১৭ নভেম্বর, ২০১৭ ২০:৩৫

নৌকায় জন্ম, নৌকায় বসবাস আর নৌকায় তাদের মৃত্যু

কলাপাড়া, (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

নৌকায় জন্ম, নৌকায় বসবাস আর নৌকায় তাদের মৃত্যু

সাগর কিংবা নদীর প্রতিটি ঢেউয়ের সাথে ক্ষয়ে যায় উপকূলীয় মানতা সম্প্রদায়ের ছোট-ছোট স্বপ্ন। নৌকায় জন্ম, নৌকায় বসবাস আবার নৌকায়ই তাদের মৃত্যু হয়। নেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ নন্যুতম মৌলিক অধিকার। দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী এইসব মানুষগুলোর কপালে কখনই জোটেনি সরকারী ও বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থার সহায়তা।  

সাগর মেহনা সহ নদ-নদীতে ছোট নৌকায় মাছ ধরে চলে এই মানতা সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকা। সারাদিনের রোজগারে সন্ধ্যায় উনুন জ্বলে নৌকার ছাউনিতে। সর্বহারা কিংবা নিঃস্ব বলে সমাজে পরিচিত হলেও, সমাজ ও সভ্যতা থেকে ছিটকে পড়া এ মানুষগুলো পটুয়াখালীর, কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, গলাচিপা ও বাউফলের বিচ্ছিন্ন এলাকায় এ মানতা জনগোষ্ঠী দীর্ঘ বছর ধরে তারা বসবাস করে আসছে।

মানতা সস্প্রদাদের একাধিক লোকজনদের সাথে আলাপকলে তারা জানায়, নদী বা সাগর মোহনায় বসবাস করায় দক্ষিণাঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সুপার সাইক্লোন সিডরের তান্ডবে এদের প্রায় অর্ধশতাধিক নৌকা ডুবে যায়। সেসময় জীবন বাঁচাতে পারলেও মাছ ধরার জাল এবং বড়শি হারিয়ে অনেকে হয়ে পড়ে নিঃস্ব। 

সিডর পরবর্তী সময়ে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তা, ঘর নির্মাণসহ নানা সুবিধা প্রদান করা হলেও এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে এরা। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা তো দূরের কথা, নেই স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন কিংবা বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। শিক্ষা, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, সমাজ-সভ্যতার আচারের ছোঁয়া লাগেনি এদের গায়ে। রোগ-বালাই সারতে দৌড়ে যায় স্থানীয় কবিরাজ, বৈদ্যের কাছে।
 
তিন সন্তানের জননী রোকেয়া বেগম (৩৫) জানান, নদী ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয়ে পূর্ব পুরুষরা চরমোন্তাজ ইউনিয়নের বুড়াগৌরঙ্গ নদীর কিনারে ঘাটি বাধেন। তখন থেকেই এ নদী তীরেই নৌকায় তাদের বসবাস। বাবা সালাম সরদার ও মা রাহিমা অনেক আগেই মারা গেছেন। স্বামী আলতাফ সরদারকে ছেলে শাকিব, আখিদুল ও নাজিম মাছ ধরতে সহায়তা করে। এতেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তারা। 

ছয় সন্তান নিয়ে ছোট্ট একটি নৌকার ছাউনিতে পারুজান বিবির (৪০) বসবাস। তিনি জানান, অন্যদের মত জাল না থাকায় বড়শি দিয়ে মাছ ধরেন। তাই আয়-রোজগার কম। ফলে সংসার চলে টেনেটুনে। বছরের পর বছর নদী এবং সাগর মোহনায় বসবাসকারী এ জনগোষ্ঠীর অনেকেই এখন ফিরতে চায় স্বাভাবিক জীবনে। 

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন করিমী বলেন, বিভিন্ন এলাকার নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ এ জনগোষ্ঠীর স্থলভাগে ঠিকানা না থাকায় শিশুরা শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

জেলা প্রশাসক ড.মাসুমুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, মৎস্য পেশায় নিয়োজিত এ জনগোষ্ঠীকে স্বাভাবিক জীবনের মূলশ্রোতে ফিরিয়ে আনতে পারলে সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা যাবে।  

    

বিডি প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর