২৫ জুন, ২০১৮ ১৯:১০

সুন্দরবন উপকূলে জেলেদের জালে ঝাঁকে-ঝাঁকে রূপালী ইলিশ

বাগেরহাট প্রতিনিধি

সুন্দরবন উপকূলে জেলেদের জালে ঝাঁকে-ঝাঁকে রূপালী ইলিশ

বাগেরহাটের সুন্দরবন উপকূলে বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে-ঝাঁকে রূপালী ইলিশ। ইলিশ আহরণ মৌসুমের শেষপ্রান্তে এসে হাসি ফুটেছে উপকূলের জেলে পল্লীগুলোতে। 

র‌্যাব ও কোস্টগার্ডসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে এখন বনদস্যু আতঙ্ক না থাকলেও আহরণ মৌসুমের শুরুতে ইলিশের দেখা না পাওয়ায় অনেকটা হতাশায় ভুগছিলেন জেলেরা। তবে হঠাৎ করে গত এক সপ্তাহ ধরে সুন্দরবন উপকূলে বঙ্গোপসাগরে কাঙ্ক্ষিত সেই রূপালি ইলিশ ধরা পড়ায় জেলে, আড়তদার ও মাছ বিত্রেতারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

সুন্দরবন উপকূলসহ গভীর সমুদ্রে থাকা ইলিশ বোঝাই ট্রলারগুলো আসতে শুরু করেছে বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য বন্দর কেবি বাজারে। বাজারে অধিক সরবরাহ থাকায় মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে ইলিশের দাম নেমে এসেছে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে।

সোমবার ভোরে সরেজমিনে বাগেরহাটের প্রধান মৎস্যবন্দর কেবি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গত তিন দিনে সুন্দরবন উপকূলে বঙ্গোপসাগর থেকে ইলিশ বোঝাই করে ফিরেছে প্রায় ৩০টি ফিশিং ট্রলার। ফিরে আসা ইলিশ ভর্তি এসব ট্রলার কেবি বাজারের সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া দাড়াটানা নদীর ঘাটে সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে রাখা হয়েছে। 

আহরণ মৌসুমের শুরুতে ইলিশের দেখা না পেলেও এখন কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করায় হাসি ফুটেছে কেবি বাজারের জেলে, আড়তদার ও মাছ বিত্রেতাদের মুখে। সেই সাথে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। কেউ ইলিশ মাছের ঝুড়ি টানছেন, কেউ প্যাকেট করছেন, আবার কেউ কেউ সেই ইলিশ মাছের প্যাকেট দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে তুলে দিচ্ছেন ট্রাকে। 

দাড়াটানা নদীর ঘাটে নোঙর ট্রলারের জেলে ইলিয়াস, আল-আমিন ও লিটন মিয়া জানান, এবার মৌসুমের প্রথম দিকে ইলিশের দেখা মেলেনি। তাই ট্রলার মালিকসহ ইলিশ আহরন পেশার সঙ্গে জড়িত সবাই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তবে মৌসুমের শেষ ভাগে এসে সাগরে হটাৎ করে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। এবার ধরা পড়া ইলিশের সাইজও অনেক ভালো। আমরা সাগর থেকে ট্রলার বোঝাই করে ইলিশ মাছ নিয়ে এসেছি।  

উপকূলীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী জানান, মৌসুমের শুরুতে ইলিশ না পাওয়া গেলেও জুনের শেষের দিক এসে সুন্দবেন উপকূলে গভীর সমুদ্রে মাছের খনি হিসেবে খ্যাত সোয়াচ আর নো গ্রাউন্ডে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে বাঁকে-ঝাঁকে। গত তিন দিনে ইলিশ বোঝাই বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ৫০টি ট্রলার কেবি বাজারের ঘাটে নোঙর করেছে। এসব ট্রলারগুলোর প্রত্যেকটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বড় সাইজের ইলিশ আহরণ করে নিয়ে এসেছেন। 

বাজারে ইলিশের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় আধা কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা এবং এক কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। আগামী জুলাই মাসে জেলেদের জালে আরও বেশি পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বাগেরহাট কেবি বাজার মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সভাপতি এসএম আবেদ আলী বলেন, চলতি মাসের শেষ দিকে এসে সুন্দরবন উপকূলে বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। 

আগামী দুই/এক সপ্তাহের মধ্যে ইলিশ আহরণের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। 

বঙ্গোপসাগরসহ সুন্দরবন উপকূলে এবার বনদস্যু আতঙ্ক আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া কোন জেলে বনদস্যুদের হাতে অপহৃত বা চাঁদাবাজির শিকার হওয়ার খবর আসেনি। বঙ্গোপসাগরসহ সুন্দরবন উপকূলে র‌্যাব ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/২৫ জুন ২০১৮/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর