নাটোরে নারীলিপ্সু প্রতারক নব্য রসু খাঁ বলে পরিচিত বন্ধনের হাত থেকে ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ীর স্কুল পড়ুয়া একমাত্র কন্যাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যেই ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে।
গত মঙ্গলবার সকালে নাটোর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ঐ ছাত্রীকে বখাটে বন্ধন তার বাবা মায়ের সহযোগিতায় অপহরণ করে নিয়ে যায়। প্রায় ১৪ বছর বয়সী সেই ছাত্রীটিকে স্বপরিবারে অপহরণের ঘটনা এখন "টক অব দি টাউনে" পরিণত হয়েছে
মেয়েটিকে উদ্ধারে পুলিশি তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অপহৃত ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনার সাথে জড়িতদের অবস্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্যদাতাকে মোটা অংকের টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।জানা যায়, নাটোরের শহরতলীর ছাতনী ভাটোপাড়া গ্রামের বকুল ইসলামের মাদকাসক্ত বখাটে পুত্র বন্ধন ইসলাম শহরের ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিদের স্কুল পড়ুয়া নাবালক মেয়েদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলিয়ে ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে পালিয়ে বিয়ে করে। শুধু তাই নয়, অপহরণ পূর্বক বিয়ে করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া সহ নারীঘটিত নানা অনৈতিক কাজের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিভাবকরা মোটা অংকের টাকা দিয়ে মেয়েকে উদ্ধার করলেও মান সম্মানের ভয়ে কোন আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল এই বঘাটে বন্ধন।
একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে অনেক নারীর জীবন নষ্ট করা এই বন্ধন বন্ধুমহলে রসু খাঁ বলে পরিচিত। সুদর্শন বন্ধন মেয়ে পটানোর জন্য পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে আর ওয়ান মটরবাইক ও ডিএসএলআর ক্যামেরা। নিজে ধনী পরিবারের ছেলে হিসেবে পরিচয় দিয়ে মেয়েদের সাথে প্রতারণা করেন।
বন্ধনের একটি বন্ধুমহল আছে, যাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে ইয়াবা সেবন করে শহরে বেপরোয়া গতিতে মটরসাইকেল চালানো এবং ষ্ট্যান্টবাজি করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া নিজেকে বেসরকারি নামী দামি ইউনিভারসিটির বিবিএ, এমবিএ শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দিয়ে থাকে।।
পুলিশ সূত্র জানায়, দুই সপ্তাহ আগে প্রথমবার ব্যবসায়ীর ১৪ বছর বয়সী নাবালিকা মেয়েকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় বন্ধনের গ্রামের বাসায়। তাৎক্ষণিক সেখানে পুলিশ নিয়ে উপস্থিত হয় সেই মেয়ের বাবা মা। সেখানে উপস্থিত বন্ধনের চাচা ও মামা মেয়েকে তার বাবার হাতে তুলে দেয়। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে ধরনের ঘটনা ঘটাবে না মর্মে মুচলেকা দিয়ে অভিভাবকরা বন্ধন কে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় সদর থানা থেকে। এরপরেই প্রকাশিত হতে থাকে সুদর্শন প্রতারক বন্ধনের নারীঘটিত নানা অপকর্ম এবং প্রতারণার ঘটনা।
মেয়েকে ফেরত নেওয়ার ১২ দিনের মাথায় মঙ্গলবার স্কুল থেকে রেজাল্ট নিয়ে বাসায় ফেরার পথে বন্ধন তার সহযোগী বন্ধুদের নিয়ে পুনরায় মেয়েটিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় বন্ধনের বাবা বকুল ইসলাম এবং কুহেলি ইসলাম সাথে ছিল। তারাই ছেলেকে প্ররোচিত ও সহযোগীতা করেছে বিপুল ধন সম্পদের মালিক উক্ত ব্যবসায়ীর নাবালিকা কন্যাকে অপহারণ করে নিয়ে যাওয়া ব্যাপারে।
নাটোর থানার ওসি সিকদার মশিউর রহমান জানান, "ঘটনার পরপরই বন্ধনের বর্তমান ঠিকানা দক্ষিণ বড়গাছা এলাকার নানার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তাদের ঘরে তালা মারা। খুব সকালেই বাবা, মা, ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে বন্ধন বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর গত বুধবার মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে বন্ধন, তার বাবা মা সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে নাটোর সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকে অভিযুক্তরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।"
তিনি আরও জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে মেয়েটিকে উদ্ধারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি ভিকটিমকে উদ্ধারসহ আসামীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী।
বিডি প্রতিদিন / ১৭ আগস্ট, ২০১৭ / তাফসীর