২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৯:০১
চারমাসেও আসেনি পর্যটক:

মুখ থুবড়ে পড়েছে রাঙামাটি পর্যটন শিল্প

ফাতেমা জান্নাত মুমু,রাঙামাটি:

মুখ থুবড়ে পড়েছে রাঙামাটি পর্যটন শিল্প

মুখ থুবড়ে পড়েছে রাঙামাটি পর্যটন শিল্প ব্যবসা। প্রতি বছর এ মৌসুমে রাঙামাটিতে হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম হলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। এখন রাঙামাটির পর্যটন স্পটগুলোতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের বড়ই অভাব। বিশেষ করে পাহাড়ে ধসের পর পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে। 

অন্যদিকে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে তলিয়ে গেছে রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সে আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতুটিও। রাঙামাটির পাহাড়ে বিভিন্ন পর্যটন স্পট থাকলেও তা এখন বিরান। টানা চারমাস ধরে একেবারে শূন্য রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স, ডিসি বাংলো, পলওয়েল লাভপয়েন্ট ও সুখী নীলগঞ্জসহ বিভিন্ন স্পট। মাঝে মাঝে স্থানীয় কিছুসংখ্যক তরুণ-তরুণী ও শিশু-কিশোরকে চোখে পড়লেও নেই কোন বাইরের পর্যটক। তাই কর্মহীন অলস সময় কাটছে পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িতদের। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটির সবুজ পাহাড়ের নান্দনিক সৌন্দর্য আর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাহাড়ি ঝর্ণা যে কাউকে মুগ্ধ করে। তাই ঈদ, পূজা কিংবা সব মৌসুমে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে থাকতো উপচেপড়া ভিড়। পর্যটকের আনাগোনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে পাহাড়ে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। তার মধ্যে- আনন্দ ও মনোরঞ্জন জোগানোর নৈসর্গিক আবেশ ও দর্শনীয় স্থান হচ্ছে-ডিসি বাংলো, পেদাটিংটিং, সুবলং ঝর্ণা ও পর্যটন স্পট, টুকটুক ইকো ভিলেজ, সুখী নীলগঞ্জ, উপজাতীয় জাদুঘর, রাজবন বিহার, চাকমা রাজার বাড়ি, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফের স্মৃতিসৌধ, কাপ্তাই-আসামবস্তি সড়ক উল্লেখযোগ্য। 

তাই এ পর্যটন হয়ে উঠেছে পার্বত্যাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত। আধুনিক হোটেল-মোটেলের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষও পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসায় জড়িয়েছে। পর্যটক আসলেই প্রাণ পায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কিন্তু একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব আশাই ভেস্তে দিয়েছে। আর যারা আসছে তারাও মনক্ষুন্ন হয়ে ফিরে যাচ্ছে। পাহাড় ধসের দীর্ঘ দিন পর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাকি হলেও, স্বাভাকি হয়নি পর্যটন ব্যবসা।

রাঙামাটি পর্যটন নৌযান ঘাটের ম্যানেজার মো. রমজান আলী জানান, দীর্ঘ দিন ধরে রাঙামাটি শহর পর্যটক শূন্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ঘুড়ে দাড়াতে পারিনি আমরা। গত চার মাসে ১০ থেকে ১২লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। কারণ পর্যটক না আসলে কোন ব্যবসাই জমেনা। প্রায় ১০০ জনের অধিক বোর্ট মালিক ও তাদের শ্রমিকরা বেকার বসে আছে।

অন্যদিকে পাহাড়ে বয়ছে পর্যটন মৌসুমের আমেজ। পাহাড়ের বুক ছিড়ে নীল আকাশে ভাসছে সাদা মেঘের ভেলা । চারপাশে পাখ-পাখালির নির্মল আনন্দ আর অনাবিল উচ্ছ্বাস।

প্রকৃতিতে যেন শান্ত, সিগ্ধ আর কোমলতার রূপ নিয়েছে। এ প্রকৃতির টান আবারও আকষর্ণ করবে পর্যটকদের।  দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসবে হাজার হাজার  পর্যটক এমনটা প্রত্যাশা রাঙামাটি কর্মপ্লেক্সের এ কর্মকর্তার।

রাঙামাটি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, গত ১৩জুন পাহাড় ধসের ঘটনার পর  রাঙামাটি পর্যটকের আগমন ঘটেনি। তাই আগের তুলনায় পর্যটন রাজস্ব খাতায় আয় কমে গেছে। তবে আসন্ন দুর্গা পুজা ও পর্যটন মৌসুমে হয়তো কিছু সংখ্যক পর্যটক আসতে পারে। 

তাই আগামী ২৯সেপ্টম্বর থেকে ০১ আক্টোবর পর্যন্ত পর্যটন মোটেলে আগ্রিম বুকিং রয়েছে। যদি এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে তাহলে সবাই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে। তাছাড়া শীত মৌসুমের শুরুতে দেশি-বিদেশি অসংখ্য পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে মনে করেন তিনি।

বিডিপ্রতিদিন/ ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭/ ইমরান জাহান

সর্বশেষ খবর