২৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:৩৯

অপহরণের পর কেউ চলে গেছে না ফেরার দেশে, কেউ বেঁচে গেছে প্রাণে

শরীয়তপুর প্রতিনিধি:

অপহরণের পর কেউ চলে গেছে না ফেরার দেশে, কেউ বেঁচে গেছে প্রাণে

একই বয়সের পাঁচ শিশু অপহরনের ঘটনায় কেউ চলে গেছে না ফেরার দেশে আবার কেউ বেঁচে গেছে প্রাণে। প্রত্যেকেই শিক্ষার্থী। দু'জনের মৃতদেহ উদ্ধার হলেও নেই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। একজন এখনও নিখোঁজ। তবে একজন অপহরণের সময় বুদ্ধিগুণে প্রাণে বেঁচে গেছে। এ ঘটনাগুলো গত ১৫ দিনে শরীয়তপুরে ঘটেছে। সমাজে সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর অস্থিরতা। শিশু আর অভিভাবকরা আতঙ্কিত। প্রশাসন বলছে, জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়ন করা হয়েছে পুলিশ। 

গত ২২ জুলাই শনিবার সখীপুর ছৈয়াল কান্দি গ্রাম থেকে লিজা আক্তার (১০) নামে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ছাত্রীর শরীরে কিডনি, লিভার ও ফুসফুসসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ পাওয়া যায়নি। আবার গত সোমবার ২৪ জুলাই সদর উপজেলার পশ্চিম ভাষানচর এলাকা থেকে ওসমান গনি (১২) নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার বাম চোখ পাওয়া যায়নি। শ্বাসনালি ও রক্তনালি কাটা ছিল। অন্যদিকে, গত ৭ জুলাই সখীপুর ডিএম খালী ওহাব ঢালীকান্দি গ্রামের মাদ্রাসা ছাত্র সিয়াম মাহমুদ নিখোঁজ হয়। এখনো তার সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ।

এছাড়া, ২২ জুলাই শরীয়তপুর-নড়িয়া সড়কের কুরাশি এলাকা থেকে মাইক্রোবাসে করে শহরের কালেক্টরেট পাবলিক হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র নুরে আলম রাব্বিকে অপহরণ করা হয়। উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে নুরে আলম অপহরণ চক্রের কবল থেকে পালিয়ে আসে।

২৩ জুলাই রবিবার বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় যাচ্ছিল জাজিরা উপজেলার হারান টুনিকান্দি গ্রামের ইলিয়াছ বেপারির ছেলে ইয়াহিয়া বেপারি (১১)। সকাল সাড়ে আটটার দিকে শিবচরের কাঠাল বাড়ি ফেরিঘাটে পৌঁছলে অপরিচিত এক ব্যক্তি তাকে অচেতন করে নিয়ে যায়। ওই দিন সন্ধ্যার দিকে যখন তার চেতনা ফিরে আসে তখন সে কান্না শুরু করলে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে থানায় পৌঁছে দেয়। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে।

এদিকে, শিশু হত্যার মতো জঘন্য ব্যক্তিদের বিচারে দাবি জানায় সুশীল সমাজের সচেতন ব্যক্তিরা। এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ডাক্তার আকরাম এলাহী ও সিভিল সার্জন ডাক্তার নির্মল চন্দ্রদাশ বলেন, মানুষের চোখ প্রতিস্থাপন করা যায় ,অন্য অঙ্গ প্রতি স্থাপন করা যায় না। 

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা প্রসঙ্গে শরীয়তপুর শহরের কালেক্টরেট পাবলিক হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আরিফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এভাবে শিশু নিখোঁজ হওয়া, তাদের লাশ উদ্ধার হওয়া, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ না পাওয়ার ঘটনাটি উদ্বেগজনক। এছাড়া, আমার বিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার ঘটনায় বিদ্যালয়ের সকল শিশু ও অভিভাবকের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এহসান শাহ বলেন, ঘটনাগুলো খুব কাছাকাছি সময়ে ঘটে যাওয়ার কারনে মানুষের মনে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ সব বিছিন্ন ঘটনা, আতঙ্কিত হওয়ার মত কোন ব্যপার নয়। মানুষ যাতে স্বস্তিতে থাকতে পারে, নিরাপত্তার ঘাটতি অনুভব না করে সেজন্য পুলিশ কাজ করছে। সবগুলো ঘটনা নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে পুলিশের পাশে থেকে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি। জেলার গুরুত্বপূর্ন স্থানে পুলিশ চেক পোষ্ট বসানো হয়েছে। সাদা পোশাকধারী পুলিশ মাঠে কাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে লিজা আক্তার হত্যাকাণ্ডের দুই আসামী জাকির শেখ ও ফরিদ শেখকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ওই শিশুকে হত্যা করা হয়েছে এমন কথা তারা স্বীকার করেছে।

বিডি-প্রতিদিন/২৬ জুলাই, ২০১৭/ওয়াসিফ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর