২৯ মে, ২০১৭ ১৯:৩১

ফুলপুরে অযুখানা বন্ধ করে মার্কেট নির্মাণের প্রতিবাদে মুসল্লীদের ভাঙচুর

এম এ মান্নান, ফুলপুর (ময়মনসিংহ) :

ফুলপুরে অযুখানা বন্ধ করে মার্কেট নির্মাণের প্রতিবাদে মুসল্লীদের ভাঙচুর

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদের অযুখানা বন্ধ করে দিয়ে মসজিদে উঠানামার প্রবেশপথ সংকোচিত করে মার্কেট নির্মাণ করায় মুসল্লীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ নিয়ে গত ক’দিন ধরে ফুলপুরে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। 

প্রতিবাদে ২৯ মে সোমবার আসরের নামাজের পর মুসল্লীরা উত্তেজিত হয়ে অযুখানার স্থানে নির্মাণাধীন মার্কেট ভাংচুর করে। 

এর আগের দিন ২৮ মে রবিবার বাদ আসর মুসল্লী ও মসজিদ কমিটির সদস্যদের মাঝে তর্কবিতর্ক ও এক পর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলার বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদে সবচেয়ে বেশি মুসল্লীদের সমাগম হয়ে থাকে। তিনতলা মসজিদে প্রায় ১৫০০ মুসল্লী নামাজ আদায় করে থাকেন। মসজিদের পশ্চিম পাশে ঢাকা-হালুয়াঘাট মহাসড়ক। উত্তর পাশে বাথরুম। দক্ষিণ-পূর্ব পাশে থানা রোড। নিচতলায় ছোট বড় ১৯টি দোকান ভাড়া দেওয়া আছে। দু’তলা থেকেও অনুরূপ ভাড়া আসছে বলে জানা যায়।

বাথরুম থেকে প্রতিদিন দেড়শ টাকা নেওয়া হয়। রোড কালেকশন হয় প্রতিমাসে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকা। এছাড়া বাসস্ট্যান্ড ব্যবসায়ীদের প্রতি দোকান থেকে নির্ধারিত কালেক্টর দিয়ে প্রতিদিন চাঁদা জমা নেওয়া হয়। ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের বেতন ব্যতিত বিশেষ কোন খরচ নেই বললেই চলে। থাকলেও সেটা জনগণ তথা মুসল্লীরাই দিয়ে থাকেন। 

কিন্তু মুসল্লীদের সুযোগ সুবিধার বিষয়টি মাথায় না রেখে কমিটি প্রতি কক্ষ বাবদ ১২/১৫ লাখ করে টাকা অগ্রিম নিয়ে দোকান বরাদ্দ দিচ্ছেন। 

অযু করার হাউজ বন্ধ ও মসজিদে যাতায়াতের বড় পথ না রেখে মার্কেট নির্মাণ করায় মুসল্লীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিয়মিত মুসল্লী কমে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, মসজিদের সার্বিক সহযোগিতা করে গেলেও মুসল্লীদের সুবিধা কমিয়ে কষ্ট বাড়িয়ে দিয়ে একটি বিশেষ মহল ফায়দা লুটছে।

অযুখানায় বসে আরামে অযু করা যেত কিন্তু সেটি বন্ধ করে দিয়েছে। রাস্তা সরু হওয়ায় মসজিদে উঠানামায় লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। মসজিদের আয় উন্নতি মূলত: মুসল্লীদের সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে হলেও এখানে তা হচ্ছে না। এ নিয়ে রবিবার বিকালে মুসল্লী বাবুল ও শাহ জালাল বিপুলের সাথে কমিটির সদস্য শামছুল ইসলামের তর্কবিতর্ক ও এক পর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। 

সোমবার আসরের পর ক্ষুব্ধ মুসল্লীরা নির্মাণাধীন মার্কেট ভাঙচুর করেন। তখন অনেক মুসল্লী কমিটির সমালোচনা করেন। সার্বজনীন এ প্রতিষ্ঠানটি মনগড়া চালিয়ে যাচ্ছেন বলে কোন কোন মুসল্লী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। 

একজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, আমি ৫৫ বছর যাবৎ এই মসজিদে নামাজ আদায় করে আসছি। হাউজ বন্ধ করে,  মসজিদে উঠানামার পথ না রেখে দোকান বরাদ্দ দিয়ে তারা এখানে ফায়দা লুটছেন। মসজিদের দোকান ভাড়া দিয়ে ব্যবসা কার জন্য? মুসল্লীদের জন্যেই তো? মসজিদ কি ক্রাইসিসে  পড়েছে যে মুসল্লীদের সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিয়ে ব্যবসা করতে হবে? 

মসজিদ মার্কেটের একজন দোকানদার বলেন, মসজিদের কোন মিনারা না থাকায় ও চতুর্দিকে দোকান ভাড়া দিয়ে মসজিদ ঢেকে ফেলানোয় অপরিচিত মুসল্লীরা মসজিদে প্রবেশ পথ খোঁজে পান না। প্রতিদিনই আমাদের নিকট পথ জিজ্ঞাসা করেন। কেউ কেউ বলছেন, এখানে সাধারণ মুসল্লীরা প্রচুর দান খয়রাত করলেও তাদের সুবিধার দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে না। আশপাশের মুসল্লীদের সাথে কথা হলে অনেকেই কমিটির কাজে নাখোশ প্রকাশ করেন।  এ বিষয়ে মসজিদের মুতাওয়াল্লি হাসু মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বস্থ করেন। জরুরি ভিত্তিতে মসজিদের সমস্যা সমাধান করা না হলে মুসল্লী ও কমিটির সদস্যদের মাঝে বড় ধরনের ফিৎনার আশংকা রয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/ ২৯ মে, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর