৩০ এপ্রিল, ২০১৭ ১৩:০২

রূপপুর প্রকল্পে চাঁদা দাবি : চেয়ারম্যানসহ আটক ৫

পাবনা প্রতিনিধি

রূপপুর প্রকল্পে চাঁদা দাবি : চেয়ারম্যানসহ আটক ৫

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে মাটি ভরাট কাজে বাধা দান ও চাঁদা দাবির অভিযোগে পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশী ইউপি চেয়ারম্যান এনাম বিশ্বাসসহ পাঁচজনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। এসময় ৩৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। 

শনিবার গভীর রাতে পৃথক অভিযানে তাদের আটক করা হয়।

আটকরা হলেন, পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক বিশ্বাস, তার ছেলে যুবলীগ কর্মী রকি বিশ্বাস, ঈশ্বরদী পৌর যুবলীগের সভাপতি আলাউদ্দিন বিপ্লবের তিন ভাই মিজানুর রহমান স্বপন, ফারুক হোসেন জীবন ও আনোয়ার হোসেন লিটন। 

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাই তালুকদার জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে ঠিকাদারের কাজে বাধা প্রদান করাসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনায় এই অভিযান শুরু হয়েছে। 

তিনি আরো জানান, চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রেফতারের লক্ষ্যে শনিবার রাতে আওয়ামী লীগ নেতা গোলজার হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব বিশ্বাসসহ যুবলীগের বেশ কিছু নেতার বাড়িতে অভিযান চালানো হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাবনা র‌্যাব-১২ কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। 

ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জহুরুল হক জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের কাজে ঠিকাদারদের কাজে বাধা প্রদান, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন বিষয়ে দখলদারিত্ব ও সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। 

অভিযানে ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে রকি বিশ্বাসের কাছ থেকে ৩০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ও ৫ রাউন্ড বন্দুকের গুলি উদ্ধার করা হয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রূপপুর পারমানবিক প্রকল্পের কাজ পাওয়া ঠিকাদারদের কাছে চাঁদাবাজি করে আসছিল ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর পরিবারের লোকজন। বিশেষ করে তার ছেলে শিহান শরিফ তমাল ও তার লোকজন এই কাজগুলো করে আসছিল। 

সম্প্রতি ঈশ্বরদীস্থ রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে তারা হামলা চালিয়ে টিসিইএল (দ্যা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লি.) কোম্পানির বালি ভরাট কাজ বন্ধ করে দেয়। 

গত ২৬ এপ্রিল বিকেলে ক্ষমতাসীন দলের একদল সন্ত্রাসী বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে প্রকল্প এলাকায় কোম্পানির লোকজনকে মারপিট করে। এসময় তারা অস্ত্র দেখিয়ে ও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে সন্ত্রাসীরা ওই কোম্পানির ১০টি লোড-আনলোড ডেজ্রার ও ৫টি বাল্কহেড ছিনিয়ে নিয়ে যায়। 

এ ব্যাপারে কোম্পানির প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মরিযাদ হারুন, প্রজেক্ট ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল ইসলাম পাবনার পুলিশ সুপার ও ঈশ্বরদী থানায় অন্তত ৮/১০টি অভিযোগ দায়ের করেন।

চলতি মাসের ১১ তারিখে টেন্ডারের মাধ্যমে কোম্পানিটি প্রকল্পে বালি ভরাটের একটি নতুন কাজ পায়। এই কাজ করার জন্য চলতি মাসের ১৯ এপ্রিল কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র প্রক্ল্প এলাকায় আনা হয়। ওই রাতেই সন্ত্রাসীরা কোম্পানির একটি মূল্যবান ড্রেজার প্রকল্প এলাকা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায়। ড্রেজারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও শ্রমিক নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ সুপার থানায় লিখিত আবেদন করেন।

পুলিশি নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে পুনরায় সেখান থেকে ড্রেজার এনে ২৬ এপ্রিল কাজ শুরু করলে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওই সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থলে হামলা চালিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে কাজ বন্ধ করে ড্রেজার ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

ঈশ্বরদী থানা ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ফাঁড়ির এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় দিয়ে গোলজার হোসেন, বুলবুল ও তুষারের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে কোম্পানির কাজের সাইডে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও ভূমিমন্ত্রীর ছেলে শিহান শরীফ তমাল বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার পরিবারের নাম ভাঙিয়ে একটি মহল এই কাজ করে আসছে। তবে তার বিরুদ্ধে এ ধরনের একাধিক অভিযোগের কথা বললেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

বিডি প্রতিদিন/৩০ এপ্রিল ২০১৭/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর