৩০ মে, ২০১৭ ১৫:৩৮

রমজানে নেত্রকোনায় হাওরপারের মানুষের নীরব অসহায়ত্ব

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

রমজানে নেত্রকোনায় হাওরপারের মানুষের নীরব অসহায়ত্ব

সারা দেশে যখন রমজানের আনন্দ বিরাজ করছে তখন নেত্রকোনায় হাওরপাড়ের মানুষের মাঝে চলছে নীরব অসহায়ত্ব। ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামগুলোতে চলছে হাহাকার। নেই রমজানের সেই আমেজ। ইফতার পূর্ববর্তী সময়ে বাজারগুলোতেও শুনশান নিরবতা। গ্রামের লোকজন ইফতারি কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। যতটুকু বেচাবিক্রি হয় সেটাও দূর-দূরান্ত থেকে আসা নৌকার মাঝিরা বা যাতায়াতকারী অন্য গ্রামের লোকেরা আসলে।

একমুঠো ধানও যারা তুলতে পারেননি, তাদের ঘরে শরবত মেলাই দায়। আগাম পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙ্গে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে নেত্রকোনা জেলার হাওরপাড়ের মানুষেরা। কোনরকম দিন গুজরান করছেন তারা। তাদের খবর রাখে না কেউ। মুখ ফুটে কেউ কেউ বললেও বেশিরভাগের লজ্জায় মুখে যেনো শব্দ নেই। 

সরকারিভাবেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদী মাহমুদ আকন্দ ব্যক্তিগত বা বেসরকারি উদ্যোগে এসকল অসহায় মানুষদের জন্য একবেলা ইফতারি ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।  

হাওর অধ্যুসিত জেলা নেত্রকোনা। জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার ডিঙ্গাপোতা হাওরের ধান ও মাছে উদ্বৃত্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা মিটে। গত ১ এপ্রিল মোহনগঞ্জ উপজেলার গাগলাজুর ইউনিয়নের চর হাজদা ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে পাহাড়ী ঢলে ডিঙ্গাপোতা হাওরসহ বিভিন্ন হাওরের ফসল তলিয়ে যায়। এতে হাওরের ১৪ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়। ঠিক এর পরই পানি বিষাক্ত হয়ে হাওরের মাছগুলোও মরে যায়। এতে করে নিঃস্ব হয়ে পড়েন হাওর পাড়ের মানুষেরা। অসহায় দিন যাপন করছেন এখন তারা।

মোহনগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া, ফাগুয়া, শামপুর গাগলাজুর সহ বিভিন্ন গ্রামের অনেক পরিবারে পৌঁছেনি সরকারি ত্রাণ সহায়তা। তার উপর ঘরে নেই একমুঠো ধান। সকল শ্রেণীর কৃষক পরিবারগুলো এবার বঞ্চিত রমজানের আমেজ থেকে। কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে রোজা করছেন তারা। এবছর বাজারগুলোও তেমন ইফতারী ব্যবসায় জমে উঠছে না। চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। 

তেতুলিয়া গ্রামের খোকন মিয়া, শহর বানু, মাজেদাসহ অনেকেই জানান, অন্যবছর রোজার প্রথম দিন মাংস আনা হতো। এবছর তো ঘরে ভাতই নাই। মাংস পাবো কই। কাজ কাম নাই, রোজগারও নাই। লবণের শরবত কইরা যে মানুষ খাইবো, এমনডাও কঠিন। আগে লবণের কেজি আছিন ১৪ বা ১৫ টাকা কেজি। এইবার ২৮/২৯ টাকা কেজি হইয়া গেছে। এই সব গ্রামগুলাতে দুর্ভিক্ষ চলতাছে। কিন্তু কেউ কেউ আমরা কই। আবার কেউ শরম পাই। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর মোহনগঞ্জ উপজেলায় ১৬ হাজার ৮শ ২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। তারমধ্যে বাঁধ ভেঙ্গে আগাম ঢলে ১৪ হাজার হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এতে ২৩ হাজার ৮শ জন কৃষক ক্ষত্রিগ্রস্থ হন। সরকারীভাবে ভিজিএফ কার্ড পাওয়া গেছে ৮ হাজার ৫০০ জনের।
 
মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদী মাহমুদ আকন্দ বলেন, রোজার ক্ষেত্রে সরকারের আলাদা কোন পরিকল্পনা না থাকলেও ব্যক্তি উদ্যোগে বা বেসরকারি উদ্যোগে সহয়তা করা হবে। এরপর এই উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যাও বেশি। ইতিমধ্যে ভিজিএফ কার্ড এসেছে সাড়ে আট হাজার। এর পরেও নতুন করে জেলেদের জন্য আরো আড়াই হাজার কার্ড এসেছে। প্রয়োজন পড়লে সেগুলো থেকেও ক্ষুদ্র কৃষকদের কিছু কিছু সহয়তা দেয়া হবে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও সহায়তা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের সহায়তা দেয়ার বিষয়ে ধন্যাট্য ব্যাক্তিদেরকেও আমরা উৎসাহিত করছি।  

 

বিডি প্রতিদিন/৩০ মে, ২০১৭/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর