২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৬:১৪

নৈশ প্রহরী নিয়োগে বাণিজ্যের অভিযোগ, ভুয়া সনদে চাকরি

শরীয়তপুর প্রতিনিধি:

নৈশ প্রহরী নিয়োগে বাণিজ্যের অভিযোগ, ভুয়া সনদে চাকরি

শরীয়তপুর সদর উপজেলায় দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়েমের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোটা অংকের ‘নিয়োগ বানিজ্যে’র অভিযোগ উঠেছে। একটি প্রভাবশালী চক্র ভুয়া সনদের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। নিয়োগপ্রাপ্তদের অধিকাংশই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি না পেরিয়ে অষ্টম শ্রেণি পাশ বনে গেছেন। 

কেউ কেউ প্রকৃত বয়স আড়াল করতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাদ দিয়ে জন্ম নিবন্ধনের আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন নিয়োগ বঞ্চিতরা। ইতোমধ্যে নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে নিয়োগ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল মানববন্ধন কর্মসূচি এবং জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে শরীয়তপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যলয় সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার ২৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী’ নিয়োগের জন্য আবেদন চেয়ে গত ২ আগষ্ট স্ব স্ব বিদ্যালয় এলাকায় গণ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। আবেদন যাচাই বাঁছাই শেষে ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১১ তারিখে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নামের তালিকা প্রকাশ করে স্ব স্ব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে নিয়োগ বিধির শর্ত অনুযায়ী নিয়োগপত্র জারির অনুরোধ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: জিয়াউর রহমান। 

কিন্তু এ নিয়োগ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নিয়োগ বঞ্চিত ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধার কোটা অনুসরণ না করাসহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে শরীয়তপুর সদর সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ৩ নিয়োগ বঞ্চিত প্রার্থী। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রার্থীর বড় ভাই জানান, আমার ছোট ভাই কলেজে অনার্সে পড়ে। ৩৩নং ছোট বিনোদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি পদে সে আবেদন করেছিল। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আমাকে ডেকে বলেছিল ছোট ভাই চাকরি করবে কিনা। যদি করে ৪ লক্ষ টাকার কমে নিয়োগ হবে না। আর সে না করলে, অন্য লোক নিয়ে নেব। পরে আমি টাকা দিয়ে চাকরি নেব না বলে তাকে জানিয়ে দেয়ার পর রিকন খান নামের এক ছেলের চাকরি হয়েছে। 

এদিকে ওই পদে চাকরি হওয়া এমন এক ব্যক্তির বোন মুঠোফোনে বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতার মাধ্যমে আমরা ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছি। আমার ভাইয়ের চাকরিটা খুব দরকার ছিল। চাকরি হয়েছে। এখন মামলার কারণে আতংকের মধ্যে আছি। চাকরিটা না পেলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিয়োগ বোর্ডের এক সদস্য জানান, আমার স্কুলে যে ছেলের নিয়োগ হয়েছে আমি তাকে ২ নাম্বার দিয়েছি। নাম্বারে কী চাকরি হয়। চাকরি হয় টাকায়। নিয়োগ বোর্ড ফর্মালিটি। চার লক্ষ, পাঁচ লক্ষ টাকায় চতুর্থী/পঞ্চম শ্রেণি পাশ করা ব্যক্তিদের চাকরি হয়েছে। আমাদের কিছুই করার ছিলনা। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, সদর উপজেলার দক্ষিণ ভাষানচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় মো. রোকন হাওলাদারকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ রোকন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পার না হয়েই অষ্টম শ্রেণি পাশ বনে গেছেন। আবেদনের সাথে রোকন একই উপজেলার তুলাতলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৭ সালে অষ্টম শ্রেণী পাসের একটি সনদ দাখিল করেছেন। সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে অষ্টম শ্রেণির রেজিষ্টার ও হাজিরা খাতায় ৩৫ জন ছত্রের নামের তালিকার মধ্যে তার নাম পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামিম মাহমুদ বলেন, এই বিদ্যালয়ে রোকন পড়াশোনা করেছে কিনা আমার জানা নেই। আমি ২০১৬ সনে যোগদান করেছি। তবে এই বিদ্যালয়ে যারা বিগত দিনে লেখাপড়া করেছে তাদের রেজিষ্টারে রোকনের নাম নাই। 

৫২ নং পশ্চিম সোনামুখি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছে স্থানীয় নান্নু গাজীর ছেলে দিদার হোসেন। প্রকৃত বয়স আড়াল করতে জাতীয় পরিচয় পত্রের পরিবর্তে নতুন জন্ম নিবন্ধন দিয়ে আবেদন করেছেন তিনি। আবেদন পত্রের সাথে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর আম্মানিয়া দাখিল মাদ্রাসা নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণি পাশের সনদ প্রদান করেছেন তিনি। কিন্তু প্রতিবেদক কোন প্রতিষ্ঠান থেকে অষ্টম শ্রেণি পাশ করেছে প্রশ্ন করলে প্রতিষ্ঠানের নাম বলতে পারেনি দিদার। এমনকি প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষকের নামও সে বলতে পারেনি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি না পেরিয়ে অষ্টম শ্রেণি পাশ বনে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

শরীয়তপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধার সংসদ সন্তান কমান্ড সভাপতি কবির হোসেন বলেন, নিয়োগ অবৈধ। এ নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় নিয়োগে প্রদানের দাবিতে আমরা বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছি। আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউর রহমান জানান, নিয়োগের বিষয়ে আদালতে মামলা হয়েছে। যদি কোন বিদ্যালয়ে নিয়োগে সনদ জালিয়াতিসহ কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিডি প্রতিদিন/২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর