২৬ মে, ২০১৭ ১৮:১৮

নাশকতার আগুনে ফের জ্বলছে সুন্দরবন

৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

বাগেরহাট ও শরণখোলা প্রতিনিধি:

নাশকতার আগুনে ফের জ্বলছে সুন্দরবন

মাত্র এক বছরের মাথায় বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনে আবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ফরেষ্ট ক্যাম্পের আওতাধীন মাদ্রাসার ছিলায় নাশকতার আগুনে দাউ-দাউ করে জ্বলছে ওযার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দররব। আগুনে এপর্যন্ত প্রায় ৫ একর বনভূমির ছোট গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। 

আগুন নিয়ন্ত্রণে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বনসংলগ্ন উত্তর রাজাপুর গ্রামের ২ থেকে ৩শ’ লোকসহ শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জের ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করছে। তবে এখনও পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে জানিয়েছেন সুন্দরবনের ধানসাগর ষ্টেশন অফিসার মো: হুমায়ুন কবির। 

এর আগে গত বছরের ২৮ মার্চ থেকে শুরু করে চাঁদপাই রেঞ্জে মাত্র এক মাসে চার বার নাশকতার আগুনে কয়েক কোটি টাকার বনজ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবারও সেই একই এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা বলে সন্দেহ করছেন এলাকাবাসী ও খোদ সুন্দরবন বিভাগ। বিকেল ৫টা বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছে নাশকতার আগুনের ঘটনায় জড়িত আগুনদস্যুদের চিহ্নিত করতে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। এই তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।  চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা এসিএফ মেহেদীজ্জামানকে প্রধান করে গঠিত এই তদন্ত কমিটিতে চাঁদপাই ষ্টেশন কর্মকর্তা নুরুজ্জামান ও ঢাংমারী ষ্টেশন কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে সদস্য করা হয়েছে। 

বাগেরহাট সদর ও চাঁদপাই রেঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত এসিএফ মেহেদিজ্জামান ঘটনাস্থলে অবস্থান করে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই বন কর্মকর্তা প্রাথমিকভাবে ধারনা করছেন এবারও নাশকতার আগুনে পুড়ছে সুন্দরবন।

আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত শরণখোলার ধানসাগর ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন খান জানান, সকাল ১০টার দিকে তারা সুন্দরবনে আগুন লাগার খবর পান। পরে এলাকার ২ থেকে ৩ শত লোক নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুঁটে যান। স্থানীয়রা কলস-বালতি নিয়ে আব্দুল্লাহর ছিলায় পাশের খাল থেকে পানি নিয়ে প্রথমে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালান। এবং আগুন যাতে সুন্দরবনের ব্যাপক এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য অগ্নিকাণ্ডের চার পাশে ফায়ার লেন কেটে আগুন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। দুপুর দুইটার দিকে ডিএডি মাসুদ শেখের নেতৃত্বে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এখনো কোথাও দাউ দাউ আগুন জ্বলছে সুন্দরবন। কোথাও কোথাও ধোয়ার কুন্ডলি উঠতে দেখা যাচ্ছে। আগুনে প্রায় ৪-৫ একর বনের ছোট গাছপালা ও লতাগুল্ম পুড়েছে বলে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেওয়া প্রত্যক্ষশদর্শী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছেন।

সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. মেহেদিজ্জামান জানান, বেলা ১১টার দিকে তারা আগুনের খবর পেয়ে ঘহটনাস্থলে ছুুঁটে যান। বনকর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় শত শত মানুষ কলস-বালতি নিয়ে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেন। দুপুরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিয়েছে। আগুন এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। কোথাও কোথাও ধোয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে আগুন জ্বলে উঠছে। আগুন লাগার নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। তবে এ আগুন নাশকতার বলেই প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের বিভিন্ন এলাকায় নাশকতামূলক চার বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২৭ মার্চ ধানসাগর ষ্টেশনের নাংলী ক্যাম্পের সিকদারের ছিলায়, ১৩ এপ্রিল পঁচা কোরালিয়া বিলে, ১৮ এপ্রিল আব্দুল্লাহর ছিলায় এবং সর্বশেষ ওই বছরের ২৭ এপ্রিল তুলতলার বিলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের সুন্দরবন সংলগ্ন উত্তর রাজাপুর গ্রামের এক শ্রেণির মৌসুমী মৎস্য শিকারী সুন্দরবনের মিঠা পানির মাছের বিল তৈরী করার জন্য বনে আগুন দিয়ে থাকে। প্রতি বছরই ধানসাগর ষ্টেশনের এসব এলাকায় ওই অবৈধ মাছ শিকারীরা বনে আগুন লাগায়। গত বছর চার বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৮ জনকে আসামি করে শরণখোলা থানা ও বাগেরহাট আদালতে ৩টি মামলা দায়ের করে সুন্দরবন বিভাগ। ওই সব মামলায় আসামি শাসকদলের প্রভাবশালী আসামিদের অধিকাংশই জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে আবারও সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি লুটের নেশায় মেতে উঠেছে।


বিডি প্রতিদিন/২৬ মে ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর