইসহ আরো ৪টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে একই ব্যক্তিদের দ্বারা। যদি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার হতো তাহলে আমার ভাইয়ে মত এমন করুন পরিনতি আর কারো হতো না। আমরা আমার ভাই হত্যার দৃষ্টান্তমুলক বিচার চাই। যেন আর কারো মায়ের কোল খালি না হয়। 

নিহত রুবেল সরদারের মা হাসিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এখানে একটি চক্র রয়েছে যাদের কাজই হলো মারামারি ও খুন-খারাবি করা। এরা আমার ছেলেকে দিনদুপুরে আমার সামনে কুপিয়ে হত্যা করে। এর আগেও ইসমাইল মোল্লা ও শাজাহান হাওলাদার অনেক মায়ের কোল খালি করেছে। যদি প্রথম থেকেই বিচার হতো তাহলে আর কেউ এমন হত্যার শিকার হতো না। আমি ওইসব খুনিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।’

এব্যপারে অভিযুক্ত ইসমাইল মোল্লা বলেন, ‘দীর্ঘদিন আগের ঘটনা মিটমাট হয়ে গেছে। খোঁচাখুঁচি করে লাভ কি?’
মাদারীপুর জজ কোর্টের পিপি এডভোকেট এমরান লতিফ বলেন, ‘মুলত বাদী ও স্বাক্ষীদের অসহযেগিতার কারণেই বিচার বিলম্ব হচ্ছে। তবে শিগগিরই বিচার কাজ শেষ হবে।’

মাদারীপুর পুলিশ সুপার মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, 'আমি আসার পূর্বে এখানে ৪/৫টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। সবগুলো মামলার চার্জশীট আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। কারো নিরাপত্তা বিঘ্ন হলে আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। আমরা মামলার প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করছি। এখন আদালতের বিষয়।'

 

বিডি প্রতিদিন/২৯ এপ্রিল ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর