সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নে (টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও কর্মসৃজন) তিনটি প্রকল্পের কাজ না করেই পকেটস্থ করা হয়েছে বরাদ্দের টাকা। কয়েকটি প্রকল্পের কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই দায় সেরেছেন সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা। এইসব প্রকল্পের মানও নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে (টিআর, কাবিখা, কাবিটা, কর্মসৃজন প্রকল্প) খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদে ৩৬ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৬ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার (১৯ ও ২০জুলাই) সরেজমিন খাজাঞ্চী ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (টিআর) কর্মসূচির আওতায় ২য় পর্যায়ের ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ হওয়া ৭নং ওয়ার্ডের ‘নোয়াগাঁও গ্রামের ফকিরবাড়ীর সামনে হতে কবরস্থান পর্যন্ত রাস্তার মাটি ভরাট’, ৩৬ হাজার ৮২৯ টাকা বরাদ্দ হওয়া ৫নং ওয়ার্ডের ‘তেলিকোনা এলজিইডি রাস্তা হতে আলকাছ আলীর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা উন্নয়ন’ ও অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় ১ম পর্যায়ের ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দের ২নং ওয়ার্ডের ‘হামদরচক মতিউরের বাড়ী থেকে চন্দ্রগ্রাম বিজয়নাথের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত’-এই তিন প্রকল্পের প্রথম দুটিতে কোনো কাজই করা হয়নি। তৃতীয় প্রকল্পের কাজ শুরু করা হলেও সিংহভাগই অসম্পূর্ণ থেকে গেছে।৫নং ওয়ার্ড সদস্য আমির উদ্দিন জানান, স্থানীয় জটিলতার কারণে তেলিকোনা এলজিইডি রাস্তা হতে আলকাছ আলীর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা অন্য আরেকটি রাস্তার উন্নয়নে ব্যয় করেছি। ২নং ওয়ার্ড সদস্য মিছিরুল ইসলাম হামদরচক মতিউরের বাড়ি থেকে চন্দ্রগ্রাম বিজয়নাথের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের কাজ পুরো সম্পন্ন করতে পারেননি স্বীকার করে বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে এটি শেষ করা হবে।
উল্লেখিত তিন প্রকল্প ছাড়াও বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই বরাদ্দের টাকা নেয়া হয়েছে। অসম্পূর্ণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা বরাদ্দের ৩নং ওয়ার্ডের ‘চন্দগ্রাম বিজয়নাথের বাড়ির সামনে থেকে শিবেন্দ্রনাথের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত’, ১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা বরাদ্দের ৭নং ওয়ার্ডের ‘বন্ধুয়া সোনা মিয়ার (সাবেক ইউপি সদস্য) বাড়ি থেকে কৃঞ্চপুর রুপালীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত’, ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা বরাদ্দের ৮নং ওয়ার্ডের ‘বাওনপুর পাঁচপীরের বাজারের পূর্ব হতে বড় খাড়ার সামন পর্যন্ত রাস্তা কাম বাঁধ মেরামত’ ও ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দের ৯নং ওয়ার্ডের ‘হরিপুর মরা সুরমার ডাকই মেরামত’।
তবে, সরেজমিন হরিপুর মরা সুরমার ডাকই মেরামত প্রকল্পে কিছু শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়। এ ওয়ার্ডের সদস্য মতিন মিয়া জানান, কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য রীতা রাণী বৈদ্য চন্দগ্রাম বিজয়নাথের বাড়ীর সামনে হতে শিবেন্দ্রনাথের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করেছেন বলে জানান।
৭নং ওয়ার্ড সদস্য হবিবুল ইসলাম জানান, পানির কারণে বন্ধুয়া সোনা মিয়ার (সাবেক ইউপি সদস্য) বাড়ীর থেকে কৃঞ্চপুর রুপালীর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা পুরোপুরি মেরামত করা না গেলেও মধ্যবর্তী বেশকিছু জায়গা জুড়ে মাটি ভরাট করেছিলাম। তবে, নোয়াগাঁও গ্রামের ফকিরবাড়ীর থেকে কবরস্থান পর্যন্ত রাস্তার মাটি ভরাট প্রকল্পটির বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
৮নং ওয়ার্ড সদস্য ফয়জুল হক জানান, একটি পক্ষের বাধার কারণে সামান্য কিছু অংশ বাকি থাকলেও বাওনপুর পাঁচপীরের বাজারের র্প্বূ হতে বড় খাড়ার সামন পর্যন্ত রাস্তা কাম বাঁধ মেরামতের কাজ প্রায় শেষ। অবশিষ্ট অংশের কাজ শিগগিরই শেষ করব।
তিনটি প্রকল্পের কাজ না করেই বরাদ্দের টাকা নেয়া, কয়েকটি প্রকল্পের কাজ অসম্পূর্ণ রেখে দেয়ায় জনসাধারণের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি অসম্পূর্ণ প্রকল্পগুলোর মান নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। স্থানীয় জনসাধারণ জানান, যেভাবে কাজ হওয়ার কথা সেভাবে হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে দায়সারা গোছের কাজ করা হয়েছে।
এদিকে, খাজাঞ্চী ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত একটি প্রকল্পের নাম ও জায়গার মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় সাধারণ খাতের ২য় পর্যায়ের প্রকল্পের তালিকা বিবরণে ‘পূর্ব নোয়াগাঁও মসজিদ হতে সোহেল মিয়ার বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা উন্নয়ন’ উল্লেখ থাকলেও সেখানে গিয়ে দেখা যায় কোনো কাজই করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকল্পটির কাজ পশ্চিম নোয়াগাঁও মসজিদ হতে সোহেল মিয়ার বাড়ী পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকা ৪নং ওয়ার্ড সদস্য সিরাজ উদ্দিন জানান, ভুলবশত পশ্চিম নোয়াগাঁওর স্থলে পূর্ব নোয়াগাঁও লেখা হয়ে থাকতে পারে। তবে, মূলত বরাদ্দটি পশ্চিম নোয়াগাঁও গ্রামের।
খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, প্রাকৃতি দুর্যোগের কারণে যে ক’টি প্রকল্পের কাজ অসম্পূর্ণ ছিল সেগুলোতে কাজ শুরু করা হয়েছে। শীঘ্রই তা সম্পন্ন করা হবে।
এ ব্যাপারে কথা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুকদার জানান, কাজ না করে অথবা প্রকল্প অনুযায়ী কাজ না হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
বিডি প্রতিদিন/২১ জুলাই, ২০১৭/ফারজানা