২৩ মে, ২০১৭ ১৬:৪৮

ওরা নারী জাগরণের প্রতীক

দিনাজপুর প্রতিনিধি:

ওরা নারী জাগরণের প্রতীক

এটা কোন শোভাযাত্রা বা সাইকেল র‌্যালির প্রস্তুতি নয়। কিংবা কোন এনজিও’র কর্মসূচিও নয়। এটা নারী জাগরণ কিংবা অগ্রযাত্রার প্রতীক। আর এ দৃশ্যই জানান দিচ্ছে নারীরা আর পিছিয়ে নেই। তারাও আজ পারবে নিজেরাই সামনে এগিয়ে যেতে। 

প্রতিনিয়তই স্কুল ছুটির পরে এভাবেই বাড়ি ফেরে তারা। দিনাজপুরের সদর, চিরিরবন্দর, বিরলসহ বিভিন্ন গ্রামীন সড়কেই এভাবেই স্কুল যেতে এবং ফিরতে দেখা যাবে মেয়েদের। চিরিরবন্দরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক মেয়ে এভাবে যাতাযাত করছে বলে জানা যায়। 

সকল সমালোচনাকে জয় করে চিরিরবন্দরের বেলতলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও চিরিরবন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বাইসাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসায় এলাকায় জাগরণ সৃষ্টি করেছে। যদিও এক সময় মেয়েদের বাইসাইকেল চালানোর দৃশ্য জন্ম দিত সমালোচনার, চরিত্র নিয়েও হতো আলোচনা। গ্রামের সেইসব আলোচনা সমালোচনাকে জয় করে মেয়েরা এখন স্কুল, কলেজ, হাট-বাজার, অফিস, আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেসহ বিভিন্ন জায়গায় বাইসাইকেলে যাতায়াত করছে। দিনদিন বাড়ছে তাদের সংখ্যা। একসময় অভিভাবকগণ যাতায়াতের অসুবিধার কথা ভেবে দূরের ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের ভর্তি করতে চাইতনা, এখন সে ধারণা পাল্টেছে। মেয়েরাও সকল প্রতিকুল পরিবেশ মোকাবেলা করে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে। 

এখন দিন বদলেছে। ধর্মীয় বাধা বা মোল্লাদের ভয়-ভীতি কমে গেছে। যদিও ইভটিজিং এখনো রয়েছে। এরপরেও ঘরে বসে থাকতে চায় না নারী। তাই তারা বেরিয়ে পড়েছে শিক্ষার আলো নিতে, বিশ্বকে জানতে। এসব স্কুল ছাত্রী কেউ ১ থেকে ৯ কিলোমিটার পর্যন্ত সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায়। যদিও বৃষ্টি এলে স্কুলে আসতে সমস্যা হয়। সাইকেল না হলে পায়ে হেটেই আসতে হতো অথবা কিছুটা পথ হেটে হয়তো রিক্সা-অটো-ভ্যানে আসতে হতো। কিন্তু স্বাধীনভাবে নিজে সাইকেল চালিয়ে এলে সময় ও সুবিধা দুটোই পাওয়া যায়। 

অভিভাবক লুৎফর রহমান শাহ জানান, দূরের রাস্তা হওয়া সত্ত্বেও ভাল মানের স্কুল হওয়ায় বেলতলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মেয়েকে ভর্তি করেছি। মেয়েটি প্রতিদিন বাই সাইকেলে যাতায়াত করে। 

মোস্তারিনা, মেহেরুণসহ অনেক শিক্ষার্থী জানায়, আমরা ৬ কিলোমিটার দূর থেকে বেলতলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যাতায়াত করি। এমনিতে স্কুলের পোশাক থাকায় রাস্তাঘাটে কোন সমস্যা হয় না। প্রধান শিক্ষক স্যার প্রায়ই রাস্তায় মোটরসাইকেলে টহল দেন। 

বেলতলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোর্শেদুর রহমান জানায়, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক ছাত্রী প্রায় প্রতিদিন বাই সাইকেলে যাতায়াত করছে। 

চিরিরবন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী রিমি আকতার ও অনন্যা আফরিন নামে ১০ম শ্রেণির দুই ছাত্রী জানায়, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে ও পিতামাতার আশা-আকাংখা পূরণে আমরা ৮ কিলোমিটার দূরে রাজাপুর গ্রামের শেষ প্রান্ত থেকে গত ৫ বছর যাবৎ বাইসাইকেলে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছি। তবে মাঝেমধ্যে বখাটেরা ইভটিজিং করে। 

চিরিরবন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহতাব উদ্দিন সরকার জানান, ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের ওই সময়টাতে পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা টহল জোরদার করলে বখাটেদের উপদ্রব কমে যেতে পারে। 


বিডি প্রতিদিন/২৩ মে ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর