বগুড়া শহরের মধ্যে দিয়ে ফুলস্পিডে ছুটে চলেছে ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা। দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা এই রিক্সার গতি নিয়ন্ত্রণে কোন ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে যাত্রীরা। আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।
বগুড়া শহরে রিক্সা নয়, যেন কার বা মাইক্রোবাস চালাচ্ছেন চালকরা। ইচ্ছেমত যত্রতত্র দাঁড় করিয়ে যেমন যাত্রী উঠানামা করায় যানজট বাড়ছে, তেমনি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ঘটছে দূর্ঘটনা। এতে করে অঙ্গহানিসহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। বগুড়া শহরজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিদ্যুৎ খেকো অবৈধ ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সা।
ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসন এই অবৈধ যান চলাচলে অভিযান শুরু করলেও কিছু স্বার্থন্বেষী মহলের কারনে সেটা আর বেশিদূর এগুতে পারেনি। এছাড়া অটোরিক্সার দোকান সিলগালা করা হলেও পরে সেই দোকাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি অটোরিক্সার কারণে এক শিশুর প্রাণহানি হওয়ায় আবার টনক নড়েছে সবার। বগুড়াবাসী এখন এই অটোরিক্সা চলাচল বন্ধে সোচ্চার হতে শুরু করেছে। আর জেলা প্রশাসন সহ ট্রাফিক পুলিশও এই অবৈধ যান চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।যন্ত্রদানবে পরিণত হয়ে ওঠা ব্যাটারি চালিত এই অটোরিক্সা যাত্রীদের জন্য নিরাপদ নয় এটি। প্রায়ই দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে রিক্সাগুলো। এতে করে প্রতিনিয়ত অঙ্গহানিসহ ছোটখাট ক্ষতির শিকার হচ্ছে নারী পুরুষসহ শিশুরা। আইনে অবৈধ হলেও বগুড়ায় বেপরোয়া গতির এ রিক্সার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বগুড়ায় পা প্যাডেল রিক্সার স্থান এখন দখল করে নিয়েছে ব্যাটারি দিয়ে মোটর চালিত অবৈধ অটোরিক্সা।
শহরে প্যাডেল রিক্সা কমতে থাকলেও বাড়ছে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার সংখ্যা। এখন শুধু শহরেই এই অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। শহরের বাহিরে উপশহর, ২য় বাইপাস সহ জেলার সকল উপজেলায় সড়কে রিক্সাসহ ভান চলাচল করছে। বেপরোয়া গতির এই রিক্সা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহর জুড়ে। রিক্সাগুলো বাড়াচ্ছে যানজট, সেই সাথে এর ব্যাটারি চার্জ এর জন্য অপচয় হচ্ছে প্রচুর বিদ্যুৎ। চালকরা যাত্রী তুলেই টক্কর দিয়ে অন্য যানকে ওভারটেক করে দ্রুত গতিতে রিক্সাগুলো চালায়।
প্যাডেল রিক্সায় শুধু একটি মোটর লাগিয়ে এই যানটি চলাচল করছে। এতে করে হালকা ধরনের ব্রেকে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না ঐ চালকরা। আর পা দিয়ে প্যাডেল না করার কারনে আনকোড়া চালকরা ইচ্ছেমত গতি বাড়িয়ে চলাচল করায় হঠাৎ ব্রেক কষতে গিয়ে বিপত্তি ঘটছে। আর এতে করে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা।
গত বৃহস্পতিবার সকালে বগুড়া শহরের কামারগাড়ি রেল ঘুমটির কাছে স্টেশন রোডে একটি অটোরিক্সা উল্টে যায়। এ সময় ওই রিক্সার চাকার লোহার গোল এক্সেল রিক্সা যাত্রী শিশু প্রাপ্তির মাথার পিছনে ঢুকে যায়। এতে মগজ বের হওয়াসহ প্রচুর রক্ত ক্ষরণে ঘটনাস্থলেই শিশুটির করুণ মৃত্যু ঘটে। এ সময় শিশুটি তার মায়ের কোলে বসে ওই রিক্সায় চেপে নিজ বাড়িতে ফিরছিল। সে ইউনিক স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়তো।
শুধু তাই নয়, কিছুদিন আগে শহরের স্টেশন রোডে সেউজগাড়িতে রাস্তা পারাপারের সময় অটোরিক্সার ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন এক ব্যবসায়ি। শহরের কলোনিতে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লেগে মর্মান্তিকভাবে মারা যান এক কলেজ ছাত্রী। প্রায়ই রিক্সা দুর্গটনায় এভাবে অনেকে প্রাণ হারালেও রিক্সাগুলোর গতি নিয়ন্ত্রণে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আইনের আওতায় নেয়া হচ্ছে না রিক্সাগুলোকে।
বিডি প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর