২৭ মে, ২০১৭ ১৩:০৪

পঞ্চগড়ে মহাসড়কে ফসল মাড়াই, খড় শুকানোর হিড়িক

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়:

পঞ্চগড়ে মহাসড়কে ফসল মাড়াই, খড় শুকানোর হিড়িক

ধান, গম, তীল সহ বিভিন্ন ফশল কেটে এনে স্তুপ করা, এরপর  মাড়াই শেষে ধান, খড়, মরিচ শুকানোর কাজ হতো কৃষকের বাড়ির অঙিনায় বা উঠোনে। কিন্তু এখন এসব কাজ  হচ্ছে ব্যস্ততম মহাসড়কের উপর। পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কটিকে মহাসড়ক না বলে এখন চাতাল বলা যায়। শুধু  এই মহাসড়ক নয়, পঞ্চগড়ের গ্রাম গঞ্জের পাকা রাস্তাগুলোর দুই পাশ দখল করে হাজার হাজার কৃষক এখন ব্যস্ত ফশল মাড়াই আর শুকানোর কাজে । ফলে সড়ক সংকুচিত হয়ে চলাচল হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিনিয়তই বাড়ছে দুর্ঘটনা। 

প্রতি বছর ধানের এই মৌসুমে মহাসড়কের পাশের বসতবাড়ির লোকজন যে যার মতো সড়ক ব্যবহার করছে। ক্ষেত থেকে ধান কেটে এনে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে সড়কের উপর। পরে সড়কের একটা জায়গা দখলে নিয়ে কল বসিয়ে দেদারছে চলছে মাড়াইয়ের কাজ। আর এ অবস্থায় সড়কের অর্ধেক অংশে ধান শুকানো ছাড়াও বিশাল খড় সড়কের ওপরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে রোদে শুকানো হয়। পুরুষের পাশাপাশি বাড়ির নারীরা বসতবাড়ির উঠান ছেড়ে সড়কে এসে এ কাজটি করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। এ কাজটির পাশাপাশি তাঁরা রান্নার কাজে ব্যবহারের লাকড়ি, শুকনো মরিচ ও অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এনে ব্যবহার করছে সড়কে। এসব নারী-পুরুষ সড়কে গৃহস্থালীর কাজে ব্যস্ত থাকলেও দ্রুতগামী যানবাহনের দিকে লক্ষ থাকে কম। এতে যান বাহনের চালকেরা পড়েন বিপাকে। 

গত কয়েক মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায় এই জেলায় এসব কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে। অন্যদিকে হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে তারা উদ্যোগ নিলেও মানছেন না কৃষক। সচেতনতার অভাবে এসব কাজে সড়ক ব্যবহার করছেন কৃষকেরা। 

বাসড্রাইভার আব্বাস আলী জানান, নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে বাস নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। কিন্তু ফশল মাড়াই এবং শুকানোর জন্য রাস্তায় যান চলাচলে ঝুকিপূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে নির্দিষ্ট গতিতে বাস চালানো যায়না। সময়ের অপচয় হয়। আবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে না পারলে পরের দিনের ট্রিপ বাতিল হয়ে যায়। এতে হয়রানির শিকার হয় যাত্রীরা। ফলে আমরা উভয় সংকটে পড়েছি। 

ট্রাক ড্রাইভার দবিরউদ্দিন জানান, এ মাসেই বোদায় দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে আমাদের দুই ট্রাক ড্রাইভার মারা গেছে। রাস্তা খুব ভয়ংকর হয়ে গেছে। বিশেষ করে ধানের ভেজা খরের উপড় দিয়ে গাড়ি চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 

এদিকে মহাসড়কে ফসল মাড়াই এবং শুকানোর কাজে নিয়োজিত কৃষকেরা বলছেন,বাড়িতে যায়গা নাই। উঠোন নেই,আঙ্গিনা নেই। তাছাড়া খুব তারাতারি মাড়াই এবং শুকানোর কাজ করা যায় বলেই তারা সড়ক-মহাসড়ক ব্যবহার করছেন। তেতুঁলিয়া এলাকার কৃষক ফজলে করিম জানান, কাজটা অন্যায় এটা বুঝি। সবাই করে আর তারাতারি ফসল মাড়াই শুকানোর কাজ করা যায় বলে মহাসড়ক ব্যবহার করছি । 

এ ব্যাপারে তেঁতুলিয়া হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ এনামুল হক প্রধান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সতর্ক ও  সচেতন করার পাশাপাশি কোন কোন সময় শুকনো ধানের উপড়ে পানি ঢেলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু মানছেন না কৃষক। এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ কড়া নজরদারি রাখছে। 

 

বিডি প্রতিদিন/২৭ মে ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর