৩০ এপ্রিল, ২০১৭ ১৭:৪৭

সোনামসজিদ স্থলবন্দরে স্থবিরতা, বেকার হতে বসেছে ১০ হাজার শ্রমিক

মো. রফিকুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সোনামসজিদ স্থলবন্দরে স্থবিরতা, বেকার হতে বসেছে ১০ হাজার শ্রমিক

নানারকম জটিলতার কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরে স্থবিরতা বিরাজ করছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কাস্টমসের বিরোধের কারণে এই বন্দর ছেড়ে অনেক আমদানিকারকরা অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছে। ফলে আমদানি কমে যাওয়ায় বেকার হতে বসেছে ১০ হাজার শ্রমিক। অন্যদিকে ২০৫ জন সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট লোকসানের খপ্পরে পড়ায় তাদের অধীনে থাকা প্রায় ৮শ কর্মকর্তা-কর্মচািরি ঠিকমত বেতনভাতা না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদিকে প্রশাসন ম্যানেজের নামে অ্যাসোসিয়েশন ফলের গাড়ি প্রতি ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করার কারণে অনেকেই এই বন্দর দিয়ে ফল না এনে অন্যবন্দর দিয়ে ফল আমদানি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সোনামসজিদ স্থলবন্দর সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হারুন-অর-রশিদ।

তবে সোনামসজিদ স্থলবন্দর সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে নানা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে।  বিভিন্ন অজুহাতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গাড়ি ছাড় দিতে দেরি করায় সঠিক সময়ে পণ্যবাহী ট্রাক নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে না পারায় তারা নানা ধরনের হয়রানিতে পড়ছেন। অনেক সময় পঁচনশীল পণ্য পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে প্রতি গাড়িতে তাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। ফলে তাদের অধীনে থাকা অ্যাসোসিয়েশনের প্রায় ৮শ' কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঠিকমত বেতনভাতা দিতে না পারায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। 

তিনি আরও জানান, স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায়ে অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে প্রায় ৩৯ কোটি টাকা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিশেষ করে ফলের গাড়িতে শতকরা ১০ ভাগ ছাড় দেয়ার কথা থাকলেও স্থানীয় কাস্টমস কর্মকর্তাগণ তা মানছেন না। ফলে লোকসান থেকে বাঁচতে অনেক ব্যবসায়ী দেশের বিভিন্ন বন্দরে চলে গেছেন এবং সেখানে তারা ব্যবসা করছেন।

ইসমাইল হোসেন আরও বলেন, অনেক সময় বিভিন্ন মালামাল ছাড় করানোর জন্য কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার বা কমিশনারের স্বাক্ষর নিতে হয়। কিন্তু তারা এই বন্দরে অবস্থান না করায় রাজশাহী যেতে হয় তাদের স্বাক্ষর নেয়ার জন্য। এতে করেও কালক্ষেপন হয়, ফলে অনেক সময় মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডে ন্যূনতম সুবিধা না থাকায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, নিজেদের রাজস্ব আদায়ে পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড সচেষ্ট থাকলেও পোর্টে যাতায়াতের জন্য সড়ক মেরামত করছে না। এছাড়া চুক্তি অনুযায়ী গোডাউন না থাকায় মালামাল খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হয়। পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডে মালামাল আনলোড করার জন্য ওপেন ইয়ার্ড নির্মাণের কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তা করা হচ্ছে না। এর কারণেও অনেক ব্যবসায়ী এই বন্দর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

এদিকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের বন্দর ও কাস্টম সম্পাদক আব্দুর রাকিব জানান, নিয়ম অনুসারে ফলের গাড়িতে ১০ শতাংশ ছাড় দেয়ার কথা থাকলেও কাস্টমস বর্তমানে সে ছাড় দিচ্ছে না। তারপরও নানা ধরনের হয়রানির কারণে ফল আমদানি দিন দিন হ্র্রাস পাচ্ছে। কিছুদিন আগেও প্রতিদিন ৪০/৫০ ট্রাক ফল আমদানি হতো। কিন্তু কাস্টমসের হয়রানির কারণে বর্তমানে মাত্র ৮/১০ গাড়ি ফল আমদানি হয়। তিনি আরো জানান, গত বছর এ সময় বন্দরে প্রতিদিন ৪শ' থেকে ৫শ' গাড়ি পণ্য আমদানি হতো। বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

কাষ্টমসের হয়রানি প্রসঙ্গে সোনামসজিদ স্থলবন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কাস্টমস কমিশনারের নির্দেশে এই বন্দরে জিরো টরারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তাই অতিরিক্ত কোন সুযোগ সুবিধা না পেয়ে হয়তো ব্যবসায়ীরা এই অভিযোগ তুলছেন। মোট কথা এই বন্দরে চুরি করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাস্টমসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ বলে মনে করেন এই রাজস্ব কর্মকর্তা। 

অন্যদিকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড পরিচালনাকারী কমিটির সদস্য মো. হারুন অর রশিদ এই প্রসঙ্গে কিছু বলতে রাজি হননি। 

সোনামসজিদ স্থলবন্দর শ্রমিক সমন্বয় কমিটির সভাপতি সাদিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন ও শ্রমিক সর্দার মোখলেশুর রহমান জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ৩১টি সংগঠনের প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক রয়েছে। তারা আগে প্রতিদিন ১৫০ টাকা করে আয় করতে পারতো। কিন্তু বর্তমানে আমদানি-রফতানি কমে যাওয়ায় তাদের আয় কমে মাত্র ৩০ টাকায় নেমে এসেছে।ফলে অনেক শ্রমিকের পরিবার অনাহারে-অর্থাভাবে দিনযাপন করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনামসজিদ স্থলবন্দরের সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, বন্দরে আদায়কৃত চাঁদার ভাগ বাটোয়ারা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় একটি চক্র ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে স্থলবন্দরকে সম্পূর্ণ বন্ধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।  

 


বিডি-প্রতিদিন/৩০ এপ্রিল, ২০১৭/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর