১৭ অক্টোবর, ২০১৭ ২০:১৩

টাঙ্গাইলে মডেল টেস্ট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের

অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:

টাঙ্গাইলে মডেল টেস্ট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের

আগামী ১ নভেম্বর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বোর্ড পরীক্ষার সময়সূচীর এক সপ্তাহ হাতে রেখেই গত ১১ অক্টোবর থেকে বাসাইলের সকল স্কুল-মাদরাসায় এক যোগে নেয়া হচ্ছে মডেল টেস্ট পরীক্ষা। যা শেষ হবে আগামী ২৩ অক্টোবর। অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, পরীক্ষার নাম করে মাসিক বেতন ও অতিরিক্ত পরীক্ষার ফি আদায় করছেন শিক্ষকরা। শুধু তাই নয় এ পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীদের বাধ্যও করা হচ্ছে। 

মডেল টেস্ট পরীক্ষার ফি ধরা হয়েছে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা। পরীক্ষার ফি’র সাথে অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বেরের মাসিক বেতনও নেয়া হচ্ছে। মডেল টেস্ট পরীক্ষার খাতা দেখার আগেই বোর্ড পরীক্ষা শুরু হবে। এ পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের কোন কাজেই আসবে না বলে অভিভাবকদের অভিযোগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাশিল কেবিএন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক জেএসসি পরীক্ষার্থী জানায়, বোর্ড পরীক্ষার মাত্র সাত দিন হাতে রেখে এ মডেল টেস্ট পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এটা শুধু শুধু আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। পরীক্ষার ফি হিসেবে নেওয়া হয়েছে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা করে। মডেল টেস্ট পরীক্ষায় অংশ না নিলে প্রবেশপত্র দেওয়া হবে না এমনও ভয় দেখিয়েছেন শিক্ষকরা। তাই নিরুপায় হয়ে অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরের বেতনও পরিধোশ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, গত ১১ অক্টোবর বাংলা প্রথম পত্র দিয়ে শুরু হয়েছে মডেল টেস্ট পরীক্ষা। শেষ হবে আগামী ২৩ অক্টোবর। শিক্ষার্থীরা ১১ তারিখে বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষা দিয়েছে তারা আর ২৩ তারিখের আগে বাংলা বইয়ে হাতও দিতে পারবে না। মাত্র এক সপ্তাহ পরেই বোর্ড পরীক্ষা। এই মডেল টেস্ট পরীক্ষা বোর্ড পরীক্ষার মাত্র এক সপ্তাহ আগে নেয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। এতে করে শিক্ষার্থীদের চরম ক্ষতি হচ্ছে। 

উপজেলার কাশিল কেবিএন বহমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব খান জানান, পরীক্ষার ফি ধরা হয়েছে ২শ’ ৫০ টাকা করে। সমিতির নিয়ম অনুযায়ী মডেল টেস্ট পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।

লাইলী বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শাহ আলম জানান, বোর্ড পরীক্ষার আগে প্রস্তুতিমূলক মডেল টেস্ট পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের উপকারে আসবে। বোর্ড পরীক্ষার মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ মডেল টেস্ট পরীক্ষা নেয়াটা ঠিক হচ্ছে না। এতে শিক্ষার্থীদের বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতি ব্যহত হচ্ছে। তবে সেপ্টেম্বরে শেষ করা হলে শিক্ষার্থীদের কোন ক্ষতি হত না।  

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মীর মনিরুজ্জামান বলেন, গতমাসে পরীক্ষা নেয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু স্কুলগুলোতে বন্যার পানি থাকার কারণে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। মডেল টেস্ট পরীক্ষার জন্য কোন শিক্ষার্থীকে বাধ্য করা যাবে না। সমিতি থেকে এ পরীক্ষার জন্য কোন ফি নির্ধারণ করা হয়নি। 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাবুল হাসান জানান, মডেল টেস্ট পরীক্ষা নেয়ার জন্য সরকারিভাবে কোন নির্দেশনা নেই। শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষকরা এ পরীক্ষা নিচ্ছেন। তবে কোন শিক্ষার্থীদের মডেল টেস্ট পরীক্ষার জন্য বাধ্য করা যাবে না। এছাড়া এমপিভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে কোন মাসিক বেতন ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফি ধরা নেই। এটা বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক নির্ধারণ করা হয়। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না বলেন, জেএসসি পরীক্ষার্থীদের মডেল টেস্ট পরীক্ষার সময়সূচি সম্পর্কে আমি অবহিত নই। বোর্ড পরীক্ষার মাত্র এক সপ্তাহ হাতে রেখে কিভাবে শিক্ষকরা মডেল টেস্ট পরীক্ষার তারিখ করলেন সে ব্যাপারে আগামী মিটিংএ আলোচনা করা হবে। 


বিডি প্রতিদিন/১৭ অক্টোবর ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর