১৭ অক্টোবর, ২০১৭ ১৭:৪০

কুয়েতে অগ্নিকাণ্ডে ৫ জনের মৃত্যুতে মৌলভীবাজারে শোকের মাতম

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার:

কুয়েতে অগ্নিকাণ্ডে ৫ জনের মৃত্যুতে মৌলভীবাজারে শোকের মাতম

কুয়েতের সালমিয়াতে একটি পাঁচতলা ভবনে আগুনে একই পরিবারের শিশুসহ  ৫ বাংলাদেশি নিহতের ঘটনায় মৌলভীবাজারে ওই পরিবারে শোকের মাতম চলছে। শোকাহত পরিবারকে শান্তনা দেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন স্বজনরা। 

নিহতরা হলেন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের কান্দিগাও  গ্রামের জুনেদ মিয়ার স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৩৫), মেয়ে জামিলা আকতার (১৫), নাবিলা আকতার (৯) এবং ছেলে ইমাদ আহমদ (১২) ও ফাহাদ আহমদ (৫)। 

জুনেদ মিয়ার মামা খিজির আহমদ জানান, প্রায় ২৫ বছর ধরে ভাগনা কুয়েতে থাকেন। ২০০০ সালে দেশে এসে বিয়ে করে পরিবার পরিজন নিয়ে কুয়েত সিটির সালমিয়া এলাকায় বসবাস করছেন জুনেদ। ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ সময় আনুমানিক ৫টার দিকে পাঁচতলা ভবনের ৩য় তলায় এসির কম্প্রেসার বিস্ফোসরণে আগুনের সূত্রপাত হয়। ৩য় তলার মানুষজন আগুন থেকে রক্ষা পেলেও আগুনের ধোয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মর্মান্তিকভাবে মারা যান জুনেদ মিয়ার স্ত্রীসহ সন্তানরা। শিশু সন্তানদের নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করলে ৩য় তলার সিড়িতে  ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান তারা। অগ্নিকান্ডের সময় জুনেদ বাহিরে ছিলেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে  ফেলেন। 

বর্তমানে চিকিৎসা নেয়ার পর তিনি সুস্থ আছেন। আর নিহতদের লাশ কুয়েতের মোবারক আল কাবির হসপিটালে রাখা হয়েছে। জুনেদের অপর দুই ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই জুবের মিয়া সপরিবারে আমেরিকা ও অপর ভাই সোয়েব মিয়া সপরিবারে লন্ডন বসবাস করেন। গ্রামের বাড়িতে জুনেদের বৃদ্ধ মা ছাড়া আর কেউ নেই। তাদের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে দেশের বাড়িতে অবস্থানরত জুনেদের মা ও বোন  কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। 

জুনেদের মা মরিয়ম বিবি  (৭৫) কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ছেলের সুখের চিন্তা করে বউকে কুয়েতে নিয়ে যেতে আমি জুনেদকে রাজি করি। ডিসেম্বর মাসে স্কুল বন্ধ হলে নাতি-নাতনি দেশে আসার কথা ছিল, কিন্তু তাদের আর আসার হলো না। তিনি তাদেরকে শেষ দেখার জন্য দ্রুত দেশে লাশ আনার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানিয়েছে। 

নিহত রোকেয়া বেগমের ভাই জাকারিয়া বলেন, সে আমাদের পবিরারের সবার ছোট। বাবা মাসহ আমাদের সবাইকে রেখে এভাবে চলে যাবে তা কোনদিন ভাবতেই পারিনি। গত বছরে বোন সবাইকে নিয়ে দেশে এসেছিল। দেশে আসার জন্য সব সময় আকুতি ছিলো। তার আর আসা হলো না বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। 

বাংলাদেশে জুনেদ আহমদের খালাতো ভাই স্থানীয় ইউপি সদস্য সুন্দর আলী জানান, পরিবারের লোকজনের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী দেশে লাশ আনার জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে। কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান ও নির্বাহী কর্মকর্তা জুনেদের পরিবারকে শান্ত দেওয়ার জন্য ছুটে যান জুনেদ মিয়ার বাড়িতে। এসময়  নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, আমরা খোঁজ নিচ্ছি। পরবর্তীতে তাদের পারিবারিক সিদ্ধান্ত কি আসে, সে অনুযায়ী আমরা কাজ করবো। জুনেদ মিয়ার নিহত চার শিশু সন্তান কুয়েতের আল আমাল ইন্ডিয়ান স্কুলে লেখা পড়া করতো । 


বিডি প্রতিদিন/১৭ অক্টোবর ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর