শিরোনাম
১৭ আগস্ট, ২০১৭ ১৭:৪৪
কৃষি অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা

পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে লবন সহিষ্ণু পাট চাষে সফলতা

কলাপাড়া, (পটুয়াখালী)প্রতিনিধি


পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে লবন সহিষ্ণু পাট চাষে সফলতা

পটুয়াখালীর কলাপাড়াসহ উপকূলীয় অঞ্চলের পতিত জমিতে লবন সহিষ্ণু নতুন জাতের চারটি দেশী পাটের চাষে পাওয়া গেছে শতভাগ সফলতা। কৃষকদের মাঝে দিন দিন বাড়ছে পাট চাষের আগ্রহ। 

বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদনের জন্য কৃষকদের সম্পৃক্ত করে উপকূলের পতিত লবনাক্ত জমি আনতে হয়েছে পাট চাষের আওতায়। সোনালী আঁশ পাট ফিরে পাবে তার হারানো গৌরব আর কৃষক হবে অর্থিকভাবে সাবলম্বী। তবে দীর্ঘদিন পাটের আবাদ না হওয়ায় এবং স্থানীয়ভাবে পাটের বাজার না থাকায় উৎপাদিত পাট বিক্রয় নিয়ে কৃষকরা রয়েছে নানা সমস্যায় এমনটা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কৃষকরা। 

উপজেলা পখিমারা পাট গবেষনা ইনস্টিটিউটের সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলে আবাদী জমির পরিমান ২.৮৬ মিলিয়ন হেক্টর। যার মধ্যে মাত্র ৩০ভাগ জমি চাষ যোগ্য। এরমধ্যে ১.০৬ মিলিয়ন হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রার লবনাক্ততায় আক্রান্ত। যা দিনদিন বৃব্দি পাচ্ছে। 

উল্লেখযোগ্য লবনাক্ত জেলা গুলো হল সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ভোলা, বরগুনা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, চট্রগ্রাম, পটুয়াখালী এবং পিরোজপুর। পটুয়াখালীতে প্রায় দেড় লক্ষ হেক্টর জমি খরিপ-১ মৌসুমে লবনাক্ততার কারনে পতিত পড়ে থাকে। এসব পতিত জমি পাট চাষের আওতায় আনার জন্য ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ পাট গবেষনা ইনস্টিটিউটের পাখিমারা গবেষনা ব্লকে দেশী পাটের লবন সহিষ্ণু চারটি জাতের পরীক্ষা চালানো হয়। স্থানীয় কৃষকদের পতিত জমিতে এ জাতের পাট চাষে শতভাগ সফলতা পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে নতুন সম্ভাবনা বলে পাট গবেষনা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা জানিয়েছেন।

উপজেলার মিশ্রীপাড়া গ্রামে কৃষক মাসুম বিল্লাহ বলেন,বর্ষাকালে আমন চাষের জমি পতিত থাকে। শুকনো মৌসুমে লবনের পরিমান বেড়ে যাওয়ায় আর ফসল চাষ করা যায়না। পাট গবেষনার কর্মকর্তাদের কথায় তিন বছর ধরে পাট চাষ করে বেশ ভাল ফলন পেয়েছে। 

উপজেলা পাট গবেষনা ইনস্টিটিউটের লবনাক্ত সহিষ্ণু পাটের জাত উদ্ভাবক ড.মাহমুদ আল হোসেন, বপনকালীন সময়ে সেচ সমস্যা আর উৎপাদিত পটের বাজারজাত সমস্যা দুটির সমাধান করা গেলে আগামী দিনে উপকূলীয় এলাকায় পাট চাষ ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হবে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাট ও পাট জাতীয় ফসলের কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও হস্তান্তর প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ পাট গবেষনা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত লবনাক্ত সহিষ্ণু দেশী পাট -৮ জাতের ১৪ডিএস/ মিটার এবং ৯ডিএস/ মিটার মাত্রার সহনশীল চারটি লাইন উদ্ভাবন করা হয়েছে।  কৃষকের জমিতে মাঠ মূল্যায়নের মাধ্যমে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পশ্চিম খাজুরায় ১৩.৪৫ডিএস/ মিটার,মম্বিপাড়ায় ১১.৬ ডিএস/ মিটার, মিশ্রিপাড়ায় ৮.৩০ ডিএস/ মিটার এর সফলতা পাওয়া গেছে। 

তিনি আরো বলেন, কৃষি নির্ভরশীল আমাদের দেশ প্রতিনিয়ত বাড়ছে মানুষ। কমছে কৃষি জমি। আমাদের অর্থনীতি দাড়িয়ে আছে কৃষির উপর নির্ভর করে। সেখানে কৃষি জমি পতিত থাকলে অর্থনীতির চাকা মন্থর হতে পারে। তাই উপকূলীয় এলাকার কৃষকদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে সকল পতিত জমি পাট চাষের আওতায় আনতে হবে। আর এজন্য সরকারী ভাবে পাইলট প্রোগ্রাম হাতে নিতে হবে। আরো কৃষকদের প্রনোদনার আওতায় আনতে হবে।
   
উপকূলীয় এলাকার লবনাক্ত জমিতে পাট চাষের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যাক্ত করে বিজেআরআই মহা পরিচালক ড.মনজুরুল আলম বলেন,স্থায়ীভাবে কৃষকদের এ সমস্যার সমাধান এবং সরকারী পৃষ্টপোষকতার পাশাপাশি সকল কৃষকদের পাট চাষে সম্পৃক্ত করা গেলে কৃষি অর্থনীতিতে আসবে গতিশীলতা, কৃষক হবে অর্থিকভাবে সামলম্বী, পাট ফিরে পাবে তার হারানো অতীত। আর পতিত থাকবেনা কোন জমি। যা জাতীয় অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন মাত্রা। 

 

 

বিডি প্রতিদিন / ১৭ আগস্ট, ২০১৭ / তাফসীর‌

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর