২২ অক্টোবর, ২০১৭ ১৭:৩৩

পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, দুর্ভোগ চরমে

ফাতেমা জান্নাত মুমু,রাঙামাটি:

পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, দুর্ভোগ চরমে

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের পানি। প্লাবিত হয়েছে রাঙামাটি জেলার নিম্নাঞ্চল। আর তাই পানির চাপ কমাতে খুঁলে দেওয়া হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় ১৬টি গেট। এ পানি ছাড়া হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। 

পাহাড়ি ঢল আর বন্যায় ইতোমধ্যে ডুবে গেছে রাঙামাটির ১০টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব উপজেলার প্রায় ১০ হাজারের অধিক পরিবার। একই সাথে ঘোলা, ময়লার কারণে দূষিত হয়েছে কাপ্তাই হ্রদের পানি। তাই এ পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা উপড়ে পড়া গাছ-গাছালি, লতাগুল্ম ও বিস্তর কচুরিপানা কাপ্তাই হ্রদজুড়ে সৃষ্টি করেছে ভাসমান জঞ্জালও।

জানা গেছে,  রাঙামাটি জেলা বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি উপজেলা ও কালাপাকুজ্জা, গুলশাখালী, বগাচতর, গাথাছড়া, ভাসান্যাদম, মাইনীমুখ, বালুখালী, আদারক ছড়া ইউনিয়ন ও সদর এলাকার শান্তিনগর, কাঠালতলী, সমতা ঘাট ও ফিসারি ঘাট, রিজার্ভ বাজার, পুরানবস্তী, পৌরকলনো এলাকায় বসবাসরত পরিবারগুলো পানিবন্দী হয়ে মানবেতর দিন কাটছে। যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়ছে শিক্ষার্থীরাও। হ্রদ তীরবর্তী গ্রামের রাস্তা গো-চারণ ভূমি, শুটকি মাছ শুকানোর স্থানসহ মানুষের বাড়ি-ঘর ডুবে গেছে। ওই অঞ্চলের ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্ছে অনেকেই। আবার অনেকে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এ  পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকদের ফসলি জমি। বোরো ধান, কাকরল, শষা ও কাঁচা মরিচের বাগানও। 

রাঙামাটি শহর এলাকাতেও হ্রদের পানি উত্তোলন করে সরবরাহ দেয়া হয়। কিন্তু পাহাড়ি ঢলে ঘোলা, ময়লাযুক্ত ও দূষিত হয়ে এসব পানির উৎস ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমনকি কাদাযুক্ত পানি ভূ-গর্ভে প্রবেশ করায় রিংওয়েল এবং নলকূপগুলো থেকেও ঘোলা পানি বেরিয়ে আসছে। দূষিত পানি কারণে বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটের পীড়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। এসব রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

রাঙামাটি কাঠালতলী এলাকার পনিবন্দী আমিনুল হক জানান, দীর্ঘ দিন ধরে আমরা পানি বন্দী অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছি। কিন্তু কেউ আমাদের খবর রাখে না। সরকারিভাবে সহায়তাও পাই না। এলাকায় আমি ছাড়া আরও বেশ কয়েকটা পরিবারের একই দশা। এমনভাবে আর কতদিন?

এব্যাপারে রাঙামাটি পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. জামাল উদ্দীন জানান, রাঙামাটির পৌরসভার হ্রদ তীরর্বতী এলাকাগুলো এখনও পানিবন্দী অবস্থায় আছে। ত্রাণ জটিলতার কারণে তাদের তালিকা তৈরি করা হয়নি। খুলা হয়নি তেমন কোন আশ্রয় কেন্দ্র। তবে ত্রাণ বিতরণ সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হলে সুবিধা বঞ্চিত পানিবন্দী পরিবারগুলোর তালিকা প্রনয়ণ করা হবে।

অন্যদিকে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে পানি ধারণ ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আবদুর রহমান। তিনি বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে ভারী  বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে রাঙামাটিতে। নামছে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলও। তাই হ্রদের পানি আগের তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে। এ হ্রদে পানি  ধারণ ক্ষমতা ১০৯ ফুট মীন সী লেভেল (এমএসএল) পর্যন্ত। বর্তমানে হ্রদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। তাই হ্রদে পানির চাপ কমাতে পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় ১৬টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। 
অভিযোগ উঠেছে প্রতিবছর ভারী বৃষ্টিপাতারে কারণে রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের নিম্নাঞ্চল হ্রদের পানিতে তলিয়ে যায়। তার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নত করা হয়েছে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিং। দীর্ঘ বছর ধরে হ্রদের ড্রেজিং না হওয়ার কারণে হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। তাই বর্ষা মৌসূমে হ্রদ তীরবর্তী বসবাসরত পরিবারগুলো  সমস্যায় পরে। তাই এ সমস্যার উত্তরণের জন্য হ্রদের ড্রেজিংয়ের দাবী জানান ভোক্তভোগীরা।

বিডিপ্রতিদিন/ ২২ অক্টোবর,২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর