“দরিদ্র মহিলা উন্নয়ন সংগঠন” নামের একটি সমিতির তহবিলে জমা আছে অর্ধকোটি টাকারও বেশি। দেড় সহস্রাধিক হতদরিদ্র নারীর ঘামশ্রমে গড়ে ওঠা ওই সংগঠনে তারা তীলে তীলে সঞ্চয় করেন ওই টাকা। তার ওপর লোলুপ নজর পড়েছে ওই সংগঠনের সাবেক সভাপতিসহ স্থানীয় কতিপয় স্বার্থান্বেষীর।
টাকা আত্মসাতের উদ্দেশে ইতোমধ্যে গোপনে একটি কমিটি করে ব্যাংক হিসাবও পরিবর্তন করা হয়েছে। ব্যাংক থেকে ওই টাকা উত্তোলনের চেষ্টা চলছে, এমনটি জানতে পেরে সংগঠনটির তদারকির দায়িত্বে থাকা উন্নয়ন সংস্থা “দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে” (ডিএসকে) কর্তৃপক্ষ তাতে ভেটো দিলে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। এর পর থেকে নানামুখি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন ওই স্বার্থান্বেষী মহলটি। ডিএসকে’র স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং নারী সংগঠনের ভুক্তভোগী সদস্যদের অভিযোগে এ তথ্য জানা গেছে।
দরিদ্র মহিলা উন্নয়ন সংগঠনের চলমান এডহক কমিটির আহবায়ক আঞ্জুমানারা বেগমসহ একাধিক নারী সদস্য তাদের অভিযোগে জানান, ২০০৭ সালে প্রলয়ঙ্কারি ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র বিধ্বস্ত শরণখোলার দরিদ্র নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও তাদের সাবলম্বি করতে “দরিদ্র মহিলা উন্নয়ন সংগঠন’ নামের ওই সমিতি গড়ে তোলেন। যা ২০০৯ সালে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে রেজিষ্ট্রেশনপ্রাপ্ত হয়।
অভিযোগে আরো জানা যায়, ওই ঋণের অর্থ জনতা ব্যাংক শরণখোলা শাখায় সংগঠনের নামের একটি হিসাব খুলে তিনজনের যৌথ স্বাক্ষরে লেনদেন করা হয়। সংগঠনের তহবিলে এখন মোটা অঙ্কের টাকা হওয়ায় সাবেক সভাপতি মর্জিনা বেগম ও তার স্বামী সোলায়মান ফরাজী স্থানীয় কতিপয় প্রভাভশালী ব্যক্তির সাথে গোপন আঁতাত করে আত্মসাতের চেষ্টা করছেন। মর্জিনা সংগঠনের সভাপতি থাকাকালে কোন নিয়মনীতি না মেনে বিভিন্ন সময় ভুঁয়া বিল ভাউচার দিয়ে সংগঠনের টাকা দাবি করে। তারা গোপনে একটি কমিটি করে স্থানীয় জনতা ব্যাংকে সংগঠনের হিসাব পরিবর্তন করে টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করেন। বিষয়টি পরে জানতে পেরে সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিয়ে হিসাবটি স্থগিত রাখা হয়। এ অবস্থায় দরিদ্র নারীদের সংগঠন ও এর অর্থ রক্ষার্থে প্রশাসনের হস্থক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগী সদস্যরা।
এব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, সাধারণ পরিষদের সদস্যরা নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করবে। এর বাইরে কমিটি হলে তা অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।
ডিএসকের উপ-পরিচালক (প্রকল্প) উত্তম কুমার সরকার জানান, সংস্থার নিয়মানুযায়ী সংগঠনটির সক্ষমতা বৃদ্ধি করে একটি নির্বাচিত কমিটির কাছে সকল কার্যক্রম বুঝিয়ে দেয়া হবে। তার আগেই ওই স্বার্থান্বেষীরা অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মীর আলিফ রেজা জানান, বিষয়টি তিনি জানতে পেরে উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে তদন্তের জন্য বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত সাবেক সভাপতি মর্জিনা বেগম জানান, তাদের কাছে গঠনতন্ত্রের কপি না থাকায় উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার নির্দেশে কমিটি করা হয়। সংগঠনের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি সঠিক না। ডিএসকে’র বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাদের নামে বানোয়াট অভিযোগ করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন / ১৭ আগস্ট, ২০১৭ / তাফসীর