২৫ জুলাই, ২০১৭ ১৭:৩৫

দিনাজপুরে গৃহবধূ নুরজাহান হত্যার নেপথ্যে পরকীয়া

দিনাজপুর প্রতিনিধি

দিনাজপুরে গৃহবধূ নুরজাহান হত্যার নেপথ্যে পরকীয়া

পরকীয়া প্রেমের জেরে এক বছর আগে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে গৃহবধূ মোছা. নুরজাহান বেগম (৩৫) খুন করেছিল নিহতের প্রেমিক প্রতিবেশী মো. আলিফ হোসেন (১৮)। মঙ্গলবার মামলার তদন্তকারী অফিসার মো. আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

এর আগে, ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর সকালে বীরগঞ্জ পৌর শহরের মাকড়াই শালবনের গভীর জঙ্গল থেকে কাহারোল উপজেলার মুকুন্দপুর ইউপির ডহন্ডা গ্রামের মো. হাসিমুল ইসলামের স্ত্রী নুরজাহান বেগমের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 

পরে ওইদিন রাতে নিহতের ভাই বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউপির ঘোড়াবান্দ আখিরা ডাঙ্গা গ্রামের মৃত বশির উদ্দিনের ছেলে মো. কামাল হোসেন বাদী হয়ে বীরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা নম্বর-১৮। 

পুলিশ তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেফতার করে। পরে বিজ্ঞ আদালতের অনুমতিক্রমে তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের বেশ কিছু তথ্য উদঘাটন করে। সেই তথ্যের সূত্র ধরে তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করে মামলার তদন্তকারী অফিসার। 

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী অফিসার মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অসম পরকীয়া প্রেমের শিকার হয়েছিলেন কাহারোল উপজেলার মুকুন্দপুর ইউপির ডহন্ডা গ্রামের গৃহবধূ মোছা. নুরজাহান বেগম। প্রতিবেশী মো. আলিফ হোসেনের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে নুরজাহান বেগম। আলিফ হোসেন’র বাবা অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এবং নুরজাহান বেগমের স্বামী দিনমজুর। তাদের এই অসম প্রেমের বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আলিফ হোসেনকে দিনাজপুর শহরের পুলহাট আলামিয়া মাদ্রসা ও এতিম খানায় ভর্তি করে দেয় তার পরিবার। এর মধ্যে শারীরিক সম্পর্কের কারণে নুরজাহান গর্ভবতী হয়ে পড়ে। বিষয়টি আলিফকে জানালে আলিফ বাচ্চা নষ্ট করার কথা বলে এবং কিছু টাকা দেয়। এতে রাজী না হয়ে নুরজাহান তাকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। বিষয়টি নিয়ে নুুরজাহান মাদ্রসা পর্যন্ত যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে আলিফ হোসেন। 

ঘটনার দিন দিনাজপুর সদরের কাচারীর সামনে অবস্থিত জনৈক শাহাজানের দোকান থেকে একটি ছুরি ক্রয় করে তার বন্ধু মোহাইমেনুলকে সাথে নিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় নিজ গ্রাম ডহন্ডায় যায় আলিফ। মোহাইমেনুল নিজেকে একটি এনজিও'র কর্মী পরিচয় দিয়ে নুরজাহানের বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাকে কৌশলে বাড়ি থেকে বের করে আনে। পরে নুরজাহান এবং আলিফসহ মোহাইমেনুল শালবনের সামনে আসে এবং আলিফ তাকে পার্শ্ববর্তী রামপুর বাজারে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলে। মোহাইমেনুল চলে যাওয়ার পর শালবনের ভিতরে নিয়ে গিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ঘুমের ওষধ মিশ্রিত কোমল পানীয় পান করতে দেয় নুরজাহানকে। এরপর নুরজাহান তাকে কাজীর বাসায় গিয়ে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এক সময় নুরজাহান কিছুটা ঘুমের ভাব আসলে ক্রয়কৃত ছুরি দিয়ে তার গলা কেটে দিয়ে হত্যা করে লাশ সেখানে রেখে পালিয়ে যায়। পরদিন ৩০ নভেম্বর শালবনের ভিতর থেকে নুরজাহানের লাশ উদ্ধার হলে আলিফ মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যায়। তার বাবা হরমুজ আলী মেম্বার এবং মা মোছা. লিপি খাতুন বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। 

তদন্ত শেষে মো. আলিফ ও তার বন্ধু মোহাইমেনুল ইসলাম মিম বাবুর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ঘটনার পর থেকে মো. আলিফ পলাতক রয়েছে এবং তার বন্ধু মোহাইমেনুল ইসলাম মিমকে গ্রেফতার করা হলেও বর্তমানে সে জামিনে রয়েছে।

গৃহবধূ হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বীরগঞ্জ থানার ওসি আবু আককাস আহমেদ জানান, এই হত্যাকাণ্ডটির রহস্য উদঘাটনে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তথ্য প্রযু্িক্তকে কাজে লাগিয়ে নিবিড়ভাবে তদন্ত করে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে।

বিডি-প্রতিদিন/২৫ জুলাই, ২০১৭/মাহবুব

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর