২১ মে, ২০১৮ ১৭:৪৪

রাঙামাটিতে আবারও পাহাড় ধসের শঙ্কা

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

রাঙামাটিতে আবারও পাহাড় ধসের শঙ্কা

রাঙামাটি শহরের শিমুলতলী এলাকায় পাহাড়ে এবং পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছেন বিপুল জনগোষ্ঠী।

রাঙামাটিতে আবারও পাহাড় ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবুও ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে হাজারো মানুষ। সম্প্রতি টানা হাল্কা, মাঝারি  ও ভারী বৃষ্টিপাতে রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। পাহাড়ের গা থেকে আচরে পড়ছে পাথুরে মাটি। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর মাঝে ঝুঁকি বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। তবে রাঙামাটি শহরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে এরই মধ্যে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করেছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ। 

অন্যদিকে, ২০১৭ সালে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনার পর আবারও বিধ্বস্ত পাহাড়ে বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ।

রাঙামাটি পৌরসভার তথ্য মতে, শুধু রাঙামাটি শহর এলাকায় ১ লাখ ২৫ হাজারের অধিক মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো হচ্ছে- শহরের শিমুলতলী, নতুন পাড়া, মনতলা, রাঙ্গাপানি, রির্জাভ, এসপি অফিস সংলগ্ন এলাকা, শহীদ আবদুুল আলী একাডেমী সংলগ্ন ঢাল, পুলিশ লাইন সংলগ্ন ঢাল, স্বর্ণটিলা পাহাড়ের ঢাল, রাজমণিপাড়া পাহাড়ের ঢাল, রেডিও স্টেশনের পাশে শিমুলতলী পাহাড়ের ঢাল, লোকনাথ মন্দির পাহাড়ের ঢাল, আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ের ঢাল, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সংলগ্ন পাহাড়ের ঢাল, চম্পক নগর পাহাড়ের ঢাল, পাবলিক হেলথ পাহাড়ের ঢাল, আমানতবাগ পাহাড়ের ঢাল, মুজিবনগর পাহাড়ের ঢাল এলাকায়। 

গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় ধস দেখা দেয়ায় সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীরা আতঙ্কে ভুগছেন। টানা বর্ষণে শহর এলাকাসহ গোটা জেলায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। দুর্ভোগে পড়েছেন লোকজন। তাই আতঙ্কগ্রস্ত অনেকে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছে।

রাঙামাটি পৌর মেয়র মো. আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, এখনো বর্ষা আসেনি। তবে শুরু হয়েছে অবিরাম বৃষ্টিপাত। ফলে যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে পাহাড় ধসের মত বড় কোনো ঘটনা। তাই যারা এখনো পাহাড়ের নিচে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তাদেরকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পৌরসভার পক্ষ থেকে বার বার তাগিত দেওয়া হলেও তারা নিজেদের ঝুঁকি নিজেরাই তৈরি করছে। 

এদিকে, কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের আশেপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ি, কলাবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় থেকে মাটি ধসে সড়কের ওপর পড়ছে। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আবারও পাহাড় ধসের বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস না করার জন্য এলাকায় এলাকায় সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করেন তিনি।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, পাহাড় ধসে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হচ্ছে। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া পাহাড়ধসের ক্ষয়ক্ষতির কথা মাথায় রেখে আমরা কাজ শুরু করেছি। পাহাড় ধসে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিভিন্ন মহলের সচেতন নাগরিকদের নিয়ে ইতিমধ্যে প্রস্তুতিমূলক সভাও করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনাটি ঘটেছে ১৯৯৭-২০১১ সালের জুন মাসে। ওই সময় পাহাড় ধসে শহরের রিজার্ভমুখ এলাকায় শিশু, মহিলাসহ একই পরিবারের ৮ জনের। এরপরও রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে সবচেয়ে বড় ধরনের জানমালে ক্ষয়ক্ষতি হয় ২০১৭ সালে ১৩ জুন। সে সময় পাহাড় ধসের ঘটনায় প্রাণ হারায় ১২০ জন। জেলা প্রশাসনের এক পরিসংখ্যায় দেখা যায়- রাঙামাটির ১০টি উপজেলা মিলে পাহাড় ধসের ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৮হাজার ৫৫৮টি পরিবারের। তার মধ্যে সম্পন্ন বিধ্বস্ত ঘর-বাড়ির হচ্ছে এক হাজার ২৩১টি। আর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৫৩৭টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে-বন, বিদ্যুৎ, শিল্প কারখানা, মৎস্য খামার, গবাদি পশু. হাঁস মুরগি। এছাড়া ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমিও। যার পরিমাণ ১৮ হাজার ৯৯.৩১ হেক্টর। এছাড়া শহর এলকায় ১৪৫টি স্থানে পাহাড় ধসে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিভিন্ন সড়ক। দেশের সব জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাঙামাটি। মাটির নিচে বিলিন হয়ে যায় ১৭টি পরিবার।

বিডি প্রতিদিন/২১ মে ২০১৮/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর