শিরোনাম
২২ জানুয়ারি, ২০১৮ ১৬:১৩

ঐতিহাসিক আশুড়ার বিলে বোরো ধান চাষ

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

ঐতিহাসিক আশুড়ার বিলে বোরো ধান চাষ

উত্তরবঙ্গের বৃহৎ দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণক্ষেত্র এক সময়ের গভীর ঐতিহাসিক আশুড়ার বিলের শুকনা এলাকায় বোরো ধান চাষে মাঠে নেমেছেন কৃষকেরা। দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় এ ঐতিহাসিক আশুড়ার বিলে এখন শুকনো মৌসুমে ধান চাষ আর বর্ষাকালে মাছ চাষ হয়। 

অথচ তদারকি আর মাছ সংরক্ষণে ব্যবস্থা গ্রহণসহ খনন করলে এই ঐতিহাসিক আশুড়া বিলে দেশীয় মাছ যেমন সংরক্ষণ করা যাবে তেমনি উত্তরবঙ্গে দেশীয় মাছের চাহিদা অনেকটা পুরণ সম্ভব হবে এবং কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন মৎস্য কর্মকর্তা। তার দাবি, এ বিল থেকে মৌসুমে কমপক্ষে ১২০ মেট্রিক টন মাছ পাওয়া সম্ভব।

খননসহ বিলের পূর্ব প্রান্তে পানি ধারনের জন্য একটি স্লুইজ গেট বা রাবার ড্যাম স্থাপন করা গেলে শুস্ক মৌসুমে পানি কমবে না বলে স্থানীয়রা জানায়। বর্ষা মৌসুমে এ বিলে লাল, সাদা শাপলা ফুল বিলের সৌন্দর্য দেখে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভ্রমণ পিপাষুরা মুগ্ধ হয়। 
অপরদিকে, কৃষকেরা জানায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বোরো মৌসুমে বিঘা প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মণ ধান উৎপাদন করতে পারবেন তারা। 

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে উত্তর পশ্চিম দিকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে সরকার ঘোষিত জাতীয় উদ্যান শালবনের কোল ঘেষে এ বিলের অবস্থান। 

আশুড়ার বিল নিয়ে রয়েছে পৌরণিক বিচিত্র কাহিনী। অতি প্রাচীনকালে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে লড়াই চলছিল আধিপত্য বিস্তার নিয়ে। সেখানে দেবতাদের নিকট অসুরেরা পরাজিত হয়েছিল। দেবতাদের খঞ্জরের আঘাতে অসুরদের ঝরা রক্ত তাদেরই পায়ে দেবে যাওয়া গর্তে ভরে গিয়েছিল বলে অসুরের বা আশুড়ার বিল নামকরণ করা হয়। 

অনেকে বলেন, ওই বিলের চারপাশ থেকে ৮০টি দ্বার বা নালা চতুর্দিকে ছড়িয়ে গেছে বলে আশি নালা নামের উৎপত্তি হয়েছে। বিশাল ওই বিলের গভীরতা ও কাদার তলানী এবং চারপাশ বেষ্টিত শালবন এক সময় নানা কিংবদন্তির জন্ম দেয়। বিলের মাঝে কতিপয় স্থানের নাম আছে যেগুলোকে কেন্দ্র করে আরো কিছু চমৎকার কাহিনীও রয়েছে। যেমন- পাতিলদহ, বুড়িদহ, কাজলাদহ, পীরদহ, মুনির আইল ও মুনির থান ইত্যাদি। পৌরণিক কাহিনী যায় থাক ঐতিহাসিক আশুড়ার বিলে মৎস্য সম্পদের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। 

বিলের বোয়াল ও পাবদা মাছ খুব সুস্বাদু। টেংরা, কই, মাগুর, পুঁটি, চিংড়ি, আইড়, শোল, গজার, বাইমসহ নানা প্রজাতির মাছ এখনো পাওয়া যায় বলে স্থানীয়রা জানান। উত্তরবঙ্গের বৃহৎ এ বিলটি লম্বায় ৫ কিলোমিটার। এ বিলের সূফলভোগী হিসাবে রয়েছেন সমাজ ভিত্তিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা (সিবিএফএম) সমিতির সদস্যগণ।

নবাবগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামিম জানান, শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকার কারণে বোরো ধান চাষ করে কৃষকেরা। আশুড়ার বিলের নবাবগঞ্জ ও বিরামপুরের এলাকা নিয়ে আয়তন ৩১৯ হেক্টর। এর মধ্যে নবাবগঞ্জে ২৫১ হেক্টর অবস্থিত। এ বিলটিতে হারিয়ে যাওয়া অনেক প্রজাতির মাছ এখনও ধরা পড়ে। বিলের বোয়াল ও পাবদা মাছ খুব স্বুসাদু। আশুড়ার বিলের বুড়িদহ নামক স্থানে ২০০৬ সালে ০.৫ হেক্টর জমিতে একটি অভয়াশ্রম ও কাজলাদহ নামক স্থানে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ০.৫ হেক্টর জমিতে আরেকটি অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়েছে। তবে খনন করে পানি ধারণ করা হলে সারা বছরই মাছ চাষসহ দেশীয় প্রজাতির মাছের চাহিদা পুরণ করতে পারবে। 

আশুড়ার বিলটি খননের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নবাবগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামিম জানান, কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তা ছাড়া এ ব্যাপারে দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. শিবলী সাদিক বিলটিতে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সংস্কারসহ খনন করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন বলেও তিনি জানান।  

বিডি-প্রতিদিন/২২ জানুয়ারি, ২০১৮/মাহবুব

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর