২৮ মে, ২০১৮ ০৯:৪১

রাজধানীসহ সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানে আরও ১২ জন নিহত

অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীসহ সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানে আরও ১২ জন নিহত

সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানে রাজধানী মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় রবিবার রাতে আরও ১২ জন নিহত হয়েছেন।  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, এর মধ্যে চারজন অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রাণ হারিয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে নিহত একাধিক মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা ছিল। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

মিরপুর-১

রাজধানীর মিরপুরে রূপনগর এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে এক ব্যক্তি (৪০) নিহত হন। রূপনগর থানা উপ-পরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান, রূপনগর ট-ব্লক এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল রবিবার রাত ৩টায় অভিযান চালায়। অবস্থা বেগতিক বুঝে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি ছোড়ে পুলিশদের উদ্দেশ্য করে। গোয়েন্দা পুলিশের দলটিও পাল্টা গুলি ছুঁড়লে একজন নিহত হন। নিহত ব্যক্তির নাম জানা যায়নি। তার কাছ থেকে একটি পিস্তল ও ইয়াবা উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নাটোর-১
নাটোরের সিংড়ায় র‍্যাবের গুলিতে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। র‍্যাব ৫ জানায়, রবিবার দিবাগত রাত দেড়টায় জেলার  সিংড়া উপজেলার ভাগনাগরকান্দি এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীর সাথে গুলিবিনিময় চলাকালে  খালেক (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়। খালেক সিংড়া উপজেলার বড় চৌগ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক, অস্ত্র ও গুলি, উদ্ধার করে।

পাবনা-১
পাবনার বেড়ায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ইজ্জত আলী প্রামাণিক (২৮) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি ইজ্জত আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৪টি মামলা রয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ-১
মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভায় মাদক ব্যবসায়ীদের দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে সুমন বিশ্বাস ওরফে কানা সুমন (৩২) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। রবিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে পৌর এলাকার কাছলা ব্রিজ থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুমন নৈদিঘীর পাথর গ্রামের বাবুল বিশ্বাসের ছেলে।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন জানান, সুমন বিশ্বাস ওরফে কানা সুমনের বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় ২৫টি মাদক মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও দুইটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তবে যে দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয় তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।

চাঁদপুর-১
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে পুলিশের সাথে রবিবার রাতে বন্দুকযুদ্ধে আবু সাঈদ বাদশা ওরফে লাল বাদশা (৪৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। লাল বাদশা উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের আবদুর রশিদ ছৈয়ালের ছেলে। তার বিরুদ্ধে থানায় ১০টি মাদক মামলা রয়েছে।

ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম এলএলবি জানান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে রাত ১টা ৩০ মিনিটে এ উপজেলার গুপ্টি ব্রিজ (বৈচাতলী) এলাকায় গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে গুলিবিদ্ধ হয় আবু সাঈদ বাদশা ওরফে লাল বাদশা। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১১১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১টি একনলা বন্দুক, ৪ রাউন্ড কার্টুজ ও  ৩টি ককটেল উদ্ধার করেছে।

পিরোজপুর-২
পিরোজপুরে পুলিশের সাথে পৃথক বন্দুকযুদ্ধে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এরা হল পিরোজপুর সদর উপজেলায় অহিদুজ্জামান অহিদ ও মঠবাড়িয়া উপজেলায় মো. মিজান। 

রবিবার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত অহিদুজ্জামান নেছারাবাদ উপজেলার দক্ষিন কৌড়িখারা সোহাগদল গ্রামের মৃত: আব্দুর রহমান খানের ছেলে। মো. মিজানের বাড়ি মঠবাড়িয়ার দাউদখালী ইউনিয়নে। অহিদের বিরুদ্ধে থাকা একটি মাদক মামলায়  রবিবার ৭ বছরের কারাদণ্ড আদেশ দিয়েছিল পিরোজপুর আদালত।

পিরোজপুরের এএসপি জিএম আবুল কালাম আজাদ জানান, রবিবার দুপুরে অহিদুজ্জামান অহিদকে পিরোজপুরের কৃষ্ণনগর এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মোট ৮টি মামলা রয়েছে। এরপরে রাতে তাকে নিয়ে মাদক উদ্ধারের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল কলাখালী ইউনিয়নের কৌবত্তখালী গ্রামে মাদক উদ্ধারের জন্য অভিযানে যায়। সেখানে রাত আনুমানিক পোনে ১ টার দিকে অহিদকে তার সহযোগীরা পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করলে পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়। এ সময়  দুই পুলিশ সদস্য আহত এবং অহিদ নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে ১টি পাইপগান, ২ টি দা, ৫ রাউন্ড বন্দুকের কার্তুজ , গাজা ও ১৭৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
 
এছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার বড় মাছুয়া ইউনিয়নে মো. মিজান নামে একজন পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। নিহত মিজানের বাড়ি উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নে। মঠবাড়িয়ার ঘটনায় ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে দেড় কেজি গাজা, ৬০ পিস ইয়াবা ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা-২
সাতক্ষীরায় ওয়ান শুটারগান ও ১০৫ বোতল ফেনসিডিলসহ অজ্ঞাতপরিচয় দুই ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার সকালে সাতক্ষীরা পৌরসভার বাকাল আগুনপুর গ্রামের একটি মৎস্য ঘের সংলগ্ন কাঁচারাস্তা থেকে মরদেহ দু’টি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের দাবি, মাদক ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে মাদক বিক্রেতাদের দু’পক্ষের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে এ হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটারগান ও ১০৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

ঝিনাইদহ-১
ঝিনাইদহে মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছেন। রবিবার রাত ২টা দিকে সদর উপজেলার জাড়গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, প্রায় এক কেজি গাঁজা, ২০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, রাত ১টার দিকে জাড়গ্রামে গুলির শব্দ শুনে টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে পৌঁছে একজনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে। মাদকের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে বলে দাবি পুলিশের।

কুমিল্লা-২
কুমিল্লার দেবিদ্বার ও সদর দক্ষিণ উপজেলায় পুলিশের সাথে পৃথক বন্দুকযুদ্ধে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

রবিবার দিবাগত গভীর রাতে দুইটি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হচ্ছে দেবিদ্বার উপজেলার ভিংলাবাড়ী এলাকার মৃত আবদুল্লাহ ভুইয়া ওরফে বাবুল মিয়ার ছেলে এনামুল হক দোলন(৩৫) ও সদর দক্ষিণ উপজেলার কালিকাপুর এলাকার মৃত আবদুল ওহাবের ছেলে নুরু মিয়া(৫৫) ।

দেবিদ্বার থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, কুমিল্লার দেবিদ্বারে ভিংলাবাড়ি বেড়িবাঁধে মাদকবিরোধী অভিযান চালানোর সময় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে এনামুল হক দোলন নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে ১০ কেজি গাঁজা, ১০০ পিস ইয়াবা, একটি পাইপগান ও কার্তুজ উদ্ধার করে পুলিশ। দোলনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১২টি মাদক মামলা রয়েছে। এসময় বন্দুকযুদ্ধে পুলিশের এসআই যুবরাজ বিশ্বাস আহত হয়।
 
অন্যদিকে সদর দক্ষিণ থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, সদর দক্ষিণের গলিয়ারায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নুরু মিয়া নামে আরেক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৩টি মাদক মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ৪০ কেজি গাঁজা, পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ অভিযানে ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহে কুমিল্লা জেলার কোতয়ালীতে তিনজন, চৌদ্দগ্রামে একজন, সদর দক্ষিণে দুইজন, বুড়িচংয়ে একজন, ব্রাহ্মণপাড়ায় দুইজন এবং দেবিদ্বারে একজনসহ মোট ১০ জন মাদক ব্যবসায়ী কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর