২৪ অক্টোবর, ২০১৭ ১৬:৩৮

আড়াই বছরেও কাজ শুরু হয়নি কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথে!

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার:

আড়াই বছরেও কাজ শুরু হয়নি কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথে!

দীর্ঘ ১৫ বছর বন্ধ থাকার পর একনেকের অনুমোদনের আড়াই বছর পার হলেও কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথের কাজ শুরু করেনি কর্তৃপক্ষ। ৬৭৮ কোটি টাকার সংশোধিত প্রকল্পের মাধ্যমে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনরায় চালুর জন্য ২০১৫ সালের ২৬ মে সংস্কার কাজের অনুমোদন দেয় একনেক। এতে মোট ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১২২ কোটি টাকা ও অবশিষ্ট ৫৫৬ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেবে ভারত সরকার। ২০০২ সালের ৭ জুলাই রেল কর্তৃপক্ষ কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়ার পর দীর্ঘ ১৫ বছরেও চালু হয়নি রেলপথটি! 

রেলওয়ে সূত্রমতে, একনেকে অনুমোদিত ওই প্রকল্পের আওতাধীন কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথে ৪২ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার রেললাইন পুনর্বাসন। এর মধ্যে ৩৯ দশমিক ৪ কিলোমিটার রুট-লাইন এবং ৩ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার লুপ-লাইন রয়েছে। ৬টি স্টেশন ভবন পুনঃনির্মাণ, ২০টি সেতু মেরামত অথবা পুনঃনির্মাণ এবং ১৩টি সেতু নির্মাণ। এছাড়াও রেলক্রসিং নির্মাণ, প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ, ৪টি বি ক্লাস স্টেশন, নন-ইন্টারলকড কালার লাইট সিগন্যাল সিস্টেম এবং আধুনিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্র ও যন্ত্রাংশগুলোও আধুনিকায়ন করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে এসকাপ কর্তৃক ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। বাংলদেশ সরকার ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক ও আঞ্চলিক নেটওয়ার্কে সঙ্গে যুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনাও নিয়েছিলো সরকার। 

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত বিদ্যমান রেললাইন সংস্কার প্রকল্প কাজের অনুমোদন হয় ২০১৫ সালের ২৬ মে। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিগত ২৬ মে ২০১৫ সালে পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ভারতীয় ঋণ সহায়তায় দুটি সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। ওই সভায় কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ সংস্কারসহ ৫৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ মোট ৯টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পগুলোর অর্থায়নে সরকার দেবে ২২৭০ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য থেকে আসবে ৩৫৬৭ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ৩১ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হবে। ৯ প্রকল্পের মধ্যে নতুন হচ্ছে ৬টি ও সংশোধিত ৩টি। 

২০১৬ সালের ২৭ জুন সোমবার কুলাউড়ায় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার  হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা ও ভারতীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের এডিশনাল সেক্রেটারী ও উপদেষ্টা সুমিত জেরাত কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল লাইন পরিদর্শন করেন। এসময় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বালাজি রেল রোড সিস্টেম লিমিটেডের হেড অব কন্সালটেন্ট তপন ঘোষ ও এই প্রকল্পের কন্সালটেন্ট বিনোদ শর্মা এবং প্রকল্প পরিচালক রমজান আলীর কাছে সংস্কার কাজের বিলম্ব হওয়ার কারণ জানতে চান তারা। বালাজি রেল রোড সিস্টেম লিমিটেডের হেড অব কন্সালটেন্ট তপন ঘোষ ২০১৬ সালের ২৬ মে জানান, বন্যার কারণে প্রকল্পের ডিজাইন ও পরিকল্পনার এর কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে ওই বছরের (২০১৬) ডিসেম্বরে ডিজাইন ও পরিকল্পনার কাজ শেষ হবে বলে তিনি জানিয়ে ছিলেন।

এদিকে, একনেকের অনুমোদনের কুলাউড়া, বড়লেখা, জুড়ী ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দশ লক্ষ্যাধিক মানুষ সরকারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত ও অভিন্দন জানিয়ে ব্যাপক আনন্দ মিছিল মিটিং ও স্থাণীয় সংসদ, হুইপকে গণ সংর্বধনা প্রদান করেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই তাদের আনন্দ উল্লাসে স্থবিরতা রুপ নেয়। একনেকে বিল পাস হওয়ার প্রায় আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও বন্ধ রেলপথটি চালুর ব্যাপারে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীরা। অপরদিকে অরক্ষিত এই রেলপথটির ভূসম্পত্তি ও নানা জিনিসপত্রসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ হরিলুট হয়ে যাচ্ছে-এমন অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

এ ব্যপারে সিলেট-আখাউড়া রেলপথের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) এরফানুর রহমান জানান, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথটি সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। প্রকল্পের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।

 উল্লেখ্য, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথে ঘন ঘন ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছিল। কাঠের স্লিপার, সেতুসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ২০০২ সালের ৭ জুলাই তখনকার রেল কর্তৃপক্ষ এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে রেলপথটির সংস্কারসহ ট্রেন চালুর দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে এলেও এ লাইনে আর ট্রেন চালু হয়নি। ওই লাইনে চলাচলকারী এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ‘লাতুর ট্রেন’ চালুর স্বপ্ন দেখে চার উপজেলার প্রায় ১০ লক্ষ্যদিক সাধারণ মানুষ । এ রেললাইনে শাহবাজপুর, মুড়াউল, বড়লেখা, কাঁঠালতলী, দক্ষিণভাগ ও জুড়ী স্টেশন ছিল। ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। ফলে কয়েক হাজার যাত্রী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। আর দীর্ঘদিন থেকে অরক্ষিত থাকায় নষ্ট হচ্ছে রেলওয়ের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। 

 

বিডি প্রতিদিন/২৪ অক্টোবর ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর