২৪ এপ্রিল, ২০১৮ ১৪:৩৫

খরস্রোতা চিত্রা নদী এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট:

খরস্রোতা চিত্রা নদী এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা সদরের পাশ দিয়ে বহমান এক সময়ের খরস্রোতা চিত্রা নদী এখন অস্তিত্ব সংকটে। নদীর দু’পাড়ে বসবাসকারী প্রভাবশালীদের দখল ও বাজারে বসবাসকারী কিছু দুষ্টলোকের ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে এটি এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে চিত্রা নদী। 

চিত্রা নদী ভরাটের কারণে উপজেলার প্রায় অর্ধশত খাল বর্তমানে নাব্যতা হারিয়ে মরতে বসেছে। এ পরিস্থিতিতে চাষাবাদ, নৌ যোগাযোগ ও মানুষের ব্যবহার্য পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ভরাট হওয়া চিত্রা নদী পঁচা পানির র্দুগন্ধে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে দু’পাড়ে বসবাসকারীর মানুষের জীবন। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এ নদীটি এভাবে ভাগাড়ে পরিণত করায় এলাকার সাধারণ মানুষ চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।     

স্থানীয় কৃষকরা জানান, গত প্রায় দু’যুগের মধ্যে এ অঞ্চলের নদী ও খাল খনন না করার ফলে অধিকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে চিতলমারী সদরের চিত্রা নদীসহ বেশকিছু খালের দু’পাশে বসবাসকারী প্রভাবশালীরা যে যার মত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে পাড় দখল করে নিয়েছে। এছাড়া ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলা হচ্ছে নদীটি। ফলে চিত্রা নদীটি এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। চিতলমারী সদর বাজারের পাশের একমাত্র এ নদীটিতে এখন হাটু পানিও নেই। পঁচা পানির র্দুগন্ধে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে দু’পাড়ে পাড়ে বসবাসকারি মানুষের জীবন। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সদর বাজারসহ আশপাশ এলাকায় বসবাসকারীদের। 
চিত্রা নদী ভরাটের কারনে চিতলমারী উপজেলার বড়বাড়িয়া, কলাতলা, হিজলা, শিবপুর, চিতলমারী সদর, চরবানিয়ারী ও সন্তোষপুরসহ ৭টি ইউনিয়নে প্রধান ৫০টি খাল এবং শতাধিক শাখা খালের অধিকাংশ এখন নাব্যতা সংকটে। অনেক নদী ও খাল এখন কালের সাক্ষী মাত্র। এরমধ্যে হক ক্যানেল, পাটনিবাড়ি, পেত্নীমারী, নারাণখালী, বাঁশতলী, খাগড়াবুনিয়া, শরৎখালীসহ প্রায় ৫০টি খালের একই অবস্থা। এসব নদী ও খালে  নাব্যতা সংকট দেখা দেয়ায় মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে-এর অধিকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে ঠিকমত জোয়ার-ভাটার পানি ওঠা-নামা না করার ফলে সেচ মৌসুমে চাষীরা ফসলে ঠিকমত পানি দিতে পারে না। এমনটি জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ লোকজন।

সদর বাজারের অন্যপাশ থেকে বয়ে যাওয়া হক ক্যানেলের বেশ কিছু স্থান প্রভাবশালী লোকজন দখল করে নিয়েছে। এসব স্থানে যে যার মত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণসহ ভরাট করে ফেলছে। ফলে নৌযোগাযোগ অচল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় উপজেলার কুরালতলা, শিবপুর, কালশিরা, বারাশিয়া, আড়য়াবর্ণীসহ প্রায় ৮ থেকে ১০ গ্রামের কয়েক হাজার চাষীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি চিতলমারী সদর বাজারে আসা-যাওয়ার জন্য কৃষিপণ্যসহ মালামাল আনা-নেয়ার জন্য নৌকায় করে চলাচলে চরম বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।  দখলদারদের কারণে খালটি এখন চলাচলে অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। 

চিতলমারী শেরেবাংলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোহাসীন রেজাসহ অনেকে জানান, এভাবে চিত্রা নদী ও খাল দখল হতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে এর কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না এবং কৃষি কাজের জন্য পানি মিলবে না। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখে ভরাট হয়ে চিত্রা নদী ও খালগুলো খাল পুনঃখননের জোর দাবি জানান তারা।  

বিডি প্রতিদিন/ মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর