২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৬:৩৪

ছেলের পাওনাদারদের অপমান সইতে না পেরে বাবার আত্মহত্যা!

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ছেলের পাওনাদারদের অপমান সইতে না পেরে বাবার আত্মহত্যা!

অপমান সইতে না পেরে ফরিদপুর সদর উপজেলায় সাবেক পুলিশ কনস্টেবল আলীম বেপারী (৭৫) বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। বৃহস্পতিবার ভোরে গেরদা ইউনিয়নের কেশবনগর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। 

এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের সাবেক কনস্টেবল আলীম বেপারীর ছেলে নুর আহমেদ ব্যবসায়িক কারণে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা ধার কর্জ নিয়েছেন। পাওনাদারদের চাপে একসময় এলাকা ছেড়ে চলে যায় নুর আহমেদ। পরবর্তীতে পাওনাদারেরা নুর আহমেদের বাবা আলীম বেপারী ও তার পরিবারের সদস্যদের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকে। 

বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার স্থানীয়ভাবে বৈঠকও হয়। কিন্তু পাওনাদারেরা আলীম বেপারীর কাছে প্রায় কোটি টাকা দাবি করে। কিন্তু আলীম বেপারী এতটাকা কোথায় পাবে জানায় বৈঠকে। এ নিয়ে পাওনাদারেরা বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। 

একপর্যায়ে গেরদা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত (৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড) মহিলা মেম্বার, ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রুবি বেগমের নির্দেশে পাওনাদারেরা মহিলা রোডস্থ আলীম বেপারীর দুইটি দোকানের মালামাল জোরপূর্বক বিক্রি করে দেয় এবং দোকান দুইটিতে তালা মেরে দেয়। এছাড়া স্থানীয় ওবায়দুর রহমান প্রায় দুইবিঘা জমি দখল করে রেখেছে। 

পরে বিষয়টি আলীম বেপারী ও তার মেয়ে সালমা আক্তার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। 

অভিযোগের ভিক্তিতে ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে এ মাসের ৭ তারিখে একটি শালিস বৈঠক হয়। সেখানে মহিলা মেম্বার ও পাওনাদারেরা আলীম বেপারীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে পাওনাদারেরা নাজেহাল করতে থাকে আলীম বেপারীকে। আলীম বেপারী পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছিল স্থানীয় মেম্বার রুবি বেগম হুমকি দিয়ে বলেছে, এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে। নইলে ঘরে তালা মেরে দেয়া হবে, গাছগাছালি কেটে নেয়া হবে। 

একদিকে, দোকান তালা মেরে দেওয়ায় সংসারের নাজেহাল অবস্থা। অন্যদিকে পাওনাদার এবং রুবি মেম্বারের হুমকিতে বেশ বিপর্যস্থ হয়ে পড়েন বৃদ্ধ আলীম বেপারী। শুক্রবার শালিস বৈঠক হওয়ার আগেই বৃস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তিনি নিজ বাড়িতে বিষপান করে আত্মহত্যা করে। 

নিহতের মেয়ে সালমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, রুবি মেম্বার আমার বাবাকে হত্যার হুমকি দেয় এবং বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবার কথা বলে। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় আমার বাবাকে আজেবাজে কথাও বলেছে। অপমান সইতে না পেরে শালিসের আগের দিন আমার বাবা বিষপান করে। এরপর আমি থানায় গেলে মামলাটি নেয়নি পুলিশ। 

আলীম বেপারীর ভাই নুর মোহাম্মদ রবিন বলেন, আমার ভাইয়ের কাছে কে কত টাকা পাবে আমরা জানিনা। যে যার ইচ্ছে মতো টাকা চাইছে। এর আগে শালিস বৈঠক হলে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রায় দেয় বাড়িঘর লিখে দেয়ার জন্য। 

৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার খোরশেদ জানান, বিষয়টি আমি সবই জানি। আলীম বেপারীর ঘটনাটি দুঃখজনক। আলীম বেপারীর আত্মহত্যার বিষয়ে যারা প্ররোচনা দিয়েছে তাদের বিচার হওয়া উচিত। 

সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার রুবি বেগম বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। আমার কাছে পাওনাদারেরা এসেছিল আমি সবকিছু জানি। আমি তো আলীম বেপারীর কাছে টাকা পাইনা। আমি কেন বাড়িঘরে তালা দিবো এবং এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিবো। এসবই মিথ্যা অপপ্রচার। 

এ ব্যাপারে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিমউদ্দিন আহমেদ জানান, আলীম বেপারীর আত্মহত্যার বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। 

বিডি প্রতিদিন/২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭/আরাফাত 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর