১৮ আগস্ট, ২০১৭ ২০:৫৭

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে যৌথ টহল

উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে যৌথ টহল

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী ঘুমধুম এলাকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) টহল ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি দু'দেশের মধ্যে যৌথ টহলও শুরু হয়েছে। গত ৫ দিনে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ যৌথভাবে সীমান্ত পয়েন্টে দু'বার টহল দিয়েছে।

কক্সবাজারের উখিয়ার লাগোয়া সীমান্তবর্তী ঘুমধুমে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্তের মধ্যে এই প্রথম চালু হলো যৌথ টহল। উভয় দেশের দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) গত তিন দিনে এই সীমান্তে দু’বার করে যৌথ টহল দিয়েছে।

সীমান্তে এই যৌথ টহল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ বিজিবি ব্যাটালিয়ন-২-এর কমান্ডার লে. কর্নেল আরিফুল ইসলাম। গত রবিবার (১৩ আগস্ট) ও বুধবার (১৬আগস্ট) জিরো লাইনে এই যৌথ টহল হয়। বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত থেকে উত্তরের সীমান্তে এই যৌথ টহল চলে। বর্ডার ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে এই যৌথ টহল দেওয়া হয় ৩১ নম্বর পিলারের উপরের দিকে থেকে ৩২ নম্বর পিলার পর্যন্ত। টংডু সীমান্তেও এই যৌথ টহল হয়। রবিবার টহলের শুরুতে বিজিবি ও বিজিপি সদস্যরা নিজ নিজ বাহিনীর পতাকা নিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ২০১০ সালে যৌথ সীমান্ত টহলের স্মারক সই হয়। ইন্ডিয়া বাংলাদেশ কো-অর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের আওতায় এই যৌথ টহলের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের এ ধরণের কোনো সমঝোতা না থাকলেও মাস দেড়েক আগে এক পতাকা বৈঠকে যৌথ টহলের প্রস্তাব করেন লে. কর্নেল আরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, এরপর আরও কিছু অফিসিয়াল যোগাযোগের পর যৌথ টহলের ব্যাপারে মিয়ানমার সম্মত হয়।

লে. কর্নেল আরিফুল আরও জানান, যৌথ টহলের সময় দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরা জিরো লাইনে যার যার অংশে অবস্থান করে টহল দেন। টহলের সময় আলোচনা হয়, তথ্য বিনিময়ও হয়। চাইলে এক দেশের সীমান্তরক্ষীরা তখন আরেক দেশের মধ্যে প্রবেশও করতে পারে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মোট সীমান্ত ১২০ কি.মি.। এর মধ্যে নৌ ও স্থল উভয় ধরণের সীমান্ত আছে।

আরিফুল ইসলাম তার কমান্ডিংয়ের আওতায় এই যৌথ টহলের ব্যবস্থা করলেও অন্য অংশে হবে কিনা তা সেই এলাকার কমান্ডাররা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে যৌথ টহল পুরো সীমান্তে চালু হলে মাদক চোরাচালান বিশেষ করে ইয়াবা পাচার কমে আসবে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আবারও সামরিক অভিযান শুরু হওয়ায় সেখান থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে বলে খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, গত কয়েকদিনে কমপক্ষে এক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, জলপাইতলী, নোয়াপাড়া, উখিয়ার বালুখালী, ধামনখালী, রহমতেরবিল, পালংখালী এলাকা দিয়ে প্রবেশ করেছে। তারা বালুখালী, কুতুপালং ও ঘুমধুম অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছেন।

লে. কর্নেল আরিফুল ইসলাম জানান, এই যৌথ টহল উভয় দেশের জন্য ইতিবাচক। আমরা মিয়ানমারকে রাজি করাতে পেরেছি, এর মানে হল সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় তাদের সদিচ্ছা আছে। তাদের ভেতরে কী, তার প্রভাব যাতে সীমান্তে না পড়ে এজন্য যৌথ টহল কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

তিনি আরও জানান, আমার সীমান্ত এলাকা দিয়ে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা এখনও ঘটেনি। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনা সমাবেশের গোয়েন্দা তথ্য আমাদের কাছে আছে। তাই সীমান্তে আমরা সার্ভিলেন্স বাড়িয়েছি।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে এই যৌথ টহল আরও হবে। এটাকে নিয়মিত করতে চান লে. কর্নেল আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, যৌথ টহল যত বাড়বে তত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা সহজ এবং স্বচ্ছ হবে।


বিডি প্রতিদিন/১৮ আগস্ট ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর