২৩ আগস্ট, ২০১৭ ১৭:২৩

বিচারের আশায় কলেজছাত্রীর লাশ কফিনে সংরক্ষণ করছেন বাবা!

মাদারীপুর প্রতিনিধি:

বিচারের আশায় কলেজছাত্রীর লাশ কফিনে সংরক্ষণ করছেন বাবা!

কলেজছাত্রী সোমা বালাকে (১৬) হত্যা করা হয়েছে, নাকি তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে- এমন অভিযোগ উত্থাপন করেছেন নিহত সোমার বাবা দিলীপ বালা। তাই সত্য উদঘাটনের জন্য তিনি লাশ দাহ না করে কফিনে ভরে মাটিচাপা দিয়ে প্রায় দুই মাস ধরে পাহাড়া দিচ্ছেন এই অসহায় বাবা।

ঘটনাটি ঘটেছে ২৪ জুন মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের সেনদিয়া গ্রামে। এ ব্যাপারে দিলীপ বালা বাদী হয়ে মাদারীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

স্থানীয়, দিলীপ বালার অভিযোগ ও মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় বিশ বছর আগে রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের সুতারকান্দি গ্রামের সুনীল বালার ছেলে দিলীপ বালার সাথে একই উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের সেনদিয়া গ্রামের মনোরঞ্জণ শিকারীর মেয়ে শোভা রাণী বালার বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছর পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ বাঁধে। বনিবনা না হওয়ায় শোভা রাণী বালা তাদের শিশুকন্যা সোমা বালাকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায় এবং সেখানেই বসবাস করতে থাকে। শোভা মাঝে মধ্যে স্বামীর বাড়িতে আসা যাওয়া করত। এদিকে শিশু সোমা বালা মামা বাড়িতে থেকে বড় হয়ে ওঠে এবং লেখাপড়া করতে থাকে।  
এসএসসি পাস করার পর সোমাকে গোপালগঞ্জ জেলার কলিগ্রাম বঙ্গরত্ন ডিগ্রি কলেজে ভর্তি করা হয়। সোমা এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর তার মামা বাড়ির লোকজন বিয়ে দেয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকে।

এক পর্যায় দিলীপ বালার স্ত্রী শোভা রাণী বালা, শ্বাশুড়ী পারুল শিকারী, শ্যালক কৃষ্ণ শিকারীসহ ঐ বাড়ির লোকজন সোমার অমতে পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বনগ্রামের খোকন মন্ডলের ছেলে দিপক মন্ডল (৪৫) নামের এক মধ্যবয়সী লোকের সাথে বিয়ে ঠিক করে। সোমা বাল্য বিয়ে করবে না ও আরো পড়াশোনা করবে বলে জানায়। এক পর্যায় সোমাকে জোর করে বিয়ের রেজিস্টারী কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেয়। সোমা এতে বাধা দেওয়ায় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করা হয়। 

মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার দিন ২৪ জুন সকালে সোমা বালা তার প্রতিবেশী বন্ধু অনিক মোহন্তের বাড়ি বেড়াতে যায়। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে সোমা তার মামা বাড়িতে ফিরে আসে। এতে সোমার মামা বাড়ির লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে মামা কৃষ্ণ শিকারী সোমার শরীরে শুকনো মরিচের গুড়া মাখিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে। এ অপমান সহ্য করতে না পেরে সোমা আত্মহত্যা করে অথবা, তাকে হত্যা করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।  

এ ব্যাপারে মৃত সোমা বালার বাবা দিলীপ বালা বলেন, সোমা মারা গেছে। তার লাশ রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়েছে। এই সংবাদ পেয়ে আমি দ্রুত রাজৈর হাসপাতালে যায়। আমাকে দেখে আসামিরা লাশ হাসপাতালের বারান্দায় রেখে পালিয়ে যায়। পরে ময়না তদন্ত শেষে পুলিশের কাছ থেকে লাশ বুঝে নেই। কিন্তু শুরুতেই আমার সন্দেহ হওয়ায় এবং সত্য ঘটনা উদঘাটনের জন্য লাশ দাহ না করে কাঠের বাক্সের কফিনে সংরক্ষণ করে বাড়ির পাশেই মাটিচাপা দিয়ে রাখি। কারণ লাশ পুড়িয়ে ফেললে আর কোন আশায় থাকবে না। তাই আমি পুনঃময়না তদন্তের জন্য প্রায় দুই মাস ধরে মেয়ে সোমা বালার লাশ পাহাড়া দিয়ে যাচ্ছি। 
সোমার বাবা দিলীপ বালা আরও বলেন, আমার মেয়ে সোমাকে হত্যা করা হয়েছে, নাকি নির্যাতন করে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে আমি এ সত্যটা জানতে চাই। এই সত্য জেনে তবেই আমি আমার মেয়ের লাশ সৎকার করব। আমি লাশের পুনরায় ময়না তদন্ত চাই এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচার চাই।

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, সোমা মারা যাবার ব্যাপারে আমরা তদন্ত করে ও ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী আত্মহত্যা বলেই প্রমাণ পেয়েছি। তবে শুনেছি- নিহত সোমার বাবা দিলীপ বালা লাশ পুনঃরায় ময়না তদন্ত করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।  

বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর