১ মে, ২০১৭ ০৮:৪৫

একটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অস্থিরতা

পিরোজপুর প্রতিনিধি

একটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অস্থিরতা

পিরোজপুরে একটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে ক্ষমতাসীনদল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। ক্ষমতাসীন দলের এক পক্ষ নিহত যুবককে যুবলীগ কর্মী দাবী করে হত্যাকাণ্ডের জন্য আরেক পক্ষকে দায়ী করছে। নিহত যুবকের ছবি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে স্ট্যাটাস দেয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাবধানে থাকুন। আর যারা এসব পোস্ট করছেন তারা একপক্ষের সক্রিয় নেতাকর্মী। তবে এ হত্যাকাণ্ডে কোন রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা খুজে পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হত্যাকাণ্ডের পিছনে নিহত যুবকের বাড়ি সদর উপজেলার বাইরের এক গ্রামের আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই অপরাধী চক্রের বিরোধকে প্রাথমিকভাবে দায়ী করছেন পুলিশ। আর যুবলীগের কর্মী হিসেবে যে দাবি করা হয়েছিল তাতে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করেন জেলা যুবলীগ ও স্থানীয় ইউনিয়ন যুবলীগের দায়িত্ত্বশীল নেতৃবৃন্দ। সব মিলিয়ে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘ অর্ধযুগ আওমামী লীগের নির্ঝঞ্ঝাট শহরের রাজনীতিতে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা। যে হত্যাকাণ্ড নিয়ে এ রাজনৈতিক উত্তাপ, নিহত সেই যুবক রাসেল সেখের(৩৮) বাড়ি সদরের বাইরে ইন্দুরকানী উপজেলার পাড়েরহাট ইউনিয়নের লাহুরী গ্রামে। 

জানা যায়, গত সোমবার সন্ধ্যার আগে শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাসেল সেখকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে সন্ত্রাসীরা। রাসেলের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পিরোজপুর সদর হাসাপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীর অবস্থায় রাত  একটার দিকে মারা যান রাসেল। এ হামলার জন্য আওয়ামী লীগের কোন্দল দায়ী বলে গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন পিরোজপুর জেলা পরিষদের এক সদস্য। তিনি যুবলীগের রাজনীতে সম্পৃক্ত ও জেলা যুবলীগের প্রস্তাবিত একাধিক জেলা কমিটির মধ্যে একটির শীর্ষ পদে তার নাম রয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। নিহত রাসেল  এ নেতার মোটরসাইকেলে সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন। তিনিই প্রথম দাবি করেন রাসেল যুবলীগ কর্মী ও ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটিতে আছে।

পিরোজপুর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আহসান গাজী জানান, নিহত রাসেলকে যুবলীগের কোন কর্মকাণ্ডে তিনি দেখেননি। তাকে ভাল করে চেনেনও না। তিনি আরও জানান, কারো মৃত্যুই কাম্য হতে পারে না, আবার কোন হত্যাকাণ্ড নিয়ে জলঘোলা করে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়াও ঠিক না। 

এদিকে, রাসেলে বাড়ি ইন্দুরকানী উপজেলার পাড়েরহাট ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়ন কমিটিতে রাসেলের নাম নেই। আর সে কখনও যুবলীগ করেছে বলে তার জানা নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাড়েরহাট ইউনিয়নের লাহুরী গ্রামে এক দুর্ধর্ষ এক অপরাধী বাহিনীর সাথে রাসেলদের পারিবারিক বিরোধ চলছিল। এ দুই পক্ষর মধ্যে হামলা পাল্টা হামলা হয়েছে একাধিকবার। কয়েকমাস পূর্বে প্রতিপক্ষরা রাসেলের বড় ভাইকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। সম্প্রতি রাসেল তার এলাকায় যাওয়া বন্ধ করে শহরে বাসা নিয়ে থাকতো। নিহত হওয়ার পরে রাসেলকে দাফনও করা হয়েছে শহরে নানা বাড়িতে।

ইন্দুরকানী উপজেলা পাড়েরহাট ইউনিয়নের লাহুরী এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক শেখের ছেলে রাসেল সেখ। রাসেলের উপর হামলার দিন রাতেই পুলিশ শহর থেকে সাঈদ নামে একজনকে আটক করে। পরের দিন রাসেলের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে সদর থানায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিরোজপুর সদর থানার ওসি(তদন্ত) হাসনাইন খোরশেদ জানান, এ হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। এটি নিহত রাসেলের গ্রামে পেশাদার অপরাধী একটি চক্রের  সাথে আধিপত্য নিয়ে ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। নিহত রাসেলের নামে ইন্দুরকারি থানায় ৪টি মামলা রয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরা জেলায় ২টি মামলা আছে বলে শোনা গেছে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার অভিযুক্ত ওই এলাকার এক দুর্ধর্ষ ডাকাতকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে, তাকে পাওয়া গেলে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সম্পূর্ণ পরিষ্কার হবে। 

বিডি-প্রতিদিন/০১ মে, ২০১৭/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর