২৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ২১:০৩

সুন্দরবনে তিন বছর ধরে চলবে 'স্মার্ট পেট্রলিং'

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট :

সুন্দরবনে তিন বছর ধরে চলবে 'স্মার্ট পেট্রলিং'

ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বণ্যপ্রানী পাচার ও শিকার, চোরাচালান-বনজ সম্পদ ধ্বংস ও অবৈধভাবে বনে প্রবেশ ঠেকাতে গোটা সুন্দরবনে ৩ বছর ব্যাপী শুরু হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বিশেষ নিরাপত্তা অভিযান ‘স্মার্ট পেট্রলিং’। মঙ্গলবার থেকে বিশেষ এই নিরাপত্তা অভিযান শুরু হয়। দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা সুন্দরবনে চলবে এই বিশেষ নিরাপত্তা অভিযান। এজন্য সরকারের ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। 

বিকালে মোংলা বন্দরের ফুয়েল জেটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে থেকে সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম এদুই বিভাগে ৮টি টিমের মাধ্যমে ‘স্মার্ট পেট্রলিং’ অভিযান শুরু হয়। অভিযানে বিশেষ প্রযুক্তি সাইবার ট্রাকং পদ্বতি ব্যবহার করা হচ্ছে। সুন্দরবনে বনজ সম্পদ ও বন  প্রাণি সংরক্ষণে এ স্মার্ট পেট্রোলিং (স্পাসিয়াল মনিটরিং এনালাইজিং এ্যান্ড রিপোর্টিং টুলস) কর্মসূচিতে ৪টি রেঞ্জের প্রতিটিতে ২টি করে সর্বমোট ৮টি দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি দলে ১৫ জন সদস্য রয়েছেন। 

একজন ফরেস্ট রেঞ্জার/ সিনিয়র ফরেস্টার প্রতিটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রতি টিমে দুটি করে লঞ্চ, ওপেন টাইপ স্পীডবোট, ফাইবার বডি ট্রলার ও প্রয়োজনে বিশেষ বিশেষ সময় একটি কেবিন ক্রুজারও থাকবে। টহলকালে বন, বন্যপ্রাণি সংক্রান্ত সকল ধরনের অপরাধ দমন ছাড়াও বন ও মৃত বা জীবিত সকল ধরনের বন্যপ্রাণি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। টহলের তথ্য-উপাত্ত সমূহ বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনায় অবস্থিত জিআইএস ল্যাবে প্রক্রিয়াজাত করা হবে। আর এ তথ্য-উপাত্তকে ভিত্তি করে প্রতি মাসে প্রকাশ করবে সুন্দরবন সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন। 

এই অভিযান চলাকালে আইন ভঙ্গ করে অবৈধভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ রোধ ও অপরাধীরা বনের কোন অংশে কি ধরনের অপরাধ করছে তা সঠিক ভাবে চিহ্নত করে সাজা দেয়া সহজতর হবে বলে জানিয়েছে সুন্দরবন বিভাগ। উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে খুলনা সার্কেলের বন্যপ্রানী সংরক্ষক মদিনুল আহসান ও বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও মো. মাহমুদুল হাসানসহ বন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্যানথেরা নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রস্তুত করা অত্যাধুনিক তথ্য প্রযুক্তি টুলস ব্যবহৃত হবে স্মার্ট পেট্রোলিং অভিযানে। সংরক্ষিত সুন্দরবন এলাকা মনিটরিং, তথ্য সংগ্রহ এবং রিপোর্টিংএ এই প্রযুক্তি এখন পর্যন্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন বলে দাবি সুন্দরবন বিভাগ। এই স্মার্ট পেট্রোলিং পদ্ধতি বিশ্বের ৩১টি দেশ ১৪০টিরও বেশী স্থানে বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে ২০১৫ সালে এশিয়ার ১২টি জেডএসএল (জিওলোজিকাল সোসাইটি অব লন্ডন) সাইটে ১২ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি আফ্রিকার আট হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার ১০টি সাইটে প্রয়োগের পর তার বাস্তবায়ন এলাকা ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটারে  পৌঁছেছে। এর মাধ্যমে ওই দু’টি মহাদেশে বাঘ, হাতি, সিংহসহ বিভিন্ন  বন্য প্রাণি ও বনজ সম্পদ রক্ষায় স্মার্ট পদ্ধতি কার্যকর ভূমিকা রেখে চলছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশের জাতীয় উদ্যান সমূহের জেডএসএল সাইটে স্মার্ট পেট্রোলিং পদ্ধতির ব্যবহার  বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।  

খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. আমির হোসাইন চৌধুরী বলেন, স্মার্ট পেট্রোলিং সুন্দরবনের চার রেঞ্জে মঙ্গলবার বিকাল থেকে একযোগে শুরু হয়েছে। বিগত ২০১৬ সালে মাঝামাঝি থেকে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে স্ট্রেইনদেনিং রিজিওনাল কোঅপারেশন ফর ওয়াইল্ডলাইফ প্রটেকশন প্রজেক্ট নামে একটি প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনে প্রথম বার ৬ মাস ধরে সুন্দরবনে স্মার্ট পেট্রোলিং শুরু হয়। তখন সুন্দরবনে বন অপরাধী গ্রেফতারসহ বন্যপ্রাণী ও জীব বৈচিত্র্য সুরক্ষা করা সহজতর হয়। ঔই অভিজ্ঞাতার আলোকে বন মন্ত্রণালয় এবার নিজস্ব অর্থয়ানে সুন্দরবন সুরক্ষায় শুরু করেছে স্মার্ট পেট্রোলিং। এতে করে সুন্দরবন কেন্দ্রিক চোরাচালান, দস্যু দমন, বণ্যপ্রাণী পাচার রোধ এবং বনজ সম্পদ ধ্বংস ঠেকানোর মত অপরাধ শূণ্যের কোঠায় আনতে স্মার্ট পেট্রলিং কার্যকর ভূমিকা রাখবে। গোটা সুন্দরবনে ৩ বছর ধরে স্মার্ট পেট্রলিং অভিযানে জন্য বন মন্ত্রণালয়ের ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩ কোটি টাকা।  


বিডি প্রতিদিন/২৩ জানুয়ারি ২০১৮/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর