২১ জুলাই, ২০১৭ ২০:২০

অপারেশনের সাড়ে ৩ মাস পর নারীর পেট থেকে বের হলো গজ!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

অপারেশনের সাড়ে ৩ মাস পর নারীর পেট থেকে বের হলো গজ!

বরিশালে অস্ত্রপাচারের সাড়ে তিন মাস পর মাকসুদা বেগম (২৫) নামে এক নারীর পেট থেকে গজ বের করেছেন চিকিৎসকরা। মুর্মূর্ষু অবস্থায় ওই নারীকে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেলের নিবির পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। 

দীর্ঘদিন ওই নারীর পেটের মধ্যে গজ থাকায় সেগুলো পঁচে তার খাদ্যনালীতে অনেকগুলো ছিদ্র হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। গতকাল বৃহষ্পতিবার মাকসুদা বেগমের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ওই রাতেই তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তার শ্বাস-প্রশ্বাসে তীব্র সমস্যা হচ্ছে।

মাকসুদা পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার বিলবিলাস গ্রামের মো. রাসেল সরদারের স্ত্রী। গত মার্চ মাসে অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে মাকসুদা একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। ওই সময় তার পেটে গজ রেখে সেলাই করে দেন চিকিৎসক।

মাকসুদার মা রোকেয়া বেগম জানান, "গত মার্চে সন্তান প্রসব করানোর জন্য বিলবিলাস এলাকার নান্নু ডাক্তার (উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ফার্মাসিস্ট এবং বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকের মালিকদের একজন মফিজুল ইসলাম ওরফে নান্নু) মাকসুদাকে বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে অস্ত্রপাচার করে মাকসুদার একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কয়েকদিন ক্লিনিকে থাকার পর তারা বাড়ি ফিরে যান।" 

তিনি আরও বলেন, "প্রায় এক মাস পর মাকসুদা পেটে তীব্র ব্যাথা অনুভব করায় আবারও ওই ক্লিনিকে যায়। সেখানের চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে তাদের জানায় কিডনিতে ব্যাথার কারণে তার পেটে ব্যাথা হচ্ছে। এরপর ওষুধ দিয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা চলে। দুই মাস পর খিচুনি দিয়ে জ্বর ওঠে। তখন খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। গত জুন মাসে তাকে বরিশাল মেডিকেলের বর্হিঃবিভাগের চিকিৎসক দেখানো হয়। তখন আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা হলেও কিছু ধরা পড়েনি। এরপর পটুয়াখালীতে ডা. নজিবুল হককে দেখালে তিনি বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। গত ১২ জুলাই হাসপাতালে মাকসুদার অস্ত্রপাচার হয়। তখন তার পেটের ভেতর থেকে গজ বের করা হয়।"

মাকসুদার স্বামী রাসেল সরদার জানান, "বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকে কোন ডাক্তার অপারেশন করেছিলো তা তিনি জানেন না। তবে নান্নু ডাক্তার তাদের সেখানে নিয়ে গিয়েছিলো। ১৩ হাজার টাকায় নান্নু অপারেশন করিয়েছেন। কিন্তু অপারেশনের সময় তারা পেটে গজ রেখে দিলে মাকসুদার অবস্থা খারাপ হয়।" 

আইসিইউ বিভাগের সেবিকা জাহেদা বেগম জানান," বৃহষ্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মাকসুদা বেগমকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। তার খাদ্যনালীতে ছিদ্র হওয়ায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।"

বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নজিবুল হক বলেন, ইতিপূর্বে মাকসুদা বেগমের পেটে অস্ত্রপাচারের সময় তার পেটে মফ (গজ) রেখে সেলাই দেওয়া হয়। গত ১২ জুলাই অস্ত্রপাচার করে মাকসুদার পেট থেকে মোড়ানো অবস্থায় একটি রক্তাক্ত গজ বের করা হয়। পেটের মধ্যে দীর্ঘদিন গজ থাকায় সেগুলো পঁচে খাদ্যনালীতে অনেকগুলো ছিদ্র হয়েছে। দ্বিতীয় অপারেশনের সময় পেট পরিচ্ছন্ন করে পায়খানার বিকল্প পথ করে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু খাদ্যনালী ছিদ্র থাকায় সেটা কাজে আসেনি। সেখানে ইনফেকশন হয়ে গেছে। পরে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। 

 


বিডি-প্রতিদিন/ ২১ জুলাই, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-১৫

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর