২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৫:৪৪

চুনিয়াপাড়ার ঘরে ঘরে চুন

দিনাজপুর প্রতিনিধি:

চুনিয়াপাড়ার ঘরে ঘরে চুন

দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে অনেক পুরনো রীতি হল অতিথি আপ্যায়নে পান খাওয়ানো। আর এই পানের জন্যই এ অঞ্চলে চুন চাহিদা বেশি। পান খাওয়া প্রিয়দের কাছে শামুক-ঝিনুকের খোলস থেকে তৈরি চুনের কদর বেশী। আর এই চুন তৈরির এলাকার নাম চুনিয়াপাড়া। দিনাজপুর-ফুলবাড়ী মহাসড়কের দিনাজপুর শহর থেকে ৫/৬ কিলোমিটার দুরে শশরা ইউপিতে এই চুনিয়া পাড়া।

একসময় এই এলাকার ঘরে ঘরে সবাই চুন তৈরি করলেও কালের বিবর্তনে অনেকে পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেলেও এখনও ৭০ পরিবার এই ঐতিহ্যগত পৈত্রিক পেশাকে ধরে রেখেছেন। তবে শামুক-ঝিনুকের খোলস থেকে তৈরি চুন ছাড়াও বাজারে পাথরের চুনও পাওয়া যায়।  তাই আগের চেয়ে এখন কম লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দিনাজপুর অঞ্চলে নদী-নালা-জলাশয় কমে যাওয়ায় শামুক-ঝিনুক কম পাওয়া যায়। তাই বেড়ে গেছে শামুক-ঝিনুকের খোলসের দাম। শামুক-ঝিনুকের খোলস থেকে তৈরি করা চুন বিক্রিতে এ কারণে লাভ কমে গেছে। 

চুনিয়াপাড়ায় গেলেই রাস্তার পাশে শামুক-ঝিনুকের খোলস পুড়ানোর বড় বড় মাটির চুলার দেখা মিলবে। এসব চুলাতে কেউ শামুক-ঝিনুকের খোলস ঢালছেন তো আবার কেউ বাড়ির মধ্যে পুড়ানো শামুক-ঝিনুকের ভষ্মিভুতগুলোকে প্রক্রিয়া করছে চুন তৈরির জন্য। 

চুনিয়াপাড়ার সুবাসী বালা জানায়, ক্রয় করে আনা শামুক-ঝিনুকের খোসা বাছাই করে নিতে হয়। বাছাইয়ের পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হয় শামুকগুলো। সেগুলো রোদে শুকিয়ে বাড়ির বাইরে মাটি তৈরির বড় চুলার উপর রক্ষিত জ্বালানী খড়ির উপর রাখেন। পরে রাতে চুলায় দেওয়া খড়িতে আগুন দিয়ে শামুকগুলো পোড়ানো হয়। পোড়া শামুক-ঝিনুক চালুনি দিয়ে বেছে, পানি মিশিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় চুন। সেই চুন পাত্রে ভর্তি করে স্বামী বিশু চন্দ্র এবং ছেলে নিখিল চন্দ্র বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন।

সজিব চন্দ্র ও সেন্ধু বালা জানান, এ অঞ্চলের বিভিন্ন নদী-নালা থেকে এক শ্রেণীর মানুষ শামুক সংগ্রহ করে থাকে। তাদের কাছ থেকে আমরা ওই শামুক-ঝিনুক ক্রয় করি। আগের তুলনায় দাম বেড়েছে। শামুক-ঝিনুকের খোলস ১৪/১৫ টাকা কেজী দরে প্রতি মণ ৫শ' থেকে ৬শ' টাকা পড়ে। জ্বালানী খড়িসহ প্রতি কেজী চুনের উৎপাদন খরচ হয় ২৫ টাকা এবং বিক্রি করা হয় ৩০ টাকা দরে। 

নিখিল চন্দ্র জানান, চুন তৈরিতে কষ্ট থাকলেও লাভও আছে। তবে স্বল্প পুঁজিতে হুমকির মুখে পড়েছে চুনিয়াদের পূর্ব পুরুষের এ পেশা। তাই চুন তৈরির পেশায় জড়িত সবাইকে সরকারের পক্ষ থেকে সহজ শর্তে ঋণ দিলে উপকৃত হতো সবাই।


বিডি প্রতিদিন/২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর