২৯ এপ্রিল, ২০১৭ ১৫:১৮

রিলিফ-বয়স্ক ভাতা চাই না, স্থায়ী বাঁধ চাই

আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জঃ

রিলিফ-বয়স্ক ভাতা চাই না, স্থায়ী বাঁধ চাই

'পঞ্চাশ বছর বয়সে প্রায় ত্রিশবার বাড়ী ভাঙছি। ফসলি জমি-জমা সব বিলীন হয়ে যাওয়ায় রাস্তার ফকির হইয়্যা গেছি। তারপরেও সরকারের রিলিফ চাই না। শুধু চাই স্থায়ী বাঁধ দিয়ে আমাদের যেন রক্ষা করে।' কথাগুলো বলছিলেন নদী ভাঙ্গন কবলিত সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের চর বাহুকা টুটুল মোড় এলাকার বৃদ্ধ আছা আলী। 

তার মতো একই গ্রামের বয়োবৃদ্ধ গৃহবধূ বলেন, বহুবার ভাঙ্গনের কবলে পড়েছি। এখন নদী থেকে বাড়ী মাত্র ৫০ ফুট দূরে। যেভাবে ভাঙ্গছে তাতে এবারও রক্ষা পামু কিনা বলতে পারছি না। সরকারের কাছে বয়স্ক ভাতা চাই না-শুধু একটা স্থায়ী বাঁধ চাই। নিজ ঘরে শুধু একটু শান্তিতে ঘুমাতে চাই। 

একই গ্রামের শাহজাহান আলী জানান, ফসলি জমি আগেই বিলীন হইয়া গেছে। মাত্র সাতদিন আগে বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। জায়গা-জমি নেই। ওয়াপদার ধারে ঘর ক্যাইরা দিয়ে বউ-ছেলে মেয়ে গাদাগাদি করে আছি। 

এমন অবস্থা ওই এলাকার শত শত পরিবারের। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে নদীভাঙ্গনের শিকার হয়ে প্রায় চার শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভাঙ্গন শুরুর কয়েকদিন পর পানি উন্নয়ন বোর্ড কয়েক বস্তা জিওব্যাগ ফেলে। কিন্তু স্রোতের কারণে সেগুলোও বিলীন হয়ে যায়।  

জানা যায়, সম্প্রতি ভারি বর্ষণ পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীতে সামান্য পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউপির চর বাহুকা ও কাজিপুরের শুভগাছা ইউনিয়নের ঘাটি শুভগাছা এলাকার প্রায় আট কি.মি. এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। পূর্ব তীরে বিশাল চর জেগে ওঠায় নদীর স্রোত সরাসরি পশ্চিম তীরে আঘাত হানে। আট কিলোমিটার অংশে ভাঙ্গন রোধে কোন ব্যবস্থা না থাকায় একের পর এক ফসলী জমি ও বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে থাকে। গত তিন মাসে দুটি গ্রামের প্রায় চার  শতাধিক বসতবাড়ী-ফসলী জমি-হাট বাজার বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে মানুষগুলোর পথে বসার উপক্রম হয়েছে। অনেকের পরিবারে দেখা দিয়েছে অভাব-অনটন। 

একেকটি পরিবার প্রায় ২০-৫০বার ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। আবারও ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শত শত পরিবার। শুধু তাই নয় অন্যত্র বসতভিটা সরিয়ে নেয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ছাত্র-ছাত্রী কমে যাচ্ছে। ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে নদীটি এখন শহর রক্ষার বাঁধ ছুয়েছে। য কোন মুহুর্তে বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে ওই ২০-২৫টি গ্রামের হাজার হাজার বসতভিটা ভেঙ্গে যাবার পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ শহরে অনায়াসে পানি ঢুকে পড়বে। এতে শহরের মানুষ চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। ভাঙ্গন কবলিত মানুষের অভিযোগ, ভাঙ্গন শুরু হলে পাউবো শুধু দেখে যায়। এ অবস্থায় অসহায় মানুষগুলো ভাঙ্গন রক্ষায় সরকারের কাছে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের দাবি জানিয়েছেন। 

চর বাহুকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী সাহানা খাতুন জানান, চোখের সামনে স্কুল নদীগর্ভে বিলীণ হয়ে গেছে। স্কুল এখন তিন চার কিলোমিটার দূরে। আমাদের যাতায়াতে খুব কষ্ট হয়। অনেকে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। 

স্কুল শিক্ষক সোহরাব আলী মাষ্টার জানান, প্রায় তিন-চার মাস ধরে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলেও পাউবোর কর্মকর্তা কোন ব্যবস্থা নেয় না। নেতারা এসে শুধু আশ্বাস দিয়ে যায়, স্থায়ী বাঁধ হবে কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। ফলে এলাকার মানুষগুলো আতঙ্কে দিনযাপন করছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী  প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার জানান, আসামে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে বেশ কয়েকদিন যমুনায় পানি বৃদ্ধি পায়। আর তখন থেকে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। তবে ভাঙনের তীব্রতা কম রয়েছে। এতে আতঙ্কের কিছু নেই। ইতিমধ্যে জিওব্যাগ প্রস্তুত করা হচ্ছে। টাস্কফোর্সের অনুমোদন পেলেই সেগুলো ডাম্পিং করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, বাহুকা থেকে খুদবান্দি ও কাজিপুরের মেঘাই এলাকা মিলে ৮ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষার জন্য স্থায়ী বাঁধেরএকটি প্রকল্প ইতিমধ্যে প্রি-একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নদীভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে এলাকাবাসী।


বিডি প্রতিদিন/২৯ এপ্রিল ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর