২০ মে, ২০১৮ ১৯:৫২

ভালো নেই সেই মুক্তামণি, বাঁচার আসা ছেড়ে দিয়েছেন বাবা-মা

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

ভালো নেই সেই মুক্তামণি, বাঁচার আসা ছেড়ে দিয়েছেন বাবা-মা

ভালো নেই সাতক্ষীরার বহুল আলোচিত বিরল রোগে আক্রান্ত কিশোরী মুক্তামণি। এখন তার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। ব্যথা আর যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত কান্না-কাটি করে দিন যাচ্ছে তার। ১২ বছরের ফুটফুটে শিশু মুক্তামণির অর্তনাদে ভারি হয়ে উঠছে সাতক্ষীরার বাঁশদাহ ইউনিয়নের দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামের আকাশ বাতাস। আগের চেয়ে তার ডান হাতটি আরও ফুলে ফেঁপে পচে গেছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। রোগের বিস্তর এখন হাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বুক, পেট আর পায়েও ছড়িয়ে গেছে। রোগাক্রান্ত ওই হাতে এখন পোকা হয়েছে। রক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত তার হাতটি আদৌ ভাল হবে কি না- তা বলতে পারছে না কেউই। ফুটফুটে শিশু মুক্তামণির মা ও বাবা আল্লাহ ডাকছেন। বলছেন আমাদের মুক্তামণি হয়তো আর বাঁচবে না।

এদিকে, মুক্তামণির ডান হাতের অবস্থা খারাপ দেখে গত ১৫ দিন আগে ডা. সামন্ত লাল সেনের সাথে ফোনে কথা বলেন তার বাবা ইব্রাহিম হোসেন। এ সময় তিনি মুক্তার দুটি ছবি পাঠানোর কথা বলেন। পরে ডাক্তার শারমিন সুমির ইমোতে দুটি ছবিও পাঠান ইব্রাহিম হোসেন। ছবি দেখে তার হাতে অবস্থা খারাপ বলে জানান ডা. শারমিন সুমি। এরপর গত বুধবার সামন্ত লাল ফোন করে মুক্তমণির খোঁজ-খবর নিয়ে তিনি রোজার পরে আবারও মুক্তামণিকে ঢাকায় নিয়ে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলেন।

সারাদিন ঘরে শুয়েই দিন কাটছে মুক্তামণির। অনুরোধ রাখতে মাঝে মাঝে হুইল চেয়ারে করে দাদার কবরের পাশে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। এসব দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে তার পরিবারটি। এলাকার ছোট ছেলে-মেয়েরা তার কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে।

ইব্রাহিম হোসেন জানান, চিকিৎসকরা তো চেষ্টার কম করেননি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখভাল করেছেন। আমরা সত্যি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। এখনো ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের ডাক্তাররা ফোন করে খোঁজ-খবর নেন। আমরাও নানা সময়ে দরকার হলে ফোন করি। কিন্তু বর্তমানে তার হাতের অবস্থা আরও খারাপ। ফুলে গিয়ে রস ঝরছে ও বড় বড় পোকা বের হচ্ছে। ড্রেসিং করতে দেরি হলেই হাতে জন্মাচ্ছে সাদা পোকা। আর দুর্গন্ধ তো আছেই।

মুক্তামণির বাবা আরও জানান, ডাক্তাররা তো সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে আর নতুন করে অপারেশন করার মতো অবস্থা নেই তার। কোনো বিকল্প চিকিৎসা আছে কি না তাও জানি না। তিনি বলেন, তার পুরো হাতটি পচে গেছে। আমরা তার (মুক্তার) আশা ছেড়ে দিয়েছি। এখন আল্লাহই একমাত্র ভরসা।

কেমন আছে জানতে চাইলে মুক্তামণি এক কথায় বলে, ভাল না। হাতের অবস্থা কি? প্রশ্ন করলে, শুধু হাতের দিকেই তাকায় সে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর প্রথমে স্বাস্থ্য সচিব তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। পরে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এরপর ১১ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে মুক্তামণির চিকিৎসায় গঠিত হয় বোর্ড। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ধরা পড়ে মুক্তামণির হাত রক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত। তারপর মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েক দফা অস্ত্রপচার করে অপসারণ করা হয় তার হাতের অতিরিক্ত মাংস পিণ্ড। কয়েক দফা অস্ত্রপাচার শেষে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক মাসের ছুটিতে বাড়িতে আনা হয় মুক্তামণির। এরপর আর ঢাকা মেডিকেলে যেতে রাজি হয়নি মুক্তামণি। বাড়িতেই কোন মতে চলছে তার চিকিৎসা। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক ডা. সামন্ত লাল সেন ও ডাক্তার শারমিন সুমির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম হোসেন। 

বিডি-প্রতিদিন/২০ মে, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর