পঞ্চগড়ের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে স্কেবিস রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। মারাত্মক ছোঁয়াছে এই রোগটি চুলকানি নামে পরিচিত। জেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে দিন দিন রোগীদের ভিড় বাড়ছে। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু।
সরবরাহ কম থাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না এ রোগের প্রতিষেধক। বয়োজ্যৈষ্ঠরা বলছেন, ১৯৭৯-৮০ সালের দিকে এই রোগটি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছিল।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের পরিসংখ্যানে জানানো হয়েছে, সমগ্র জেলায় প্রতিমাসে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ জন করে বাড়ছে। তবে বাস্তবে এর চিত্র আরও ভয়ংকর।
জেলার ১০৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের অধিকাংশেই এখন চুলকানি রোগে আক্রান্ত রোগীরা ভীড় করছেন। তবে ওষুধের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় বিনা চিকিৎসাতেই ফিরে যেতে হচ্ছে হতদরিদ্র রোগীদের।
বোদা উপজেলার ভোলা বাসুনিয়া কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার শাহাজাহান আলী জানান, এই এলাকায় রোগটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। রোগীর তুলনায় ওষুধ কম। তাই এক বোতল ওষুধ ভাগ করে দিতে হয়েছে। বর্তমানে ক্লিনিকেও ওষুধ নেই।
পরিবারের একজনের মধ্যে একবার দেখা দিলে অন্য সদস্যদের মাঝে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই রোগটি। ফলে পরিবারের সকল সদস্যই এক সঙ্গে আক্রান্ত হচ্ছে। এভাবে তা ছড়িয়ে পড়ছে গ্রাম থেকে গ্রামে।
রোগটিতে আক্রান্ত হলে প্রথমে শরীরের একটি অংশে চুলকানো শুরু হয়। পরে ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। দ্রুত চিকিৎসা না নিলে শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘা সৃষ্টি হয়। জানা গেছে দ্রুত না সারলে চুলকানি থেকে সৃষ্ট ক্ষতে ভয়ংকর রোগও সংক্রমিত হতে পারে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি ক্লিনিকে দুই থেকে তিন মাস পর পর স্কেবিস রোগের প্রতিষেধক বেনজিন বেনজোয়েট ১২ বোতল সরবরাহ করা হয়। যা ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিন আগত রোগীদের প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। ফলে প্রত্যেক রোগীর জন্য একটি করে বোতল বরাদ্দ থাকলেও এখন তা ভাগ করে দেয়া হচ্ছে অনেকজনকে। এতে কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বরং ওষুধ নিতে এসে নতুন ভাবে সংক্রমিত হচ্ছে অনেকে।
দ্রুত কমিউনিটি হাসপাতালসহ জেলার সব সরকারি হাসপাতালে স্কেবিস রোগের প্রতিষেধক সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা।
বোদা উপজেলার মুসলীমপুর গ্রামের ফাতেমা বেগম এ রোগে আক্রান্ত স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ নিতে এসেছিলেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তার পরিবারের সকলেই এই রোগে আক্রান্ত। এক বছরের সন্তানের শরীর দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, কয়দিন থেকেই মুই এইঠে আসছু। এক দুই ফোঁটা করে ওষুধ নিয়া যাছু। হামরা গরিব। কেনালত বাড়ি করে আছু। চুলকানিতে মোর দুইডা ছুয়া রাইতত নিন্দাবা পারে না।’
এদিকে, সিভিল সার্জন ডা. পিতাম্বর রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, স্কেবিস রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার তথ্য পেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেড় হাজার বোতল বেনজিন বেনজোয়েট বরাদ্দের চিঠি এসেছে। ওষুধ এখনো আসেনি। এসে পৌঁছালেই দ্রুত তা কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সকল স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/২২ মে, ২০১৭/ফারজানা