২৪ এপ্রিল, ২০১৮ ১৫:৫৯

বড়াইগ্রামে শত্রুতার জেরে পল্লী চিকিৎসক ধর্ষণ মামলার আসামি

নাটোর প্রতিনিধি:

বড়াইগ্রামে শত্রুতার জেরে পল্লী চিকিৎসক ধর্ষণ মামলার আসামি

নাটোরের বড়াইগ্রামের মাঝগাও উত্তরপাড়া গ্রামের এক পল্লী চিকিৎসক স্থানীয় শত্রুতার জেরে এখন ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী এক  মহলের কারসাজিতে এক প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে- এমন অভিযোগ এনে ওই প্রতিবন্ধী নারীর বৃদ্ধ মাকে বাদী করে থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

পল্লী চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যরা এই মিথ্যা অভিযোগ ও মামলার প্রভাবমুক্ত এবং নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানান।  আজ দুপুরে উপজেলার বনপাড়াস্থ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি ও আবেদন জানান অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগী পল্লী চিকিৎসক শাহাদত মিয়াজীর স্ত্রী, সন্তান, মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। শাহাদত মিয়াজী মাঝগাও উত্তরপাড়া গ্রামের হাশেম আলী মিয়াজীর ছেলে। 

সংবাদ সম্মেলনে পল্লী চিকিৎসকের স্ত্রী বিনা বেগম লিখিত বক্তব্যে বলেন, তার স্বামী শাহাদত মিয়াজী (৫০) এলাকার একজন স্বনামধন্য পল্লী চিকিৎসক। গত বছর ২৮ ডিসেম্বর স্থানীয় মাঝগাও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী আব্দুল মালেকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালালে এতে ক্ষিপ্ত হয় অপর ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী আকবর আলী। নির্বাচনে তার স্বামীর সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হয় এবং এতে আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে পরাজিত প্রার্থী আকবর আলী। এরই জের ধরে আকবর আলীর সাথে যোগ দেয় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি হাজী শফিউল্লাহ মিয়াজী। অপরদিকে একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থার অধীনে স্থানীয় প্রতিবন্ধিদের নিয়ে দল গঠন ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করার লক্ষে প্রতিবন্ধীদের নাম সংগ্রহের দায়িত্ব পায় তার স্বামী পল্লী চিকিৎসক শাহাদত মিয়াজী। সে সূত্র ধরে কোন রকম শারিরীক ত্রুটিযুক্ত ২৫ জন নারী-পুরুষের নাম দেয়া হয় ওই সংস্থাকে। সেখানে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হিসেবে নাম দেয়া হয় পাশ্ববর্তী সরকার পাড়ার হাছেন আলী সরদারের অবিবাহিত মেয়ে জরিনা খাতুন (৩৫) এর নাম। কিন্তু কিছুদিন পর যাচাই বাচাইয়ে প্রতিবন্ধী নয় এই মর্মে জরিনা খাতুনের নাম বাদ গেলে এতে পল্লী চিকিৎসকের উপর ক্ষিপ্ত হন জরিনার মা কমেলা বেগম। আর এ সকল বিষয় নিয়ে পল্লী চিকিৎসকে শায়েস্তা করার লক্ষে গত ১৯ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কমেলা বেগম অসুস্থ এই কথা বলে মোবাইল ফোনে পল্লী চিকিৎসক শাহাদতকে বাড়িতে ডেকে আনা হয়। কিন্তু সেখানে গেলে কমেলা বেগম তার মেয়েকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যাচ্ছে বলে চিৎকার চেঁচামেচি করে লোক ডাকাডাকি করে। 

এ সময় প্রতিবেশীরা কমেলার কথা বিশ্বাস করে উত্তেজিত হয়ে শাহাদতকে বেদম মারপিট করে। পরবর্তীতে প্রভাবশালী  হাজী শফিউল্লাহ মিয়াজী ৫০ হাজার টাকা দাবি করে এই ব্যাপারে মিমাংসার প্রস্তাব দিলে শাহাদত তাতে রাজী হননি এবং দুই দিন পর ওই প্রভাবশালী মহলের চাপে থানায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণেদিত উল্লেখ করে মামলা প্রত্যাহার এবং স্বামী শাহাদতের মান-সম্মান  ক্ষুন্ন করার বিচার দাবি করেন স্ত্রী বিনা বেগম। এ সময় পাশে উপস্থিত ছিলেন শাহাদতের মা একতিন্নেছা বেগম, ৯ বছর বয়সী সন্তান রিয়াদ মিয়াজী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। 

এ মামলার বিষয়ে বাদী কমেলা বেগম জানান, আমি এই মামলার বাদী হই নাই, পুলিশ বাদী হয়েছে। আমি শুধু একটি স্বাক্ষর দিয়েছি। 
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আমিরুল ইসলাম জানান, কমেলা বেগমই তার মেয়ের  ধর্ষণ মামলার বাদী। এই ঘটনার কোন প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী নাই। ঘটনার দুই দিন পর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ওই দিনই ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এখন পর্যন্ত ডাক্তারি রিপোর্ট পুলিশের হাতে পৌঁছায়নি। আসামি পলাতক রয়েছে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।    

বিডি প্রতিদিন/ মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর