২৬ এপ্রিল, ২০১৮ ১৭:২৫

জীবনযুদ্ধে পরাজিত এক জুড়ান মাঝির গল্প

নাটোর প্রতিনিধি:

জীবনযুদ্ধে পরাজিত এক জুড়ান মাঝির গল্প

শতবর্ষী মানুষটির নাম জুড়ান মাঝি। নাটোরের সিংড়া উপজেলার গুড়নই নদীর শৈলমারী ঘাটে গত ৫০ বছর ধরে নৌকায় পারপার করার কাজ করেছেন তিনি।  দীর্ঘ ৫০ বছর এ পেশায় থেকে নৌকার হাল ধরে এবং পাল তুলে পারাপার করেছেন শত শত মানুষকে। ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা আর প্রখর রোদ- কোন কিছুই জুড়ান মাঝির জীবিকার পথে বাধা হতে পারেনি কোনদিন। 

আলী আলী বলে উত্তাল আত্রাই -গুড়নই নদী আর চলনবিলের বিপুল জলরাশিতে যে মানুষটি নৌকার হাল ধরেছেন, একজন দক্ষ মাঝি হিসেবে চলনবিলের মানুষ জুড়ান মাঝিকে চেনেন ।   জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এখন জুড়ান মাঝির চলার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বার্ধক্য। রোগ ব্যধিতে নুয়ে পরা শতায়ু জুড়ান মাঝি এবং কদভানু বেগমের এখন জীবন কাটছে নিদারুন কষ্টে। 

এ দম্পতি ১৪ সন্তান জন্ম দিলেও এখন বেঁচে আছে দুটি সন্তান। এই দুই সন্তান বেঁচে থেকেউ যেন নেই। জুড়ান মাঝির দুই ছেলে আ. করিম ও আ. খালেক অনেক আগেই বাবা মাকে ছেড়ে চলে গেছেন। বিয়ে সাদী করে সুখে শান্তিতেই বসবাস করছে অন্যত্র। বাবা-মা বেঁচে আছে, নাকি মরে গেছে কোন খবরই রাখেন না তারা। এখন জুড়ান মাঝির একমাত্র অবলম্বন তার স্ত্রী কদভানু বেগম। ১০ বছর বয়সে যে কদভানু বেগমকে বিয়ে করে এনেছিলেন ঘরে সেও এখন বৃদ্ধ। 

কিন্তু জীবনে একটি দিনের জন্যই কদভানু স্বামীকে ছেড়ে অন্যত্র থাকেনি।  জুড়ান মাঝির জীবন জুড়ে আছেন তিনি। সিংড়া পৌল শহরের ১১নং ওয়ার্ডের রাস্তার ধারে ছোট একটি কুঁড়ে ঘরেই কাটছে তাদের জীবন। আর্থিক অস্বচ্ছলতা সব সময় ছিল জুড়ান মাঝির ঘরে, কিন্তু মানসিক দৈন্যতা কোনদিনই ছিল না। তাই ভালোবাসা বা সুখের কমতি ছিল না কখনো। জীবনের শেষবেলায় সীমাহীন কষ্টের মধ্যেই তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসার বন্ধন। মৃত্যুর প্রহর গুনছে দুজনেই। মৃত্যুখুধা মাঝেই মাঝেই এই দম্পতির সাথে লড়াই করে জীবন কেড়ে নিতে চায়। কিন্তু তাদের ভালোবাসার কাছে বারবার পরাজিত হয়। 

জুড়ান মাঝির জানান , যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছে । এলাকার মানুষ টুকটাক সাহায্য করে। তা দিয়ে চারটে চাল-ডাল কিনে নিয়ে আসি, কদভানু বেগম অতি কষ্টে তা রান্না করেন। কখনো খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে কাটাতে হয় দিনের পর দিন। 

জুড়ান মাঝির কষ্টের কথা জানতে পেরে সিংড়া পৌরসভার মেয়র মোঃ জান্নাতুল ফেরদৌস তাকে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন। তা দিয়েই চলছে টুনাটুনির অভাবের সংসার। সুখের ঘাটের সেই জুড়ান মাঝি আজ অভাবের কাছে বড়ই অসহায়।  প্রয়োজন একটু সাহায্যের। 

এলাকাবাসী জানান , সিংড়া পৌল শহরের ১১নং ওয়ার্ডের শৈলমারী ঘাটে জুড়ান মাঝি ৫০ বছর নৌকায় করে শত শত মানুষ ও যানবাহন পারাপার করেছেন। এখন সে ঘাটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি ও পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌসের প্রচেষ্টায় গুড়নাই নদীতে প্রায় ৩ কোটি ৭৭লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ব্রিজ। চারিদিকে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও জুড়ান মাঝির সংসারে উন্নতি হয়নি। একমাত্র পৌরসভা কর্তৃক বয়স্ক ভাতা পান তিনি। তাছাড়া দৈনন্দিন বাজারের জন্য মানুষের মুখপ্রাণে চেয়ে থাকতে হয় তাদের। এলাকার মানুষও তাদের সাধ্যমত সাহায্য করেন। 

কাউন্সিলর নওশাদ আলী মোল্লা জানান, শৈলমারী খেয়াঘাট গুড়নাই নদীতে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে মাঝি হিসেবে নৌকায় মানুষ ও যানবাহন পারাপারের কাজ করেছেন তিনি। বর্তমানে অসুস্থ এবং অসহায় জুড়ান মাঝি ও তার স্ত্রী। দুই ছেলে থাকলেও বৃদ্ধ বাবা মায়ের খোঁজ খবর রাখে না। এলাকার মানুষ একটু দেখভাল করে।

সিংড়া পৌরসভার মেয়র মোঃ জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমরা তাকে একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। সুযোগ পেলে অপরজনকেও করে দিবো এবং দ্রুত তার বাড়িতে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করছি। স্থানীয় কাউন্সিলরকে সার্বক্ষণিক তাদের খেয়াল রাখার জন্য বলা হয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি জানান, এ বিষয়ে জানতে পেরেছি, তাঁর ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়েছি। এর আগেও তাকে সহায়তা করা হয়েছে। আবারো তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হবে। 


বিডি প্রতিদিন/২৬ এপ্রিল ২০১৮/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর