২৩ জুন, ২০১৮ ১৯:২৮

ফরিদপুরে মুক্তিপণ দিয়েও ছেলেকে ফেরত পাননি মা

ফরিদপুর প্রতিনিধি:

ফরিদপুরে মুক্তিপণ দিয়েও ছেলেকে ফেরত পাননি মা

মুক্তিপণের টাকা দিয়েও অপহৃত ছেলেকে ফিরে পাননি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার এক প্রবাসীর স্ত্রী। ছেলেকে ফিরে না পেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তালমা ইউনিয়নের চর মানিকদি পাগলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা গ্রিস প্রবাসী আবুল হোসেন মাতুব্বরের স্ত্রী জান্নাতি বেগম। 

ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সন্তানকে উদ্ধারের আকুতি জানান জান্নাতি বেগম। ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে সন্তানকে উদ্ধারে সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। 

অপহৃত আলাউদ্দিন ওরফে অন্তর মাতুব্বর তালমা নাজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। গত ৭ জুন রাতে তারাবির নামাজ পড়তে বাসা থেকে বের হয়ে সে আর ফেরেনি। 

লিখিত বক্তব্যে জান্নাতি বেগম জানান, অন্তর মাতুব্বর তার বড় ছেলে। গত ৭ জুন তারাবি নামাজ পড়ার জন্য রাত ৮টার কিছু আগে বাসা থেকে বের হয় সে। এরপর আর বাসায় ফেরেনি। ওইদিন রাত ১০টার পর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ৮ জুন রাতে নগরকান্দা থানায় একটি জিডি করা হয়। 

জান্নাতি বেগম আরো জানান, থানায় জিডি করে বাসায় ফেরার পরই অন্তরের মোবাইল থেকে তার মোবাইলে একটি ম্যাসেজ পাঠানো হয়। তাতে অন্তরকে অপহরণের কথা জানিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। একাধিকবার ফোন করে ও ম্যাসেজ পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ০১৮৭৬৭৬৮১২৮ নম্বরে ৫ লাখ টাকা বিকাশ করে পাঠাতে বলে। ঘটনার পরপরই ৮ জুন তিনি পুলিশ ও র‌্যাব অফিসে গিয়ে অন্তরের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে আসেন। 

সর্বশেষ ১৪ জুন আবারও অন্তরের মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে ভাঙ্গার একটি প্রাইমারি স্কুলের ঠিকানায় যেতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পর তাদেরকে ভাঙ্গার বদলে তালমা জাইল্যা ব্রিজের নিকট এবং তারপর কোনাগাঁও চকের একটি শ্যালো মেশিন ঘরের মধ্যে টাকা রেখে আসতে বলে। জান্নাতি বলেন, ‘তখন রাত হয়ে গিয়েছিল। আমাকে একা যেতে বলেছিল। কিন্তু আমার ভয় করছে জানিয়ে কান্নাকাটি করলে তারা আমার সাথে দু’জন লোক নিয়ে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়। আমি নগরকান্দা থানার এস আই কবির ও অন্য দু’জন পুলিশকে নিয়ে সেখানে যাই। পুলিশদের আড়ালে দাঁড় করিয়ে মাত্র ১৫ গজ দূরে মেশিন ঘরে একটি হাঁড়ির মধ্যে মুক্তিপণের ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা রেখে আসি। এসময় দেখতে পাই, ছোট্ট টর্চের  আলো জ্বালিয়ে দু’জন লোক মেশিন ঘরে টাকা খুঁজছে। পুলিশ ও তাদেরকে দেখে। তবে পুলিশ বলে, টাকা নিয়ে যায় যাক, এখন ওদের ধরা যাবে না। টাকা গেলে টাকা পাওয়া যাবে কিন্তু ছেলে গেলে ফিরে আসবে না।’ 

এ সময় অদূরে রাস্তায় পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও ছিলেন বলে জান্নাতি বেগম সাংবাদিকদের জানান। অপহরণকারীরা পুলিশের সামনেই মুক্তিপণের ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে আবারও লাপাত্তা হয়ে যায়। এরপর ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে বললে প্রথমে অপহরণকারীরা জানায়, আধঘণ্টা পর ছেলেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাবে। 

জান্নাতি বেগম লিখিত বক্তব্যে জানান, অপহরণকারীদের দেয়ার আগে মুক্তিপণের টাকা গুণে দেখেন নগরকান্দা থানার এস আই লুৎফর। যার একটি ছবি এবং ভিডিও তিনি সাংবাদিকদের সরবরাহ করেন। টাকা দেয়ার আগে তিনি তার পরিবারের লোকজন ও পুলিশকে নিয়ে বৈঠক করেন। এসময় টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে তিনি জানান। 

এদিকে মুক্তিপণ দিয়েও সন্তানকে ফিরে না পেয়ে বিলনালিয়ার মোবারক মাস্টারের ছেলে খোকন মাতুব্বরকে (৩৫) প্রধান আসামি করে ১৬ জনের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন জান্নাতি বেগম। 

নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ লুৎফর রহমান জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনজনকে আটক করা হয়েছে। মুক্তিপণের টাকা লেনদেনের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। 

বিডি-প্রতিদিন/ ই-জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর