১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১৭:৫৭

সোনার নৌকা নিয়ে ফের বিতর্কে এমপি শরিফ

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ:

সোনার নৌকা নিয়ে ফের বিতর্কে এমপি শরিফ

সোনার নৌকা নিয়ে ফের বিতর্কে জড়ালেন ময়মনসিংহ-২-ফুলপুর আসনের সংসদ সদস্য শরীফ আহম্মেদ। 

গত রবিবার রাতে তারাকান্দা বঙ্গবন্ধু ডিগ্রী কলেজ জাতীয়করণ হওয়ায় ওই কলেজের অধ্যক্ষ তার ছোট ভাই সাজ্জাদ আহম্মেদের কাছ থেকে এ উপহার নেন তিনি। এছাড়াও গোটা অনুষ্ঠানে প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানা গেছে। এরপরপরই দল এবং দলের বাইরে এই এমপিকে নিয়ে সমালোচনার তুমুল ঝড় উঠে। 

এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা ভোটে নির্বাচিত হবার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ তাকে সোনার নৌকা উপহার দিয়ে সংবর্ধনা দেয়। এরপর দেশব্যাপী বিতর্কের ঝড় উঠে। এছাড়াও পৌরসভা নির্বাচনে স্থানীয় নির্বাচন কমিশনারকে হুমকি এবং উপজেলা পরিষদের এক প্রকৌশলীকে পিটিয়ে জখম করে বারবার আলোচনায় আসেন এমপি শরিফ।

জানা যায়, ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত তারাকান্দা বঙ্গবন্ধু ডিগ্রী কলেজটি প্রায় এক বছর আগে জাতীকয়রণ করা হয়। এই উপলক্ষে কলেজ কর্তৃপক্ষ গত রবিবার কলেজ মাঠে বিশাল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল এমপি শরীফ আহম্মেদকে সোনার নৌকায় সংবর্ধনা এবং সংগীত শিল্পী মমতাজ বেগমের সংগীত পরিবেশনা। 

মুঠোফোনে জানতে চাইলে তারাকান্দা বঙ্গবন্ধু ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সাজ্জাদ আহম্মেদ বলেন, সোনার নৌকা নয় দেয়া হয়েছে পিতলের নৌকা। গোটা অনুষ্ঠানে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা।

তবে ওই কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আজিজুন নাহার লাকী বলেন, প্রথমে সোনার নৌকা দিয়ে এমপিকে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও সাংবাদিক পরিচয় পাবার পর বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।  তবে একটু পর আবার ফোন দিয়ে তিনি জানান, নৌকাটি সোনার ছিল কিন্তু ওজনটি জানা নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় আওয়ামীলী নেতা এবং কলেজের একজন প্রভাষক জানান, এমপি মহোদয়কে দুই ভরি ওজনের স্বর্ণের নৌকায় সংবর্ধনাসহ অনুষ্ঠানে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে।  আর এমপি সাহেব তার ছোট ভাই সাজ্জাদ আহম্মেদ কলেজের অধ্যক্ষ এর চাইতে আরও বড় অনুষ্ঠান করলেও কেউ কিছু বলার সাহস রাখেনা। 

এদিকে এ বিষয়ে এমপি শরিফের বক্তব্য নিতে চাইলে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ক্ষুদে বার্তা দেয়ার ঘন্টাখানেক পরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে অন্য একটি গণমাধ্যমে সংসদ সদস্যের দাবি, তার মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এই সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। 

সাবেক আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হায়েতুর রহমান খান বেলাল বলেন, কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। শেখ হাসিনা নিজের আরাম আয়েশ ত্যাগ করে যেখানে মানুষের সেবায় কাজ করছেন; সেখানে এই সংবর্ধনার কোন প্রয়োজন ছিল না। কলেজ জাতীয়করণ হয়েছে আনন্দের বিষয় দাবি করে তিনি বলেন, বেশি আনন্দ এই সময়ে দলের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। 

জানা যায়, ১৯৭৪ সালের আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং এমপিরা কোনো উপহার পেলে ওই উপহারের প্রকৃতি নির্দেশ করে উহার মূল্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিতে হয়।  আর উপহারের মূল্য ৩০ হাজার টাকার বেশি হলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমপি শরিফ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সোনার নৌকা জমা দেননি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে এমপির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে খোদ এমপির বক্তব্য চলাকালে হট্টগোলেরও সৃষ্টি হয়। পরে হঠাৎ করেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। আনিছুর রহমান নামের একজন জানান, মমতাজের গান শোনার জন্য আমরা বিকেল তিনটা থেকে অপেক্ষা করছি। সেই মমতাজের গান শুরু হয় রাত ৯টায়। মাত্র পাঁচটি গান শোনার পরই এমপি বক্তব্য দিতে গেলে জুতা নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। 

বিডি প্রতিদিন/ ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর